ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখল চলছে, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের নিরবতায় অনেক প্রশ্ন

ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা দখল করে সীমানার মধ্যেই যে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে তা সম্পূর্ন অবৈধ ও প্রতœসম্পদ সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। সরকারী দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের সামনেই এ দখল কার্যক্রম চলছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিরা ভুলে গেছেন যে সরকারি কোষাগার থেকে তাদের বিভাগ চালানো এবং এ স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের জন্য যে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয় তা এদেশেরই জনগণের অর্থ।

জনগনের প্রতœসম্পদ জনগণের অর্থেই রক্ষণাবেক্ষনের জন্য রাষ্ট্র এ বিভাগ পরিচালনা করে। অবিলম্বে কেল্লার দখলকৃত বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যক্তিমালিকানার বাড়ি উচ্ছেদ করে কেল্লার সুদৃশ্য প্রাচিরের আসল রূপ ফিরিয়ে আনা এবং দখলকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ অক্টোবর ২০১০, শনিবার, সকাল ১০:৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে পরিবেশ বাচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে লালবাগ কেল্লা “হুমকির মুখে লালবাগ কেল্লা ঃ রক্ষায় করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে  আলোচকগন এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্থপতি অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেস, মূল প্রবন্থ উপাস্থাপন করেন অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ, আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সুফি মোস্তাফিজুর রহমানÑজা:বি: প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, শিল্পী কাইয়ুম চ্যেধুরী, শিল্পী শিশির ভট্রাচার্য, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল খালেক, ঢা: বি: ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লালারুখ সেলিম, শিল্পকলা গবেষক ড. নিরু শামসুন্নাহার প্রমুখ।   

বক্তারা বলেন, মোগল রাজধানী ঢাকার অন্যতম কীর্তি লালবাগ কেল্লা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় নিদর্শন। সভ্যতার ইতিহাসে মোগলদের সবচেয়ে বড় অবদান স্থাপত্য নির্মাণ। বাংলাদেশের সভ্যতা সেসব বিরল  মোগল স্থাপত্যের কারণে কীর্তিমান ও বিশ্বদরবারে পরিচিত তার মধ্যে লালবাগ অদ্বিতীয়। লালবাগ কেল্লা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় মানবকীর্তি। ইতিহাসবিদ, নগরবিদ, স্থপতি এবং সভ্যতা সচেতন নানা দেশের নাগরিকরা একে “ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ” বা বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউনেস্কোর কাছে দাবি জানিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তালিকাতেও লালবাগের কেল্লা বা প্রাসাদ দূর্গ একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে। যে প্রতœকীর্তি একই সঙ্গে বাংলাদেশের এবং বিশ্বসভ্যতার অংশ তার বিভিন্ন অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে নিচ্ছে।

বক্তারা বলেন, ১৯৬৮ পুরাকীর্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে পুরাকীর্তি ধ্বংস সাধন, ক্ষতিসাধন, লেখা বা খোদাই করা যাবে না এবং  ২৬নং অনুচ্ছেদে সুষ্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি বাণিজিক উদ্দেশ্যে কোন সংরক্ষিত পুরাকীর্তির বা তার অংশ বিশেষ আলোকচিত্র গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু কতৃপক্ষের অনুমতিক্রমে লালবাগ কেল্লায় হরহামেশাই বিভিন্ন কোম্পানীর শত শত লোকবলের সমাগম ঘটিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি ও সুটিং করার সময় অবকাঠামোর ব্যাপকক্ষতি সাধন করছে। এমনি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনে স্থাপনার দেয়ালে হাজার হাজার  পেরেক মেরে স্থাপনার স্থায়ী ক্ষতি করেছে। 

সভায় বলা হয় সরকার বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষতি এলাকা ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন ২০১০ বিল জাতীয় সংসদদে পাস হয়েছে। এই আইন আরও সর্বনাশ ডেকে আনবে। আইনের সুবিধা নিয়ে কর্পোরেট পুজির এই দু:সময়ে কোন সংস্থা পর্যটন শিল্পের বিকাশ নামে লালবাগ কেল্লার ইজারাদারি কব্জা করতে পারে।  সরকার পর্যটন আইন বাতিল করে দেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিবেন এবং অনতিবিলম্বে লাল বাগ কেল্লার ভেতরের অবৈধ ৩ টি বাড়ি ও কেল্লার দেয়ালের গায়ে দেয়াল লাগিয়ে যেসব ঘরবাড়ি গড়ে উঠেছে তা উচ্ছেদ করে দেশের পুরাকীর্তি রক্ষার দায়িত্ব পালনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে আহবান জানানো হয়