শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ও জাতিগঠনে চাই উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ
শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ও
জাতিগঠনে চাই উন্মুক্ত স্থান ও খেলার মাঠ
 
মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস ফেলবার অধিকার শিশুটির জন্মগত অধিকার। শিশু কিশোরদের পাশাপাশি বয়স্কদেরও স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে খোলা জায়গার প্রয়োজনীয়তা অনেক। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরে ষেখানে অবসরে একটু বসা যায়, কথা বলা যায় সমমনস্ক কারো সাথে, প্রকৃতির সাথে একাত্ব হয়ে মন হালকা করা যায় তেমন একটু খোলা জায়গার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরীতে যেভাবে ভূমিকম্পের আভাস দেখা দিচ্ছে সেই কারণে প্রত্যেক মহল্লায় জনসংখ্যা অনুপাতে খোলা জায়গা থাকা দরকার। যাতে এ ধরণের দূর্যোগের সময় মানুষ খোলা স্থানে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে। আজ ২০ জানুয়ারী সকাল ১০:৩০ মিঃ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে আয়োজিত শাহবাগ জাতীয় যাদু ঘরের সামনে মানববন্ধনে উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠণের প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট নাগরীকগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
মানববন্ধনে পবা এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মনজুরুল হাসানের সভাপতিত্বে সহযোগী সংগঠন হিসেবে অংশগ্রহন করে- সাক্ষর, ওকাফ, বেস্ট, জীবিকা, নিরাপদ, জেনেসিস, ঈখঘই, ডইই ট্রাস্ট, সুবন্ধন, মুকুল ফৌজ, নগরবাসী সংগঠন এর প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত খেলোয়াড়গণ এবং রাস্তায় চলমান উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনসাধারণ।
 
একসময় ঢাকা শহরে অনেক খোলা জায়গা ছিল যা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে সকল খোলা জায়গা অপরিকল্পিতভাবে দালান কোঠা নির্মাণের ফলে আজ প্রায় বিলীনের পথে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা আনুষ্ঠানিক  ও আইনগত ভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার কারণে বিভিন্নভাবে দখল করার পায়তারা চলছে। ঢাকা মহানগরীর সকল এলাকা, মহল্লা, বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে খেলার মাঠবিহীন থাকবেনা এ প্রত্যাশা সকলের। সরকারীভাবে মাঝে মাঝে মাঠ সংরক্ষণের আশার বাণী দেওয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে মাঠ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এবং এখনও যে সকল মাঠ আছে তা সংরক্ষণের কোন অগ্রগতি হয়নি। এলাকায় পার্ক ও খেলার মাঠের দাবী, খেলার মাঠ পুনরুদ্ধার, খেলার মাঠে মেলার নামে জুয়ার আসর বসানো, এসব নিয়ে এরই মধ্যে জোর আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এলাকা ভিত্তিক কোন কোন স্থানে পার্ক, খেলার মাঠ, শিশু পার্ক প্রভৃতি কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে এসবের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না।
 
এখন দেশের সকল শহর বন্দর নগরে এমনকি গ্রামও অনেকাংশে এমনটিই হয়ে উঠছে দিনের পর দিন। বিশেষ করে শৈশব কৈশোরের দূরন্তপনা, যা ভবিষ্যত নাগরিকদের সুষ্ঠু ভাবে গড়ে উঠবার অন্যতম শর্ত তা আজ আটকা পড়েছে টিভি কার্টুন আর কম্পিউটার গেম্স-এর বেড়াজালে। আমাদের পর্যাপ্ত খেলার জায়গা না থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক্্র যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়ছে। হচ্ছে মস্তিস্ক নির্ভর খেলায় অভ্যস্ত, শরীর নির্ভর খেলা ভূলে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে অলস হয়ে যাচ্ছে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না, এতে প্রায় শিশুরা খিটখিটে মেজাজের, অপরিপক্ক আচরণ এবং বিপথগামী পথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 
 
মানববন্ধনের দাবীসমূহঃ- 
ক. বিদ্যমান খেলার মাঠসমূহ কোন ভাবে যেন হারিয়ে না যায় সে জন্য এ সব মাঠকে আনুষ্ঠানিক  ও আইনগত ভাবে খেলার মাঠ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া;
খ. প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবশ্যিকভাবে খেলার মাঠের নিশ্চয়তা চাই;
গ. খেলার মাঠে খেলাধুলা ব্যতীত অন্য কোন অনুষ্ঠান (যেমন- যাত্রা, মেলা, ইত্যাদি) এর অনুমতি না দেওয়া; 
ঘ. প্রত্যেকটি খেলার মাঠ যাতে সব মৌসুমে খেলার উপযোগী থাকে সে জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ; 
ঙ. প্রতিটি গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় প্রয়োজন অনুয়ায়ী এক বা একাধিক খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা;
চ. জনসংখ্যার অনুপাতে নুন্যতম প্রয়োজনিয় উন্মুক্ত স্থান চাই।