নগর পরিকল্পনায় পথচারীরা অবহেলিত, রোগ প্রতিরোধে হাঁটার পরিবেশ জরুরি
নগর পরিকল্পনায় পথচারীরা অবহেলিত, রোগ প্রতিরোধে হাঁটার পরিবেশ জরুরি
 
অধিকাংশ মানুষ হেঁটে চলাচল করলেও ঢাকা শহরের যাতায়াত পরিকল্পনায় হাঁটাকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে না। অগ্রাধিকার পাচ্ছে হাঁটা অপেক্ষা প্রাইভেট গাড়ীর চলাচল। গাড়ীর অধ্যিকের কারণে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, যানজট, ফুটপাত দখল, উষ্ণতা বৃদ্ধি দূর্ঘটনাসহ নানা সমস্যার কারণে হেঁটে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে। রোগ প্রতিরোধ, যানজট হ্রাস ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে হাঁটার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হাঁটা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরতে আয়োজকগন পায়ে দড়ি বেঁধে, মুখে অক্সিজেন মাস্ক পড়ে প্রতিকী কর্মসুচিতে উপরোক্ত দাবি জানান। আজ সকাল ১১.টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১০ উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ‘‘প্রত্যাশা’’মাদক বিরোধী সংগঠন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশেন (এনডিএফ) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে “সুস্বাস্থ্যের জন্য নগরে হাঁটার উপযোগী পরিবেশের দাবীতে” অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। 
 
বক্তারা উল্লেখ করেন, আগামী ৭ এপ্রিল ২০১০ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্যসেবা নগর-গ্রাম সর্বত্র সকল মানুষের মৌলিক অধিকার। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা নয়, রোগ প্রতিরোধই মূখ্য। এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য “টৎনধহরুধঃরড়হ ধহফ ঐবধষঃয” বা “নগরজীবনে স্বাস্থ্য”। বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নগরে বাস করছে। বাংলাদেশেও নগরে মানুষের আগমন ঘটছে, বাড়ছে দ্রুতহারে জনসংখ্যা। তাই নগরে সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। নগরে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত ওজনসহ অনেকগুলি ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়ছে। প্রতিদিন হেঁটে চলাচলের মাধ্যমে এ সমস্ত রোগ উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিরোধ করা যায়। 
 
বক্তারা বলেন, প্রতিদিন তিরিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা হাঁটার মাধ্যমে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অতিরিক্ত ওজন ও মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তিরিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব। নিত্যদিনের যাতায়াতের ক্ষেত্রে হেঁটে চলাচলের মাধ্যমে এই সুবিধা অর্জন করা যায়। এর জন্য ঢাকাসহ দেশের সকল শহরে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। ঢাকায় ৭৬ ভাগ যাতায়াত হয় ৫ কি.মি. এর মধ্যে, যার অর্ধেক আবার ২ কি.মি. এর কম। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এই দূরত্বে অধিকাংশ হেঁটেই যাতায়াত করা সম্ভব। কিন্তু ঢাকা শহরে সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত অবকাঠামো, যান্ত্রিক যানের ব্যবহার বৃদ্ধি, ফুটপাত ভেঙ্গে ফেলা, ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং ও কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র-ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ এর ব্যবস্থা করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ মানুষকে হাঁটতে নিরুৎসাহিত করছে। ঢাকায় গাড়ির হর্ন-শব্দ, বায়ূদূষণ আর দূর্ঘটনার ভয় মানুষকে হাঁটতে শঙ্কিত ও নিরুৎসাহিত করছে। 
 
বক্তারা আরো বলেন, হাঁটার জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ও আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফুটপাতে হকারদের সুষ্ঠুভাবে বসার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে মানুষকে হেঁটে চলাচলে আকর্ষণ ও নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সস্তায় জিনিসপত্র ক্রয় এবং প্রচুর মানুষের স্বল্প বিনিয়োগে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ফুটপাত প্রশস্ত এবং সমতল হওয়া প্রয়োজন। ফুটপাতের পাশে গাছ লাগানো এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখাও জরুরী। হাঁটার জন্য শুধুমাত্র ফুটপাতের উন্নয়ন করলেই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে রাস্তা পারাপারেও হেঁটে চলাচলকারীদের প্রাধান্য দিতে হবে। সহজে হাঁটার জন্য ফুটওভার ব্রিজ নয়, সারা শহরের জ্রেবা ক্রসিং প্রয়োজন।
 
উক্ত অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। কর্মসূচিতে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সাঈদ রানা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা মারুফ রহমান, নগরবাসী সংগঠনের হাজী আনসার আলী, দুঃস্থ মানবিক সংস্থার সভাপতি মোসাদ্দেক আহম্মেদ পলাশ। এছাড়া উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব, গ্রীনবেল্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।