পৃথক লেনে বিআরটিসির পর্যাপ্ত বাসের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে সহজে ঢাকার যাতায়াত সংকটের সমাধান করা সম্ভব।

পৃথক লেনে বিআরটিসির পর্যাপ্ত বাসের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে সহজে ঢাকার যাতায়াত সংকটের সমাধান করা সম্ভব। তবে এ লক্ষ্যে মোবাইল অ্যাপস মাধ্যমে যাত্রীর চাহিদা নির্ধারণ, পৃথক লেন তৈরি এবং বিআরটিসির ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন হবে। গণযাতায়াত ব্যবস্থা সংক্রান্ত পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) আলোচনা সভায় এ প্রস্তাবনা দেয়া হয়। সভায় পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ শাহজাবিন কবির জেবিন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক, পৃথক লেনে বিআরটিসির পর্যাপ্ত বাসের চলাচলের ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রথমেই মোবাইল অ্যাপস বা মোবাইল ফ্রিকুয়েন্সি বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঢাকার জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিদিনের যাতায়াত স্থানের তথ্য সংগ্রহ করা হবে; দ্বিতীয়ত, ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে প্রাথমিকভাবে স্থানান্তরযোগ্য ডিভাইডার দিয়ে বাসের জন্য পৃথক লেন তৈরি; তৃতীয়ত, রেল, বাস, নৌপথের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বিআরটিসির বাস পরিচালনার জন্য উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বক্তারা বাসগুলোর চালাচল জিপিএসের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা এবং কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে বিআরটিসির বাস চালাচল যাতে ব্যাহত না হয়, এর জন্য গোয়েন্দা নজরদারির নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়। আবু নাসের খান বলেন, ঢাকার যানজট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বিগত কয়েক বছরে ফ্লাইওভার, ওভারপাসসহ বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রাইভেট গাড়িবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিআরটি এবং মেট্রোর মতো প্রকল্পগুলো কিছু মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করলেও অধিকাংশ মানুষ এ সুবিধার বাইরে থাকবে। গণপরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি না করে প্রাইভেট গাড়িবান্ধব অবকাঠামো ও বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে যানজট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পবার সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। তাই দিনে অন্তত ২১ লাখ পরিবহন ট্রিপের প্রয়োজন। কিন্তু যানজটে ২১ লাখের তিন ভাগের এক ভাগ ট্রিপও হচ্ছে না। ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রতি অবহেলায় প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুসারে বর্তমানে গণপরিবহনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারে। পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীর প্রতি ৩ হাজার যাত্রী যাতায়াতের জন্য বাস ও মিনিবাস আছে মাত্র ১টি। গণপরিবহনের সংকটের বিপরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় প্রতিদিন নামছে ৩১৭টি প্রাইভেটকার।

পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুুস সোবহান বলেন, বিআরটিসির একমাত্র নিজস্ব ডিপো এবং অনেক মানসম্মত বাস রয়েছে, পৃথক লেনে এ বাসগুলো চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হলে যাতায়াত সংকট অনেক হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, বিআরটিসির মোট বাস সংখ্যা ১৫২০ কিন্তু চলার উপযোগী ১০৪০টি।

ঢাকা রাস্তায় গণপরিবহন হিসেবে চলে ৪৫৭ এবং সচিবালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলে ২৪৫টি এবং মহিলাদের জন্য ২০টি বাস রয়েছে। বাকি বাসগুলো বিভিন্ন জেলা শহর ও বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ঋণের আওতায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করা হয়েছে ৯৫৮টি বিআরটিসি বাস। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরের আমদানিকৃত ২৭৫টির মধ্যে ১৫০টি চলাচল করে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে আমদানিকৃত ২৫৫টির মাধ্যমে ২১০টি চলাচল করে। ২০০২ সালে ৫৭ কোটি ৫০ টাকা ব্যয়ে আমদানিকৃত ৫০টি ভলভোর সবগুলো ২০১০ সালে মধ্যে অকেজো হয়ে গেছে, যদিও তা ২০১৭ পর্যাপ্ত চলাচলের কথা ছিল। মূলত দুর্নীতি, ব্যবস্থাপনার অভাব, রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার প্রেক্ষিতে বিআরটিসির বাসগুলো জনগণের কাক্সিক্ষত সুবিধা দিতে পারছে না।

সভায় বক্তারা, যাতায়াত সংকট নিরসনে দ্রুত পৃথক লেনে বিআরটিসির বাস চালনার উদ্যোগ গ্রহণ, বাস বে-নির্মাণ, বাস স্টেশনে হাঁটা ও রিকশায় যাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত, রেল, নৌ, বিমানসহ অন্যান্য মাধ্যমে সঙ্গে বিআরটিসির বাসের সংযোগ নিশ্চিত করা এবং প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পবার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, পবার সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, রাজউকের সাবেক পরিচালক মনিরা আক্তার, মডার্ন ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।

http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/07/04/96452.php