গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা উপকরন দিয়ে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে
গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা উপকরন দিয়ে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে
নগরের বস্তিবাসী গৃহকর্মীদের আয়ের ৭০% ভাগ চলে যায় বাসা ভাড়ায়। বস্তিতে যেহেতু হোল্ডিং ট্যাস্ক দেয়া লাগে না, তাই বস্তির মালিকদের ভাড়া কম নেয়ার বিষয়ে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। গৃহকর্তাদের সংবেদনশীল হতে হবে এবং গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা উপকরন দিয়ে তাদের কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চললে এই ভাইরাস এর হাত থেকে অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যাবে। নি¤œআয়ের মানুষদের কাজে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে ভয়াভহ আকারে অপরাধ বেড়ে যাবে এবং এর শিকার হবো আমরা সবাই। তিনি আরো বলেন, আমি আমার বাসার গ্রহকর্মীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার কাজকে অব্যাহত রেখেছি তারপরও আমরা করোনা থেকে মুক্ত আছি-এই কথাগুলো বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জনাব আসিফ আহমেদ। মোহাম্মাদপুর থানার চাঁদ উদ্যোনের পাইুেনয়ার হাউজিং বস্তির দীর্ঘ দিনের জলবদ্ধতা নিয়ে কথা বললে তিনি ওয়েবনারে বলেন, গত কাল থেকে আমরা ঢাকার জলবদ্ধতা নিরষনের দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা আজই সরজমিনে পরিদর্শন করে তা নিরষনের উদ্যোগ নিব। আজ ২৪ জুলাই ২০২০ তারিখে বেসরকারী উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিক এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) যৌথ উদ্যোগে পবার চেয়ারম্যান জনাব আবু নাছের খানের সভাপতিত্বে এবং ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলের সঞ্চলনায় করোনাকালে গ্রহকর্মীদের কর্মসংস্থান সংকট এবং করণীয় বিষয়ক অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই অনলাইন আলোচনা সভায় ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিক সমন্বয় মো: জাহাঙ্গীর আলম। উক্ত আলোচনা সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগের সভাপ্রতি জনাব এম এ কাশেম বলেন, সকল শ্রমিকদের একই অবস্থা, তারা কর্মহীন হয়ে পরেছে। তাদের জন্য এখন বেঁচে থাকাই দায় হয়ে গিয়েছে। সকল গৃহকর্মীদের বেতনকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন এবং সবার মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। উক্ত অনলাইন সভায় আবু নাছের খান বলেন, করোনা দূর্যোগের ফলে বেকার হয়ে যাওয়া নি¤œ আয়ের মানুষেরা অবর্ননীয় দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। যার প্রভাব সুদুর প্রসারী। তাদের সন্তানেরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় কবে ফিরে যেতে পারবে তা আমাদের জানা নাই। একটি বিশাল মানুষের কর্মহীন হয়ে যাওয়া জাতীয় অর্থনীতিতেও ব্যাপক ক্ষতি তৈরি করছে। এর থেকে উত্তরনের উপায় চিন্তা করতে হবে। আলোচনায় বারসিক পরিচালক এবং প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ত গবেষক জনাব পাভেল পার্থ বলেন, এই মহুর্তে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে দুটি খুশির খবর আছে। একটি হলো গতকাল ২৩ জুলাই ২০২০ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু উদ্বাস্তদের জন্য কক্্রবাজারে আবাসনের ব্যবস্থা করে তা উদ্বোধন করেছেন এবং অন্যটি হলো ঢাকার যে উনিশটি খালছিল যা এখন দখল ও ভরাট হয়ে গেছে, ঢাকার জলবদ্ধতা দূরীকরনের জন্য সেই খালগুলোর দায়িত্ব এখন ঢাকা সিটিকর্পোরেশনের হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে। আমরা আশা করবো সিটিকর্পোরেশন ঢাকার এই উনিশ খাল উদ্ধার এবং খনন করবেন। এছাড়া বক্তব্য পবার সম্পাদক মেজবাহ সুমন, বারসিক গবেঘক সুদিপ্তা কর্মকার প্রমুখ।
ধারনাপত্রে তিনি বলেন, অমরা সকলেই জানি, কভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারা পৃথিবীর সাথে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ লক্ষের অধিক মানুষ এবং আমাদের ছেড়ে চলে গেছে প্রায় তিন হাজারে মানুষ। গত মার্চ মাসে আমাদের দেশে করোনা সনাক্তর পর সরকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাধারণ ছুটি ঘোষানা করে। ফলে স্থবির হয়ে যায় দেশের সকল ধরনের অর্থনৈতিক কাজ, বন্ধ হয়ে যায় নগরের নি¤œ আয়ের বস্তিবাসী গৃহকর্মীদের কাজ। মহাসংকটে পড়ে যায় রিকশা, ভ্যান, ঢেলাগাড়ি, ছোট ব্যবসা, দিনমজুরী, নির্মান শ্রমিক, ড্রাইভার হেলপার, বজ্র ব্যবস্থাপণাসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।
করোনা কালের আগে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে প্রতিবছর কাজের জন্য গ্রাম থেকে ঢাকায় আসত পাঁচ লাখ মানুষ এবং প্রতিদিন আসত ১৭ শত মানুষ এবং এদের ৭৫% ভাগ মানুষের জায়গা হত বস্তিতে। বেসরকারী হিসোব মতে ঢাকা শহরে বিভিন্ন বস্তিতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বা ১০ লক্ষ বস্তিবাসী পরিবার অমানবিকভাবে বসবাস করেন। নগরে এই বস্তিবাসী ১০ লক্ষ পরিবারের প্রায় ৪-৫ লক্ষ নারী শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মী ( ছোটা বুয়া) হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তাদের গড়ে মাসিক আয় ২০০০-৬০০০ টাকা। এর বাইরেও ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে স্থায়ী গৃহশ্রমিক রয়েছে। কিন্তু করেনার চার মাস অতিবাহিত হলেও বস্তির গ্রহকর্মরা এখন তাদের পূর্বের কাজে ফিরতে পারছে না। শুধু ঢাকা শহরের এই বিশাল গৃহকর্মীরা এখন অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
সেন্টার ফর পলিশি ডায়লগ (সিডিপি) গত ৭ জুন ২০২০এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, করোনার কারণে দেশে দারিদ্রের হার ৩৫ শতাংশে এসে দাড়িয়েছে, করোনার আগে যেটা ছিল ১৮ ভাগ। গত ২৪ জুন ২০২০ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস) এর তথ্য মতে করোনার কারণে দেশে ১ কোটি ৬৪ লক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নিচে যোগ হয়েছে। তারা আরো বলেছেন শহরের শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ।
সরকার ২০২০-২০২১ অর্থ বছর বাজেট ঘোষনা করেছেন ৫,৬৮০০০ কোটি টাকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর জন্য প্রায় ৯৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। অন্যান্য খাতের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে ১৫০ টির মত সেবা উপখাত রয়েছে, সেখানে নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের যুক্ত করতে পারলে তাদের জীবন জীবিকা কিছুটা হলেও সচল হতে পারত বলে অনেকেই মনে করেন।
এই পেক্ষাপট বিবেচনায় সরকারের নিকট নি¤œ আয়ের মানুষদের প্রত্যাশা ও দাবীসমূহঃ
১. নগরের নি¤œ আয়ের মানুষদের জন্য গ্রামের ন্যায় প্রচুর পরিমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী চালু করা।
২. করোনায় শহরের নি¤œ আয়ের গৃহকর্মীদের জন্য বিশেষ খাদ্য সহযোগিতা ও রেশনিং কার্ড এর ব্যবস্থা করা।
৩. নি¤œ আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্য ঝুকি বিবেচনায় কোভিড-১৯ টেস্টের আওতায় আনার বিশেষ ব্যবস্থা করা। এটা অবশ্যই বিশেষ বুথের মাধ্যমে এবং বিনামূল্যে করতে হবে ।
৪. করোনায় কর্মহীন নি¤œ আয়ের বস্তিবাসী ও পথবাসী মানুষ, বিশেষ করে গৃহকর্মীদের জন্য আয়বর্ধনমূলক কাজের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা। বস্তিতে ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলার জন্য সব ধরণের প্রশিক্ষন এবং আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা করা।
৫. তাদের ব্যয়ের খাত কমানোর জন্য পল্লী এলাকার মতো নগরের জনসংখ্যা বিবেচনায় স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিওসা ব্যবস্থা করা। তাদর জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, পানির, জ্বালানীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৬. প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে বস্তিবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাটা ব্যাংক তৈরী করা এবং বস্তিবাসীদের অবস্থাভেদে কর্মসূচী গ্রহণ করা।
৭. নগরের সব ধরনের বস্তি উচ্ছেদ বন্ধ করা। বস্তিবাসীদের জন্য সরকারী উদ্যোগে আবাসন ব্যবস্থার কাজ শুরু করা।
৮. গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য কমিশনার কার্যালয়ে একটি সেল গঠন করা এবং তাদের সমস্যার সমাধান করা।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ঘটনাবলী
খবর