প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন নয়

প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন নয়

সম্প্রতি বন আইন ও বন্য প্রাণী আইন দুটির সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধিত আইনদ্বয় প্রণয়ন হলে বন ও বন্য প্রাণীর উপর ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রস্তাবিত আইনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি কনজারভেশন এরিয়া বা সাফারিপার্ক, ইকোপার্ক, ল্যান্পস্কেপ জোন বা করিডোর, বাফার জোন  ইত্যাদির যে প্রস্তাবনা আছে তা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পরিপন্থী। এসব যদি করতেই হয় তবে তা হবে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে নতুন করে ঘোষিত সংরক্ষিত, বা অশ্রেণীভুক্ত বা অধিগ্রহণকৃত এলাকার বনে। যদি ১৯৭৩ সালের বন্যপ্রাণী আইনটির (সংরক্ষণ) কোন যুগোপযোগী বা সময়োচিত পরিবর্তন আনতেই হয় তবে তা হওয়া উচিত “বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০”। আজ ২৯ ডিসেম্বর ২০১০ বুধবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত সেমিনারে উক্ত অভিমত প্রকাশ করেন।

সেমিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বন্য প্রাণী ও চিডিয়াখনা বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান, বিশিষ্ঠ বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুজ্জামান খান, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান, এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। ড. রেজা খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংশি¬ষ্টদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে আইন এর একটি খসড়া তৈরি করার প্রস্তাব গৃহীত হয় আজকের সেমিনার থেকে। যেটি জনসমক্ষে প্রকাশ ও সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
 
ড. রেজা খান বলেন, প্রস্তাবিত আইনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি কনজারভেশন এরিয়া বা সাফারিপার্ক, ইকোপার্ক, ল্যান্পস্কেপ জোন বা করিডোর, বাফার জোন  ইত্যাদির যে প্রস্তাবনা আছে তা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের পরিপন্থী। এসব যদি করতেই হয় তবে তা হবে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে নতুন করে ঘোষিত সংরক্ষিত, বা অশ্রেণীভুক্ত বা অধিগ্রহণকৃত এলাকার বনে। এ আইনে দেশী এবং বিদেশী বন্যপ্রাণী বা জীববৈচিত্র্য সম্পদ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করার যে ধারা উপ-ধারা সংযোজন করা হয়েছে তা কেবল তখনই সম্ভব যখন এসব বিষয় হ্যান্ডেল করার উপযুক্ত একটি সম্পূর্ণ আলাদা “বন্যপ্রাণী বা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ সৃষ্টি করা হবে তখন। এছাড়াও এ ধরনের নতুন বিষয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার পরেই কোন ধারা উপ-ধারা সংযোজন উচিত বলে আমি মনে করি। 

বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে ইকোপার্ক, উদ্ভিদ উদ্যান, মেরিন প্রটেক্টেট এরিয়া, জলাভূমি সংরক্ষিত এলাকা, হারবেরিয়াম বা আবদ্ধ প্রাণীর ব্যবস্থাপনা সংযোজন করা হয়েছে সেখানে চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনাটি এ আইনের আওতায় আনা হয়নি। যদি  নতুন করে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ প্রণয়ন করতেই হয় সেক্ষেত্রে এ আইন বলবৎ করার জন্য এবং দেশের সব ধরনের বন্যপ্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারকে অবশ্যই একটি সম্পূর্ণ আলাদা “বন্যপ্রাণী বা জীববৈচিত্র্য বিভাগ বা পরিদপ্তর” সৃষ্টি করতে হবে। সেটা না করে যদি এ প্রস্তাবিত আইন যে অবস্থায় আছে সে অবস্থাতেই মন্ত্রী পরিষদে গৃহীত হয় বা পরবর্তীতে তা আইনে   রূপান্তরিত হয় তাহলে এ আইনটি বন্যপ্রাণী বা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ না করে তাকে ধ্বংসের দিকেই ঠিলে দিবে।