খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মূল কারিগর কৃষকদের জন্য পেনশন চালুর দাবি
বাংলাদেশের কৃষকরা নিজেরা ভর্তুকি দিয়ে এদেশের সকল মানুষের খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করেছে কিন্তু তাদের নিজেদের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এখনই ষাটোর্ধ কৃষকদের জন্য সরকারীভাবে পেনশনের ব্যবস্থা করা দরকার । আজ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন বারসিক কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য দিবসের আলোচনা সভা থেকে উক্ত দাবি উপস্থাপন করা হয়।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও ডা. লেলিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় কৃষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধারণা ও অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন বারসিকের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতা অ্যাড. আজহারুল ইসলাম আরজু। কৃষক প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পদক প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ মোল্লা,  নূর মোহাম্মদ, শেখ সিরাজুল ইসলাম, ফরিদা পারভিন, করিবাজ জাহাঙ্গীর আলম, কমলা বেগম, অল্পনা মিস্ত্রী, কৈীলাল্যা মুন্ডা প্রমূখ। আলোচনা করেন তারিক হোসেন মিঠুল, কেএ তৌহিদুল আলম প্রমূখ।
 
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে কৃষকরা তাদের জীবন ও সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেন। কে কিভাবে চাষ করেন, কিভাবে সবজি উৎপাদন করেন, কিভাবে বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন, কিভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে ফসল ফলান, কিভাবে বরেন্দ্র অঞ্চল,উপকূলীয় অঞ্চল বা হাওড় অঞ্চলে সংগ্রাম করছেন তা তুলে ধরেন। তারা তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন আর এ থেকে পরিত্রানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
 
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের শ্রমের ও ঘামের মূল্য পাচ্ছেনা। গ্রাম থেকে শহরের মানুষের জন্য খাদ্যের যোগান তৈরি করছে কিন্তুরা গ্রামের কৃষকরা তার বিনিময়ে কিছুই পাচ্ছিনা। এ বছর  বোরো মৌসুমে একমন ধান উৎপাদন  করতে কৃষককে ১৫০-২০০টাকা ক্ষতি গুণতে হয়েছে। এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের জন্য অত্যন্ত  ভয়াবহ একটি চিত্র। কৃষক যদি প্রতিনিয়ত এমনক্ষতির শিকার হয় তবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকি সম্মুখিন হতে বাধ্য। এই ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেও এদেশের কৃষকরা উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। দেশকে করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত কৃষকদের জীবনকে নিরাপত্তাহীন করে কখনই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে স্থায়িত্বশীল করা সম্ভব না।
 
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন,  দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে প্রবীণ  কৃষকরাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রবীণ কৃষকরাই  আবার তাদের  কর্মক্ষমতা হারানোর পর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  যাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায় দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তাদের শেষ জীবনে তারা খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসন ও বিনোদন থেকে বঞ্চিত।
 
আলোচনা সভা শেষে দেশের বিভিন্ন প্রতিবেশ অঞ্চল থেকে আগত কৃষকদের হাতে সম্মানসূচক স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এসময় কৃষকরা তাদের প্রতি এই সম্মান জানানোর জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান । তারা অবিলম্বে কৃষকদের জন্য পেনশন স্কীম চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।  আলোচকরা সরকারের প্রতি দাবি জানান জাতীয় ভাবে বৃহৎ পরিসরে কৃষকদের জন্য সম্মাননা জ্ঞাপন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।