ক্লিনিক-হাসপাতাল ও প্যাথলজি’র বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনা চাই-

০৯ জুলাই ২০১০ বেলা ১০.৩০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট এর সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সিরাক-বাংলাদেশ, গ্রীন বেল্ট ট্রাস্ট, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, পীস, নগরবাসী সংগঠন এবং পরিবেশ সাংস্কৃতিক সংগঠন এর সম্মিলিত উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হাসপাতাল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা মেনে চলছে না সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। রাজধানীর দেড় সহস্রাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসা-বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কারণ বেশিরভাগ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নাই। এইসব প্রতিষ্ঠানের ৯২ শতাংশ বর্জ্য রাস্তার উপর খোলা ডাস্টবিন, নর্দমা বা রাজধানীসংলগ্ন নদীতে ফেলা হইতেছে। নিক্ষিপ্ত বর্জ্যরে তালিকায় রহিয়াছে ব্যবহৃত সূঁচ, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, টিউমার, ঔষধের শিশি, ব্যবহৃত স্যালাইন, রক্তের ব্যাগ এবং রাসায়নিক দ্রব্যসহ সর্বপ্রকার চিকিৎসাজাত ময়লা-আবর্জনা। জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য সৃষ্টিকারী এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশিল্গষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব, প্রচার, নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে দেশের হাসপাতালগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আসছে না। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আইনগত বাধ্যবাধকতা ও প্রয়োজনীয় সচেতনতা না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশও নিচ্ছে না। এ বিষয়ে বক্তারা বলেন- কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্য। ঝুঁকিপূর্ণ এসব বর্জ্য উৎপত্তিস্থল থেকে আলাদা না করার ফলে তা জীবাণুমুক্ত ও ঝুঁকিহীন সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে পুরোটি পরিণত হচ্ছে সংক্রামক এবং ক্ষতিকর বর্জ্যে। মেডিকেল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস ´বি´, হেপাটাইটিস ´সি´, যক্ষা, ডিপথেরিয়া, এমনকি এইডসের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, রাজধানীতে   ১২০০টি ছোট-বড় রেজিস্টার্ড প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর বাইরেও  রেজিস্ট্রেশনহীন ৫ শতাধিক প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। ডিসিসির কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, ঢাকা শহরে দৈনিক সৃষ্ট কঠিন বর্জ্যের পরিমাণ আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার টন। এর মধ্যে ৫০ টন আসে স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। এ ৫০ টন থেকে মাত্র ৪ টন বর্জ্য সংগ্রহ করছে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, বাকি ৪৬ টন পড়ে থাকছে খোলা অবস্থায়। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দাবী হাসপাতালগুলো তাদের সাধারণ বর্জ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য আলাদা না করেই ডাস্টবিনে ফেলছে। তাদের বারবার বলার পরও এসব বর্জ্য আলাদা করছে না। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের শেষ দিকে তৎকালীন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্যাথলজি সেন্টার স্থাপন সংক্রান্ত অধ্যাদেশ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এ অধ্যাদেশ আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৮ সালে দেশে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা তৈরি করা হয়। কিন্তু এতে হাসপাতালগুলোর জন্য কোনো নির্দেশনা নেই।