আতির খাল ও হাইক্কার খাল ভরাট-দখল বন্ধ করা হোক
আতির খাল ও হাইক্কার খাল ভরাট-দখল বন্ধ করা হোক
 
রায়েরবাজার বুদ্ধিজিবি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ঐতিহাসিক হাইক্কার খাল ও বুড়িগঙ্গা ৩য় সেতুর পাশ দিয়ে প্রবাহিত আতির খাল বিভিন্ন ব্যক্তি ও ডেভেলপার কর্তৃক ভরাট ও দখলের মহাউৎসব শুরু হয়েছে। ভূমিদস্যুরা প্রশাসনের চোখের সামনে হাইক্কার খালের বিভিন্ন অংশের মালিকানা দাবী করে সাইনবোর্ড এবং দখল-ভরাটকার্য বিরামহীন ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। হাইক্কার খালটি বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর সাথে সংযোগের সেতু হিসেবে কাজ করে। এই খালটি বন্ধ হলে অসংখ্য লোকের নৌপথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। তাছাড়া ঢাকার চারপাশের নৌপথকে আবার সচল করার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দারপ্রান্তে তা বাস্তবায়ন মারাত্বকভাবে ব্যহত হবে। ঢাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংরক্ষণে   জলাধাগুলো বাঁচানোর আহ্বান এবং বর্তমানে দখল হতে থাকা আতির খাল ও হাইক্কির খাল রক্ষায় অবিলম্বে সরকারী পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানাচ্ছি। আজ ২৭ জানুয়ারী ২০১০ বুধবার, সকাল ১০:৩০টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তাগণ এ অভিমত ও দাবী জানান। 
 
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পবা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান ময়না-গাজী লুৎফুল কবির সুমন, পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউল হক লিটু, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী আনসার আলী, নাজিম উদ্দীন প্রমুখ।    
 
পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন: হাইক্কার খালটি যেভাবে ভূমিদস্যুরা গিলে খাওয়ার নেশায় মেতেছে এবং সাইনবোর্ড টানিয়ে খালের বিভিন্ন অংশের মালিকানা দাবী করছে তাতে আমরা পরিবেশবাদী হিসেবে অত্যন্ত শংকিত হয়ে পড়েছি। পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা ৩য় সেতুর পাশ দিয়ে প্রবাহিত আতির খালটি ভূমিখোররা দখল-ভরাট করতে করতে একেবারে প্রায় বন্ধ করে ফেলেছে। তাছাড়া ঢাকা মহানগরীর অন্যান্য খালগুলোর দখল প্রক্রিয়া কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা। খাল ও জলাশয় উদ্ধার বা সংস্কার কেবল মহানগরীরর পানি ও বর্জ্য চলাচলের জন্যই প্রয়োজন এমন নয়; জলাবদ্ধতা সমস্যা ছাড়াও জলাশয়বিহীর রাজধানী এই জনপদ ও জনজীবনের জন্যই মহাবিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দিবে ভূমিকম্প, জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহ নানাবিধ পরিবেশ সংকটের জন্ম দেবে এবং ইতোমধ্যে এ সকল ধরণের সংকট শুরু হয়ে গেছে। যা শুধু পরিবেশের উপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, এটা প্রতিবেশ ভারসাম্য ও অর্থনীতির জন্যও নেতিবাচক। 
 
খাল/জলাধার ভরাট ও দখল করা; পরিবেশ আইন ১৯৯৫, পরিবেশ নীতিমালা, বেঙ্গল ক্যানেল এ্যাক্ট ১৮৬৪ মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ঢাকা শহরের ভিতরের ও চারপাশের খালগুলো রক্ষা এবং সচল করতে না পারলে আগামী দিনে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে এ কথা আজ সকলের জানা।  
 
 
পূর্বে এই মহানগরে ৪৭টি খাল ছিল যার বেশিরভাগেরই প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের অধিক। এগুলো দিয়ে নগরীর পানি নিষ্কাশন ও সহজে পন্য পরিবহন করা হত। স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র তিন যুগের ব্যবধানে ২৫টি খাল বিলুপ্ত হয়েছে। আর যেগুলো খালের অস্তিত্ব আছে তা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে এবং দুষণে ভরপুর। ঢাকা শহরের খালগুলো ধ্বংশের একটি বড় কারণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিষয়ক উদাসীনতা এবং অজ্ঞতা। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ভরাট-দখল করছে খাল পাড়ের স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু ও স্বার্থান্বেষী মহল। এ সকল ব্যক্তিদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তী প্রদানের মাধ্যমে খালগুলোকে রক্ষার পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী।