সার্বজনীন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সেবা গণমূখী কর
৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা : সবার জন্য, সর্বত্র’ (টহরাবৎংধষ যবধষঃয পড়াবৎধমব: বাবৎুড়হব, বাবৎুযিবৎব)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭০তম বার্ষিকীতে এবছর দিবসটির লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালে সম্মত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বিশ্ব নেতারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পালন করতে তাদের আহবান জানানো এবং সব মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাস্তবমুখি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যাতে প্রত্যেকেই আর্থিক দুর্ভোগের মুখোমুখি না হয়ে সর্বত্র প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারে তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত সেবা এবং আর্থিক সুরক্ষা শুধুমাত্র মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনকাল বাড়ায় না, এটি মহামারি থেকে দেশকে রক্ষা করে, দারিদ্র ও ক্ষুধা ঝুঁকি কমায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিচালনা এবং লিঙ্গ সমতা বাড়ায়।
পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নির্বিচারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক সম্মিলিত কৃষি উৎপাদিত পণ্য এবং ভেজাল ও বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত খাদ্যের কারণে এদেশের মানুষ আজ মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখিন। চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক দূর্বলতা এবং অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধার কারণে এদেশের জনগণ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। অনেকই জটিল রোগের চিকিৎসা করতে তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পতি বিক্রি করতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে? সার্বজনীন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসহ চিকিৎসা সেবা গণমূখী করা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র উদ্যোগে আজ ০৬ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, সকাল ১০.৩০টায়, পবা কার্যালয়ে “সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জসমূহ”-শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত গোলটেবিল বৈঠকের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন পবা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পবা’র সম্পাদক শামীম খান টিটো, ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, সদস্য মোস্তারী বেগম, পল্লীমা গ্রীণ-এর সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, জনউদ্যোগ-এর সদস্য সচিব তারিক হোসেন, নাসফের আইন বিষয়ক সহ-সভাপতি মো. ওমর ফারুক, আইনজীবী এলিজা রহমান, সেতু সংঘ-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. ইলিয়াস হায়দার, ডা. তাসনিয়া খান প্রমুখ ।
প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ডায়াবেটিস, শ্বসনতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ (সিওপিডি), হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো এসব রোগে আক্রন্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ভয়াবহ, দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এসব রোগের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু না হলেও শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিকভাবে দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৬০ ভাগ মৃত্যু অসংক্রামক ব্যাধির কারণে হয়। অসংক্রামক রোগ জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস, অপর্যাপ্ত ব্যায়াম, মাদক ও তামাক ব্যবহার, পরিবেশ দূষণের সাথে সম্পর্কিত। শুধু সচেতনতা বা চিকিৎসার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি খাদ্য, কৃষি, পরিবেশ, শিক্ষা, ক্রিড়া, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, নগর অবকাঠামো প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সারাবিশ্বে অসংক্রামক রোগে আক্রন্তদের মধ্যে ২০ শতাংশ ¯œায়ুরোগী। এর অধিকাংশই উন্নয়নশীল দেশে। এসব রোগীর বড় অংশই মূলত স্ট্রোক ও মৃগী রোগে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ¯œায়ুরোগে আক্রন্তের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ লাখ। ¯œায়ুরোগের মধ্যে স্ট্রোক মৃত্যুও অন্যতম কারণ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের নিউরোলজি এবং নিউরোসার্জারি রোগীর সংখ্যা ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে ২ কোটির বেশি মানুষ কিডনী রোগে আক্রান্ত এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলেই কিডনী রোগ হচ্ছে। প্রতিমাসে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভার রোগী দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। দীর্ঘদিন বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে গর্ভবতী মা ও তার পেটের ভ্রুনের ক্ষতি হয়, সন্তানও ক্যান্সার, কিডনীসহ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও শিশু স্বল্পবুদ্ধি, স্মরণশক্তি কম ও অল্প বয়সে বৃদ্ধ হয়। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হচ্ছে। খাদ্যের সক্সেগ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণের পর তা নিঃশেষ না হয়ে দেহের ভিতর দীর্ঘদিন জমা থাকে। ফলে এ বিষক্রিয়া বংশ থেকে বংশে স্থানান্তর হয়।
বাংলাদেশে পুরুষদের তুলনায় নারীদের কিডনি রোগ বেশি হয়। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অর্থাভাবে চিকিৎসাহীন থেকে অকালে প্রাণ হারান অধিকাংশ রোগী। সচেতনতার মাধ্যমে ৫০ থেকে ৬০ কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। রাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ১৪ শতাংশ নারী এবং ১২ শতাংশ পুরুষ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত। পরিবারের সদস্যদের বেষম্যের কারণে নারীর কিডনি রোগে মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিশোরী-তরুণীদেরও কিডনি রোগ হচ্ছে। মূত্রনালীর ইনফেকশনের মাধ্যমে নারী কিডনি রোগে আক্রন্ত হয়। খাবারে ভেজাল, দূষণের কারণে কিডনির ওপর চাপ বাড়ছে, কিডনি রোগ বাড়ছে। কিডনি রোগ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ভেজাল খাবার, শস্য উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, ধূমপানসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর ১,২২,৭১৫ জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ধনীরা উন্নত দেশে, মোটামুটি ধনীরা ভারতে, মধ্যবিত্তরা ঢাকায় চিকিৎসা করে থাকে। যাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই তারা বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বাংলাদেশে বছওে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ৯১,৩৩৯ জন মারা যান। এর মধ্যে ১৪ শতাংশ খাদ্যনালীর, ১১ শতাংশ ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর প্রতি লাখে যক্ষায় আক্রান্ত হচ্ছেন ২২১ জন, মৃত্যু হচ্ছে ৪০ জনের। জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে দেশে ২,৪৪,২০১ জন যক্ষা রোগী সনাক্ত করা ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ১৫ বছরের কম বয়সী যক্ষ রোগী সনাক্ত হয়েছে ১০,১৮৯ জন। যক্ষা নিয়ন্ত্রণে বালাদেশের অনেক সাফল্য থাকা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। শহরে ও রয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষার প্রাদুর্ভাব বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ৮০০ শিশুর মধ্যে ১ জন ডাউন সিনড্রোম শিশু (প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি বিশেষ প্রকৃতির শিশু) জন্ম নেয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫,০০০ শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মায়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ লাখ শিশু এ সমস্যায় ভুগছে।
অসংক্রামক রোগের জন্য আমাদের লাইফস্টাইল ও পরিবেশের পরিবর্তনগুলো দায়ী। আমাদের শারীরিক পরিশ্রমের প্রবণতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে আমাদের ওজন বাড়ছে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ দেখা দিচ্ছে। শহরগুলোতে জায়গার অভাব, গ্রামাঞ্চলে জায়গার অভাব না থাকলেও পরিশ্রমে মানুষের অনীহা রয়েছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নীতিমালা ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা ও আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব রোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর দিকেও জোর দিতে হবে। সংক্রামক রোগের সঙ্গে দারিদ্রের একটা সম্পর্ক আছে, অসংক্রামক রোগের সঙ্গে উন্নয়নের। আমরা যত উন্নতির দিকে যাচ্ছি, ততই অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। নগরজীবনে অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ার কারণ মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ নেই। শব্দও বায়ু দূষণ সহনীয় মাত্রার কয়েকগুণ।
ঢাকা মহানগরীর সকল এলাকাতেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি পরিমাণ শব্দ দূষণ রয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে নগরবাসী শ্রবণ সমস্যায় ভুগছে, তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে, মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এছাড়াও ঘুম কম হওয়া, হৃদরোগ, অসহিষ্ণু মানসিকতা ইত্যাদি সমস্যায়ও আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অব অটোলজির তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৯.৬ শতাংশ প্রতিবন্ধী ধরনের বধির। সম্পূর্ণ বা মারাত্মক বধির হলো ১.২ শতাংশ। শ্রবন ক্ষমতা ধরে রাখতে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনা সৃষ্টি জরুরি। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে গণমাধ্যম।
পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নির্বিচারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক সম্মিলিত কৃষি উৎপাদিত পণ্য এবং ভেজাল ও বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত খাদ্যের কারণে এদেশের মানুষ আজ মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখিন। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেয়া, চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক দূর্বলতা এবং অপ্রতুল চিকিৎসা সুবিধার কারণে এদেশের জনগণ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। এখানে আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে অনেকেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না। অনেকই জটিল রোগে চিকিৎসা করতে তাদের স্থাবর অস্থাবর সম্পতি বিক্রি করতে বাধ্য হন।
সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা সত্তে¦ও জনগণের মৌলিক চাহিদা বিশেষ করে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, নিরাপদ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, সুস্থ পরিবেশ, ইত্যাদি এখনও নিশ্চিত হয়নি। বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অব্যবস্থাপনায় এসকল মৌলিক চাহিদা আজ হুমকির মুখে। রাষ্ট্রের দায়িত¦ জনগণের এসব মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করে প্রতিশ্রুত সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে? শুধুমাত্র হাসপাতাল, ক্লিনিক স্থাপন করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা; পানি,বায়ু, মাটি, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা; জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমেই সবার জন্য সর্বত্র সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। শুধুমাত্র প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এলক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ, দূষণমুক্ত পানি ও বায়ু, মাদক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ ব্যবহার উপযোগীতার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার স্থাপন, চিকিৎসক, সেবিকা, প্যারামেডিক্স ও অন্য সহযোগী নিয়োগ, তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬০৭টি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ৫,০২৩টি ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার ১০,৬৭৫টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন হাসপাতালে বিছানা ৪৯,৪১৪টি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতালে ৮৭,৬১০টি, হাসপাতালের বিছানা প্রতি জনসংখ্যা ১১৬৯ জন।
করণীয় ঃ
ক্স প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিতে মূল ধারায় স্বাস্থ্য সেবা ও অন্যান্য বিকল্প চিকিৎসার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ক্স প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ, দূষণমুক্ত পানি ও বায়ু, মাদক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ ব্যবহার উপযোগীতার নিশ্চয়তা বিধান করা।
ক্স প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি খাদ্য, কৃষি, পরিবেশ, শিক্ষা, ক্রিড়া, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, নগর অবকাঠামো প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
ক্স জনগণকে সচেতন করার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, এনজিও, সরকার, সামাজিক মাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা পালন করা।
ক্স আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্বলিত প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাসপাতাল ও ডায়গোনস্টিক সেন্টার স্থাপন এবং যন্ত্রপাতিগুলো নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
ক্স চিকিৎসক, সেবিকা, প্যারামেডিক্স ও অন্য সহযোগী নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা।
ক্স আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কারিগরী লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রযোজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
ক্স বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা ও প্যাথলজি ফি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা। আর্থিকভাবে অসচ্ছল রোগীদের আর্থিকভাবে সুবিধা প্রদান এবং ডাক্তারদের কনসালট্যান্সি ফি কমানোর ব্যবস্থা নেয়া।
ক্স খাদ্যে ভেজাল দেয়া ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানো কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাবার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ক্স শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোনাগার স্থাপন এবং নিয়মিত তা পরিচালনা করতে মালিকদের বাধ্য করা এবং নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ক্স কল্যাণমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োগ উপযোগী স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে।
ক্স স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে অগ্রবর্তী খাত ঘোষণা করে যথাযথ প্রয়োজনীয় অর্থে যোগান দেয়া। স্বাস্থ্য বাজেট-জিডিপির ৩% করা।
ক্স উন্নয়নের মৌলিক বিষয় হতে হবে মানবমুখী এবং প্রাণ-প্রকৃতি বান্ধব। এ জন্য প্রতিবেশ ও পরিবেশের সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।
ক্স পণ্য ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নয়, সেবা ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রাষ্ট্রের মৌলিক দর্শন হতে হবে।
ঘটনাবলী
খবর