সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে সকল ধরনের নৌ-চলাচল বন্ধ করতে হবে

সুন্দরবনকে বন হিসাবে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাহলে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে ঐ অঞ্চল দিয়ে  জাহাজগুলো যাতায়াত করতে পারত না। যেখানে জাহাজ চলাচলের আইনগত ভিত্তি নেই সেখানে বিপুল পরিমাণ তেল দুষণের মাধ্যমে এই ধরনের দূর্ঘটনা প্রমাণ করে সরকার সুন্দরবন নিয়ে যথেষ্ট উদাসীন। এমনকি এই দূর্ঘটনার পর যে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া যেত, তা করা হয়নি। দুর্ঘটনা পরবর্তীতেও সুন্দরবনের পরিবেশ প্রতিবেশের গুরুত্বর বিষয়ে সরকার স্থায়ীভাবে নৌচলাচল বন্ধ করা সহ অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। অথচ সুন্দরবনের স্বার্থেই সকল ধরণের নৌ চলাচল বন্ধ করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পূর্বাঞ্চল ডায়লগ সেন্টারে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা), জনউদ্যোগ, বারসিক ও ক্লিন এর আয়োজনে ‘সুন্দরবনের জীবন বাঁচাতে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, সরকারের এখন উচিত যে জায়গাগুলোতে তেল রয়েছে তা প্রকৃতিকে আর কষ্ট না দিয়ে অপসারিত করা। সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে আর যাতে নৌ-চলাচল করতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন ও করনীয় নির্ধারণ করতে হবে। পরিবেশের এই ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

বিভাগীয় প্রেস ক্লাব ফেডারেশনের সভাপতি আলহাজ্ব লিয়াকত আলীর সঞ্চালনায় জনউদ্যোগ, খুলনার আহবায়ক এ্যাড: কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ জাফর ইমাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ড: প্রফেসর দিলীপ দত্ত, ড: প্রফেসর রেজাউল করিম, ড: প্রফেসর সরদার শফিকুল ইসলাম, ড: প্রফেসর নাজমুস সাদাত, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফারুক আহমেদ, খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান, শেখ মোশারেফ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কাইয়ূম, এ্যাড: আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চু, কৃষকলীগের শ্যামল সিংহ রায়, অধ্যাপক শেখ সাদী ভূইয়া,আলহাজ্ব লোকমান হাকিম, সিপিবি নেতা এইচ এম শাহাদত, ন্যাপনেতা তপন রায়, এ্যাড: অলোকানন্দা দাস, এ্যাড: তসলিমা খাতুন ছন্দা, রসু আক্তার, মাহফুজুর রহমান মুকুল, এস এম সেলিম বুলবুল, এস এম সোহরাব হোসেন, আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদ, নাজমুল আজম ডেভিড, মিলন বিশ্বাস,উজ্জল কুমার রায়, এ্যাড: মামুনর রশীদ, এ্যাড: বাবুল হাওলাদার, বিদ্যুৎ মন্ডল, মোহাম্মদ ইউনুচ আলী, বাকের আহমেদ, শেখ আব্দুল হালিম, আফজাল হোসেন রাজু, মুশফিক তপু প্রমুখ। মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র পাঠ করেন গবেষক ও লেখক বারসিক এর সমন্বয়কারী পাভেল পার্থ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন  পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল,জনউদ্যোগ,খুলনার আহবায়ক মহেন্দ্র নাথ সেন ও বারসিকের হাফিজ মুনমুন শিশির। 

বৈঠক থেকে নিন্মোক্ত সুপারিশ করা হয়-

১.    সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ করা।  
২.    অন্য যেসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সে সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড সুন্দরবনের আশেপাশে করা থেকে বিরত থাকা।
৩.    ট্যাংকার থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। 
৪.    ছড়িয়ে পড়া তেল থেকে পরিবেশ দূষণ ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি কিভাবে সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখা যায় সে বিষয়ে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য বিশেষজ্ঞসহ সমন্বয় কমিটি গঠন করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 
৫.    জীববৈচিত্রসহ পরিবেশের সার্বিক ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে সুন্দরবনের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা।
৬.    জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়ে বন ও জীববৈচিত্র্যের অপূরণীয় ক্ষতির দায়ে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।  
৭.    দুর্ঘটনার জন্য দায়ী জাহাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রাণ ও পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনা করে দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
৮.    ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে প্রণয়নকৃত সুপারিশ বাস্তবায়ন করা।