বিভিন্ন কারণে উচ্চ শব্দের উৎসমূহ একদিকে যেমন বাড়ছে একইসাথে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় সম্প্রতি শব্দ দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌছেছে। শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি লাঘবে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালাকে মোবাইল কোর্টের আওতাভূক্ত করতে হবে। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১২, সোমবার সকাল ১১ টায় ঢাবির চারুকলার সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।
পীসের মহাসচিব ইফমা হোসাইনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক আব্দুস সোবহান, পবার সম্পাদক আসলাম খান, কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ, সাবিনা নাঈম, সদস্য এ কে এম সেরাজুল ইসলাম, ইউনাইটেড পীস ফাউন্ডেশন নেত্রকোনা জেলার সভাপতি জহিরুল ইসলাম জনি, সদস্য মো: সুমন মিয়া, সাবেক সাংসদ হুমায়ুন কবীর হিরু, নাসফের সাধারণ সম্পাদক ইশরাত জাহান বেবী, উইমেন এনভয় এর সভাপতি শিখা ভূঁইয়া, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, পরিবেশ কর্মী রওশন আলী প্রমুখ।
বক্তারা জানান, শব্দ দূষণে উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মনসংযোগ কমে যাওয়া, মাথা ব্যাথা ও মাথা ধরা, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শব্দ দূষণের প্রধান উৎস যানবাহনের শব্দ বা হর্ণ। রাস্তায় অস্বাভাবিক যানজটের কারণে ব্যস্ত হয়ে আগে যাওয়ার প্রবণতায় চালকরা উচ্চ হর্ণ বাজায়। এছাড়া শিল্প এলাকায় কল-কারখানার শব্দ, আবাসিক এলাকায় বিল্ডিং তৈরির সময় ইট ভাংগার মেশিনের শব্দ, বাণিজ্যিক এলাকায় গ্রীলের দোকানে হাতুড়ি পেটার শব্দ, ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো, মাইকে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ নানাভাবে শব্দ দূষণ হচ্ছে।
শব্দ দূষন নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ বিধিমালার আওতায় হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা ঘোষনা করা হয়। বিধিমালায় বলা হয়, এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ মিটার বিস্তৃত এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ণ বাজানো যাবে না। আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নিমার্ণ কাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো যাবে না। কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার বা কোন যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্র্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। অথচ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রেক্ষিতে প্রণীত এসব বিধি বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি নেই।
আমাদের সুপারিশসমূহ :
১. শব্দদূষণ নি‘য়ন্ত্রণ বিধিমালাকে মোবাইল কোর্টের আওতাভুক্ত করা
২. শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ক্ষমতা প্রদান
৩. শব্দ দূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
৪. শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা বাস্তবায়নে প্রত্যেকটি সড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা
৫. উচ্চ শব্দের হর্ণযুক্ত যানবাহনকে জরিমানা ও শাস্তির আওতায় আনা, গাড়ী চালকদের প্রশিক্ষণ ক্যারিকুলামে শব্দদূষণ এর ক্ষতিকর দিক ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা সম্পৃক্ত করা
৬. প্রাইভেট কারসহ যে কোন যানবাহনের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের সময়ে হর্ণ এর শব্দ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে উচ্চশব্দের হর্ণযুক্ত যানবাহনের লাইসেন্স বাতিল করা
৭. বিজ্ঞাপন ও প্রচার মাধ্যমে শব্দ দূষণের ক্ষতিসমূহ তুলে ধরা।