জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানি দূষণ বন্ধ করা হোক

জীববৈচিত্র্য মানুষের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান ও খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করে এবং যোগান দেয় জীবন রক্ষাকারী প্রাচীন আয়ুর্বেদীয় ও আধুনিক ঔষধের কাঁচামাল। নানা কারণে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য উপাদান পানির মারাত্মক দূষণ, জনসংখ্যার চাপ, ও অজ্ঞতার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বৈচিত্র্যময় জীব সম্পদ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে জীববেচিত্র্যের সংরক্ষণ, ব্যবহার ও উন্নয়নে পানি দূষণ বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ২২ মে ২০১৩, সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

পবার সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, পবার নির্বাহী কমিটির সদস্য শামীম খান টিটো, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, বাংলাদেশ পীস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, পরিবেশকর্মী রওশন আলী, লায়লা সাজিদ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ছাত্রী প্রতিনিধি লামিয়া, প্রীতি, তাহমিনা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ছিল। মিঃ ডেভিড প্রেণ “ইবহমধষ চষধহঃং”(১৯০৩) এর বর্ণনা অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ সপু®পক উদ্ভিদ ছিল। উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে যার ১০% উদ্ভিদ বিপদাপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায়। অধ্যাপক সোহরাব উদ্দিন সরকারের রচিত “ডরষফষরভব ড়ভ ইধহমষধফবংয ” (১৯৮৮) বইটিতে ৯৩২ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর তালিকা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৩টি উভচর, ১৪৪টি সরীসৃপ, ৬৩২টি পাখি ও ১২৩টি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এছাড়া ৭০৮ প্রজাতির মাছ ও ক্রাসষ্টাসিয়ান রয়েছে। ওটঈঘ এর লাল বই অনুসারে দেখা যায় ৮ প্রজাতির উভচর, ৪৯ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪১ প্রজাতির পাখি ও ৪০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিপদাপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। ইধহমষধফবংয ঘধঃরড়হধষ অংংবংংসবহঃ ধহফ চৎড়মৎধস ড়ভ অপঃরড়হ ২০১০ অনুসারে ৬৫৩ প্রজাতির মাছ যার মধ্যে ১৫১ টি মিঠা পানি এবং ৪০২ টি লবণাক্ত পানির মাছ। পৃথিবীর ৭০টি রেকর্ডেড প্রকৃত ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ২৮টি প্রজাতির গাছ সুন্দরবনে পাওয়া যায়। সুন্দরবনে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের ৪০% পাওয়া যায়। এখানেও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন- গন্ডার, বুনোমহিষ, সোয়াম্প হরিণ, হগ হরিণ, চিতা বাঘ ও গউর। সাম্প্রতিককালে সুন্দরী গাছ আগামরা রোগে আক্রান্ত হয়েছে ও হচ্ছে। সুন্দরবনে ইতিমধ্যে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে সুন্দরবনে গাছের বংশ বিস্তার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। গঙ্গা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর মিঠা পানির গতি ও পথ পরিবর্তিত হয়ে সুন্দরবনের নদী-খালের মিঠা পানির প্রবাহ ব্যাপকভাবে কমেছে। উজানে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের নদীগুলোর বাহিত পলি প্রবাহেও পরিবর্তন হচ্ছে। এ ছাড়াও নৌ চলাচলজনিত তেল দূষণ সুন্দরবনের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।  মনুষ্য হস্তক্ষেপ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি সুন্দরবনের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়া, নদী ও খাল-বিল ভরাট হয়ে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শিল্প ও পয়:বর্জ্য সৃষ্ট দূষণ, নৌযান সৃষ্ট দূষণ, মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার, ভূ-গর্ভস্থ পানির অধিক ব্যবহার, উজানে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা, দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বিশ্বময় উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এ দেশের জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানি সংরক্ষণে নিন্মবর্ণিত কার্যক্রম গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। 

ক্স    শিল্প ও পয়:বর্জ্য সৃষ্ট পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা।
ক্স    নৌযান সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা।
ক্স    মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করা।
ক্স    নদী, খাল-বিল খননের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো।
ক্স    ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো এবং ভূ-উপরিস্থিত পানির ব্যবহার বাড়ানো।
ক্স    আন্ত:দেশীয় সমঝোতার মাধ্যমে উজান থেকে পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।
ক্স    বিশ্বময় উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোকে তাদের গ্রীণ হাউজ গ্যাস নি:সরণ কমাতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা এবং ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে অভিযোজনের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা প্রদানে অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করা। 
ক্স    গবেষণার মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থায় ও শিল্প কারখানায় পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা।
ক্স    পানি ব্যবহারে সকলকে মিতব্যয়ী হওয়া।