‘‘বিপদজনক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের দায়িত্বহীনতা: প্রেক্ষিত এপেক্স ট্যানারীর মর্মান্তিক র্ঘটনা’’ শীর্ষক আলোচনা সভা
‘‘বিপদজনক রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহারের দায়িত্বহীনতা: প্রেক্ষিত  এপেক্স ট্যানারীর মর্মান্তিক র্ঘটনা’’ শীর্ষক আলোচনা সভা
সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্প-কারকারখানা ও রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানসমূহে বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্যাদির দায়িত্বহীন ব্যবহার  ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে মর্মান্ত্কি দূর্ঘটনা। নিহত বা আহত হচ্ছে নিরীহ শ্রমিক। উক্ত বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা  এর উদ্দোগে নিজস্ব কার্যালয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এক্সিলেন্স এর পরিচালক  ও বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির সভাপতি, অধ্যাপক এম. মুহিবুর রহমান । আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়াম্যান আবু নাসের খান ও  সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর আবুল খায়ের ও প্রফেসর মাহবুবুর রহমান; বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক মো: ওয়াহাব খান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর আমিনুর রসুল সহ আরও অনেকে।
 
বক্তারা এ সকল দূর্ঘটনার জন্য ট্যানারী ও কারখানা মালিকদের দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনাকেই মূলত দায়ী করেন। তারা বলেন: ঝুঁকিপূর্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারকারী কারখানাগুলোর মাঝে অধিকাংশেরই কোন অভিজ্ঞ কেমিস্ট নেই।  শ্রমিক কর্মচারীদেরও কেমিকেল  সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা বা ট্রেনিং কোনটাই নেই।  রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংরক্ষণের জন্য নেই কোন সুষ্ঠু ব্যবস্থা । এই সব বিষয়ে তাদের কোন জবাবদিহিতাও নেই।  বক্তারা আরও বলেন, সম্প্রতি এপেক্স ট্যানারীতে যে মর্মান্তিক শ্রমিক মৃত্যু ঘটেছে সেই র্দূর্ঘটনায় শুধু ট্যানারী শ্রমিকরাই নয় আশপাশের সকল আবাসিক এলাকাতেও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হবার সম্ভাবন্ াছিল। 
 
আলোচনা সভা থেকেই বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়।  এছাড়াও সম্প্রতি  বাংলাদেশ রসায়ন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এম মুহিবুর রহমানকে সভাপতি করে বিভিন্ন বিষয়ে এক্সপার্টদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অনতিবিলম্বে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে যে রিপোর্ট প্রণয়ন করবে  তার প্রেক্ষিতে পবা পরবর্তী কর্মসূচীর ঘোষণা দিবে। 
 
এছাড়াও আলোচনা সভা থেকে নিম্নে উল্লেখিত দাবীসমূহ সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে পেশ করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
দাবীসমূহ:
১. বিদেশ থেকে আমদানীকৃত এবং দেশে উৎপাদিত সকল রাসায়নিক দ্রব্যের তালিকা এবং তাদের প্রয়োগের ক্ষেত্র উল্লেখ পূর্বক সাধারণের জ্ঞাতার্থে গেজেট আকারে প্রকাশ করা বা ওয়েভ-সাইটে প্রদান করা হোক।
২. ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্যাদি লোকালয়ে গুজামজাত করা নিযন্ত্রণ করা হোক।
৩. রাসায়নিক দ্রব্যাদি যে পাত্রে সংরক্ষন করা হয় তার গায়ে সতর্কতামূলক চিহ্ন সহ উপযুক্ত লেভেল আঁটা এবং প্রয়োজনে ‘কালার কোর্ড’ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হোক।
৪. যেসব কলকারখানায় এবং গবেষণাগারে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয় সেখানে শ্রমিক এবং কর্মীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিধান নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করা হোক।ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতামূলক পোষ্টার বা নোটিশ এর ব্যবস্থা করা হোক।
৫. যেসব কলকারখানাতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং যেসব দোকানে এই ধরণের দ্রব্যাদি বেচাকেনা
হয়, সেখানে একজন প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন রসায়নবিদ এর তত্বাবধান বাধ্যতামূলক করা হোক।
৬. রাসায়নিক কারখানা, গবেষণাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হোক।
৭. রাসায়নিক বর্জ্য নিক্ষেপের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক।