আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষ্যে গোলটেবিল বৈঠক শব্দদূষণ রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই, প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ
ক্রমাগত শব্দ দূষণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি ঃ প্রভাব ও করণীয়”-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক ২৫ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, সকাল ১১ টায়, পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিলে ধারণাপত্র উত্থাপন করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান। গোলটেবিলে নেতৃবৃন্দ বলেন, সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দ দূষণের কবলে রাজধানীসহ সারা দেশ। বর্তমানে শব্দ দূষণ একটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বিশেষ করে শব্দ দূষণের কারণে আগামী প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় শব্দ দূষণ বিধিমালা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারপরও শব্দ দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।  এ পরিস্থিতি থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন আশু পদক্ষেপ গ্রহণের। সেক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করতে হবে একদিন থেকে আবার শব্দদোষণ নিয়ন্ত্রণে আইনের কঠোর প্রয়োগও করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত গোলটেবিল বৈঠকের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান,অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পবা’র সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পবার সম্পাদক ড.আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ,ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, মো: মমতাজুর রহমান মোহন, সাংবাদিক প্রিয়াংকা কুন্ড, সুলতানা জামান মিতু, সোহেল রহমান, গ্রীণ ফোর্সের স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের কোঅর্ডিনেটর মো. মেহেদী আকতার, নাসির আহম্মেদ পাটয়ারী, সানজিদা বেগম প্রমুখ । 
 
প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, শহর এলাকায় শব্দ দূষণের প্রকোপ গ্রামাঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশী। ঘরের বাইরে, রাস্তায় বা কর্মস্থলেই নয়, ঘরে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ভ্যকুয়াম ক্লিনার, ফুড বে¬ন্ডার ও গ্রাইন্ডার, পাখা থেকেও বিরক্তিকর শব্দ বের হয়। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনা দিবস হচ্ছে একটি বিশ্বব্যাপী প্রচারণা, যা জনগণের কল্যাণ ও স্বাস্থ্যের উপর শব্দসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে আমেরিকান সেন্টার ফর হিয়ারিং এন্ড কমিউনিকেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৬ সাল থেকে এপ্রিল মাসের শেষ বুধবার দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। তদনুযায়ী ২৫এপ্রিল হচ্ছে আন্তর্জাতিক শব্দসচেতনা দিবস ২০১৮। শব্দ দূষণ, শব্দ দূষণের ক্ষতিকারক দিকসমূহ, শব্দ দূষণরোধে করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। যানবাহনের জোরালো হর্ণ ও ইঞ্জিনের শব্দ, যানবাহন চলাচলের শব্দ, রেলগাড়ী চলাচলের শব্দ, বিভিন্ন নির্মাণ কাজের শব্দ, মেশিনে ইট ও পাথর ভাঙ্গার শব্দ, বিল্ডিং ভাঙ্গার শব্দ, কলকারখানা নির্গত শব্দ, গ্রীলের দোকানে হাতুড়ী পেটার শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, নির্বিচার লাউড স্পিকারের শব্দ, অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি। 
 
সভাপতির বক্ত্যবে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, শব্দদূষন নিয়ন্ত্রন কল্পে পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাথে সমন্নয় সাধন করার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তারিখসহ একটি রোডম্যাপ প্রনয়নের জন্য সুপারিশ করেন। শ্রবন-শক্তি হ্রাসের ফলে বিরক্তি, নেতিবাচকতা ও রাগ; ক্লান্তি, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ ও বিষন্নতা; সামাজিক কর্মকান্ড থেকে পরিহার বা প্রত্যাহার; সামাজিক প্রত্যাখ্যান ওএকাকীত্ব; সতর্কতা  হ্রাস ও ব্যক্তিগত ঝুঁকি বাড়ায়; স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হ্রাস; কর্মক্ষমতা ও উপার্জন শক্তি হ্রাস এবং মানসিক ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য খর্ব হয়ে থাকে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং পবার সম্পাদক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, উচ্চ শব্দ শিশু,  গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। আকস্মিক উচ্চ শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘœ ঘটায়। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ণ বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচন্ড চাপ দেয়। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ণ মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। ড. মজুমদার আরও বলেন, এই শব্দ দূষনের ফলে আমাদের ট্রাফিক পুলিশও বধিরতাসহ মারাত্বকভাবে বিভিন্ন শারিরীক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পবা’র সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল বলেন, সময়ের সাথে ক্রমাগত ৮৫ ডেসিবলের উপরে শব্দে শ্রবন-শক্তির ক্ষতি হতে পারে। শব্দ কতটা ক্ষতিকর তা ভলিউম এবং শব্দের স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে শব্দ জোরে হলে শ্রবন-শক্তির ক্ষতি হতে কম সময় লাগবে।আমেরিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকোপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথের মতে ৮৫ ডেসিবল শব্দে সর্বোচ্চ এক্সপোজার  টাইম ৮ ঘন্টা। ১১০ ডেসিবল শব্দে সর্বোচ্চ এক্সপোজার টাইম ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড। ৩ ডেসিবল বৃদ্ধিতে শব্দের পরিমাণ দ্বিগুণ এবং এক্সপোজার টাইম প্রস্তাবিত সময়ের অর্ধেক। শব্দের মাত্রা ১৪০ ডেসিবলের উপর হলে এক এক্সপোজারেই শ্রবন-শক্তির ক্ষতি হতে পারে। 
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ একজন মানুষকে অস্থায়ীভাবে বধির করতে পারে এবং ১০০ ডেসিবল শব্দ সম্পূর্ণভাবে বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্বে বধিরতার হার ক্রমশই বাড়ছে। বিশ্বের ১৫ শতাংশ মানুষ কোন না কোন পর্যায়ের শ্রুতিক্ষীণতায় ভুগছেন। আবার তাদের অধিকাংশই শিশু, যারা আগামী দিনে জাতিকে এগিয়ে নেবে। আর বিশ্বের ৫ শতাংশ লোক বধিরতায় ভুগছেন, যা তাদের নিত্যদিনের কার্যক্রম এবং জীবন-জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ২০০২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে শ্রুতিক্ষীণতার হার ছিল ৭.৯ শতাংশ।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান ও গলা বিভাগ কর্তৃক ২০১৩ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশে বর্তমানে এক-তৃতীয়াংশ লোক কোন না কোন শ্রুতিক্ষীণতায় ভুগছেন এবং ৯.৬ শতাংশ শ্রুতি প্রতিবন্ধী। একই সাথে দেশে ১৫ বছর বয়সের নিচের জনসংখ্যার মধ্যে শ্রুতি প্রতিবন্ধীর হার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ২.৫ শতাংশ বেশী। বিশেষজ্ঞদের মতে শব্দ দূষণের বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে অদূরভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরীর ৫০ শতাংশ মানুষ ৩০ ডেসিবল শব্দ শুনার ক্ষমতা হারাবে, শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে এবং তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। 
 
গবেষণায় দেখা যায় যে ঘুম, রক্তচাপ এবং হজমের ক্ষেত্রে শারীরিক যে পরিবর্তন ঘটে তা শব্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং উন্নয়নশীল ভ্রƒনের উপর নেতিবাচক প্রভাবের ক্ষেত্রেও শব্দের সংযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুমের ব্যাঘাতের সবচেয়ে সাধারণ ধরনের একটি হচ্ছে শব্দ এবং যখন ঘুমের ব্যাঘাত ক্রমবর্ধমান হয় তখন স্বাস্থ্যের উপর বড় ধরনের বিরুপ প্রভাব ফেলে। ইউএস ইপিএ ঘুমের ব্যাঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য বাড়ির ভিতরে শব্দের মাত্রা দিবাকালীন গড় ৪৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৩৫ ডেসিবল নির্ধারণ করেছে।
 
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫এর অধীন 'শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০০৬ বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। নীরব এলাকা হচ্ছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ইত্যাদি এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোন প্রকার হর্ণ বাজানো এবং মোটর, নৌ বা অন্য কোন যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ণ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসমূহ নিজ নিজ এলাকার মধ্যে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকাসমূহ চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করবে। এই বিধিমালার বিধান লংঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। 
বিধি অনুযায়ী শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল,  বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল।
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে শব্দ দূষণের মাত্রা নিরুপণের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর শব্দের মাত্রা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জানুয়ারি ২০১৭ মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। জরিপকৃত স্থানগুলো নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকা। এছাড়া বাসের ভিতর সামনে ও পিছনে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৩.৩ থেকে ১০৪.৪ ডেসিবল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৯২.২ থেকে ৯৭.৮ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৬৮.৭ থেকে ৮৩.৬ ডেসিবল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৮৫.৭ থেকে ১০৫.৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন ৮৫.৭ থেকে ১০৬.৪ ডেসিবল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯৪.৩ থেকে ১০৮.৯ ডেসিবল। বাসের ভিতর শব্দের মাত্রা সামনে ৯৩.৬ থেকে ৯৫.২ ডেসিবল ও পিছনে ৮৪.৬ থেকে ৮৫.৪ ডেসিবল। বাংলামটরে এ্যাম্বুলেন্স এর সাইরেন বাজানোকালে শব্দের মাত্রা ১১০.১ ডেসিবল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৫.৮ থেকে ৯৬.৭ডেসিবল।
নভেম্বর ২০১৩ মাসে নীরব এলাকায় দিবাকালীন  শব্দের মাত্রা ৭৫-৯৭ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৬-৮৭ ডেসিবেল, মিশ্রএলাকায় দিবাকালীন  শব্দের মাত্রা ৭৩-১০২ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭১-১০৩ ডেসিবেল।
 
 
পবা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের জরিপ অনুযায়ী নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণেরও বেশী। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। আবাসিক এলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে প্রায় দুই গুণের বেশী। মিশ্রএলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মিশ্রএলাকায় রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দুই গুণেরও বেশী। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশী। জরিপ হতে প্রাপ্ত ফলাফল মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এভাবে শব্দ দূষণ চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে এবং তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। আমরা যারা শব্দদূষণের সৃষ্টি করছি তারাও এর ক্ষতির শিকার। কাজেই সরকারের গৃহিত কর্মসূচির পাশপাশি আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে শব্দদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। শব্দ দূষণের উৎসসমূহ বন্ধ করার পাশাপশি আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে। সকলকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। শব্দদূষণের মতো এই মারাত্মক ঘাতক থেকে আপামর জনসাধারণকে রক্ষা করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমন্ডলী ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা পালন করতে হবে। 
 
করণীয়ঃ- 
ক্স শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।
ক্স পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর ন্যস্ত আইনসিদ্ধ দায়িত্ব ও কর্তব্য আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা। 
ক্স সিটি কর্পোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নিজ এলাকার মধ্যে নীরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প বা মিশ্র এলাকা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড স্থাপন ও সংরক্ষণ করা। 
ক্স মোটরযান মালিক ও ড্রাইভারদের উচ্চ শব্দসৃষ্টিকারী হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
ক্স নীরব এলাকায় হর্ণ না বাজানো ও অন্যান্য এলাকায় অপ্রয়োজনে হর্ণ না বাজানোর জন্য মোটরযান ড্রাইভারদের উদ্বুদ্ধ করা।
ক্স উচ্চ শব্দসৃষ্টিকারী হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। উচ্চ শব্দের হর্ণ, উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী জেনারেটর ও যন্ত্রপাতি আমদানী বন্ধ করা।
ক্স যানবাহন নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
ক্স লাউড স্পীকারের ব্যবহারে সচেতন হওয়া। অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা।
ক্স কলকারখানায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক্স মোবাইল কোর্ট পরিচালনা।
ক্স জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সরকারী বিধিবিধান মেনে চলা।