খাদ্য ভীতি ও রোগব্যাধি কমাতে বিষমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা চাই

খাদ্য ভীতি ও রোগব্যাধি কমাতে
বিষমুক্ত খাদ্যের নিশ্চয়তা চাই

বাজারে তরমুজ, আম, জাম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ বাহারি সব সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক ফলের সমাহার থাকলেও এগুলো কেমিক্যালমুক্ত কিনা এ ব্যাপারে ক্রেতা নিশ্চিত হতে পারছেন না। ফল পাকানো এবং সংরক্ষণ করতে ব্যবসায়ীরা ফলে অহরহ ব্যবহার করছে বিষাক্ত ক্যামিকেল। বিদেশ থেকে অবাধে আসছে ভেজাল এবং বিষযুক্ত ফল, শিশুখাদ্য, চাল, ডালসহ নিত্য ভোগ্যপণ্য। এই বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্য মানবদেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। খাদ্যের মাধ্যমে বিষ/ভেজাল গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, গ্যাস্টিক লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ ক্যান্সারের মতো মারণঘাতী রোগব্যাধি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। যার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে যেয়ে রোগীর পরিবার-পরিজন সর্বশান্ত হচ্ছে। তাছাড়া রাষ্ট্রকে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। রাসায়নিকের মিশ্রণে বিষাক্ত খাদ্যের কারণে সৃষ্ট এ বিপর্যয় রোধে সরকারীভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। আজ ২২ জুন ২০১২, সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এবং গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে উক্ত অভিমত জানানো হয়।

পীসের মহাসচিব ইফমা হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, সম্পাদক সুব্রত দাস খোকন, কো-অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ, নাসফের সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো: ফারুক, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক, সেভ দ্যা হিউম্যানিটির ক্যামেলিয়া চৌধুরী, ফোয়ারার রেহানা জামান প্রমুখ।

বক্তারা জানান উৎপাদিত, প্যাকেটকৃত, প্রক্রিয়াজাত তরল ও কঠিন খাদ্যের অধিকাংশই বিষ ও ভেজালে ভরপুর। বাজারে প্রায় সমস্ত শাকসবজি, ফলমূল যেমন, টমেটো, পেঁপেঁ, কলা, আঙ্গুর, আপেল, কমলা ইত্যাদি ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত। ব্যবসায়ীরা কৃত্তিম উপায়ে ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কপার সালফেট, কার্বনের ধোঁয়া, পটাশের লিকুইড সলিউশনসহ বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার করছে। ফলগুলোকে টাটকা ও তাজা রাখতে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যাকেটজাত খাদ্য যেমন ফলের রস, স্ন্যাকফুড, গ্রীনপী, জ্যাম-জেলী, আচার-চাটনীতে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক বিষ মেশানো খাবার খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু। দীর্ঘদিন ধরে এসব ভেজাল/বিষাক্ত খাবার গ্রহণের ফলে বয়স্কদের মধ্যে ক্যান্সার জাতীয় রোগের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে খুব বেশী।

সরকারের ভেজাল বিরোধী অভিযান সত্বেও বিষাক্ত বা ভেজাল খাদ্যের রমরমা ব্যবসার উপর কোন প্রভাব পড়ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পংঙ্গু জাতিতে পরিনত হব । বিষাক্ত খাদ্য নিরব ঘাতক হিসাবে কাজ করছে। ভ্রাম্যমান আদালত গণহত্যামূলক এ অপরাধের দোষীদের স্বল্প অর্থদণ্ড করায় শাস্তি হাস্যকর ও লোকচক্ষে ধূলো দেবার সামিলে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ভেজাল বিরোধী অভিযান বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতার বিপরীতে যথেষ্ট নয়। বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারকে খাদ্যে বিষ মিশ্রণের উৎসমূল থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

বিশুদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে খাদ্যে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে একটি স্থায়ী কমিশন/প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে এবং কমিশনের অনুমতি ব্যতিত খাদ্যের বিপনন এবং প্রচার নিষিদ্ধ করতে হবে। দায়ী ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও পর্যাপ্ত অর্থদণ্ড করতে হবে। খাদ্যে বিষ মেশানোর সাথে জড়িতদের সর্বনিম্ন সাজা যাবত জীবন কারাদন্ড ও সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্মত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। ফলসহ সকল খাদ্য মজুদকারী গুদাম/কারখানা/মোকাম নিয়মিতভাবে ভেজাল বিরোধী টিমের পরিদর্শন বাস্তবায়ন করতে হবে। খাদ্যে বিষ মিশ্রন/ভেজালকারীদের ধরার জন্য একটি সেল গঠন করে ফোন/ফ্যাক্সসহ সাধারণ মানুষের কাছে থেকে সংবাদ গ্রহণের জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা। সর্বোপরি জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্যে বিষ বা ভেজাল রোধে সকল কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ধন্যবাদসহ
 
(আতিক মোর্শেদ)  
কো-অর্ডিনেটর  ০১৮১৪৩৮২৩৪০