মানুষের জীবন জীবিকা ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় শামুক-ঝিনুক নিধন বন্ধ কর
 মানুষের জীবন জীবিকা ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় 
শামুক-ঝিনুক নিধন বন্ধ কর
 
মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানায় রাড়িখাল ইউনিয়নে খাল-বিল, জলাশয় থেকে নির্বিচারে পরিবেশবান্ধব শামুক-ঝিনুক নিধন হচ্ছে। শামুক-ঝিনুক নিধনের ফলে প্রতিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয় শামুক নিধন। প্রতিবছর এভাবে শামুক-ঝিনুক নিধনের ফলে তা পরিবেশ ও কৃষিজমির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। শামুকের অভাবে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। অবিলম্বে প্রকৃতি, পরিবেশ, কৃষি ও দেশীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষার্থে সরকারী হস্তক্ষেপ ও প্রশাসনিক কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। আজ ১০ আগস্ট ০৯ সকাল ১১:৩০ টায় মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও রাড়িখাল প্রাণবৈচিত্র রক্ষা কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধনে এ দাবী জানানো হয়। 
 
পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল উক্ত এলাকা পরিদর্শন ও মানববন্ধন করে এবং এ মানববন্ধনে একাত্ততা ঘোষণা করে-শ্রীনগর থানার ফ্রেন্ডস মিডিয়া সোসাইটি, ফ্রেন্ডস ১৯৯৭ কোঅপারেটিভ সোসাইটি, আচার্য বসু সাংস্কৃতিক সংস্থা, ড. হুমায়ুন আজাদ ক্রীড়া সংস্থা, শ্রীনগর কলেজের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সহ রাইসুল ইসলাম রিগ্যান, উৎপল আহমেদ পল, আবু বকর সিদ্দিক, ফিরোজ খান জুয়েল, কামরুজ্জামান টিটু, আশিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।     
 
শামুক-ঝিনুক কৃষি, মৎস্য সম্পদসহ প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ম্যাচোফেলিয়া ও মাইক্রোফেলিয়া নামে দু’ধরনের কীট শামুক থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে। ঐ দুইটি কীট ধান গাছের ক্ষতিকর পোঁকা-মাকড় খেয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কৃষি খেতের ব্যাপক উপকার করে থাকে। শামুকের অভাবে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশীয় মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। প্রাকৃতিক ও দেশীয় মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে শামুকের ডিম ও মাংস। বিশেষ করে কৈ, শিং, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি, শৈল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। এ খাবার না পেলে ঐসকল পোনা মারা যায়। 
 
শামুক-ঝিনুক মরে গিয়ে তার মাংস ও খোলাস পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ তৈরি করে। ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি সহ ধান গাছের শিকড় মজবুত ও অধিক ফলনে সাহায্য করে। অন্যদিকে জীবিত শামুক-ঝিনুক বর্ষা মৌসুমে আমন ধানের ব্যপক উপকারে আসে। শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রকৃতিগত ভাবে পানি দুষণমুক্ত রাখে। এজন্য শামুককে প্রাকৃতিক ফিল্টার বলা হয়। ধানের জমিতে শামুকের ডিম খেয়ে ইঁদুর তার পেটভর্তি করায় ধান নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে।    
 
শামুক-ঝিনুক পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই শামুকের অভয়ারণ্য তৈরীর পাশাপাশি শামুক নিধন বন্ধে সকলের সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এভাবে নির্বিচারে শামুক-ঝিনুক নিধন হলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেভাবে শ্রীনগরে শামুক-ঝিনুক নিধন প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে তা এখনই বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সারাদেশের এ প্রাকৃতিক বিরল সম্পদকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করাও জরুরী। 
 
শ্রীনগরে শামুক-ঝিনুক নিধন বন্ধেÑ১) প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে রাড়িখাল ইউনিয়নের সকল প্রকার শামুক-ঝিনুক ক্রয়-বিক্রয় ও নিধন বন্ধে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; ২) শামুক-ঝিনুকের অভয়ারণ্য তৈরি; ৩) শামুক-ঝিনুক পরিবেশের অবদান সম্পর্কে গণসচেতনা তৈরি করতে হবে।