রেলকে কোম্পানি নয়, আলাদা মন্ত্রণালয় করার আহবান
রেলকে কোম্পানি নয়, আলাদা মন্ত্রণালয় করার আহবান
সাম্প্রতিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ঋণ বিনিয়োগ গোষ্ঠীর এডিবি-র পরামর্শ বাংলাদেশ রেলকে কোম্পানি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। ঋণ বিনিযোগকারী গোষ্ঠীর পরামর্শে এধরনের প্রচেষ্টা রেলকে বেসরকারী করার নামান্তর বলে অনেকেই আংশকা প্রকাশ করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুশাসনের সংস্কারের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং নীতিমালায় হস্তক্ষেপ, অভিমত চাপিয়ে দেওয়া বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফ নামক সংস্থাগুলোর জন্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। এ সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সরকারকে চাপ প্রয়োগ ও অভ্যন্তরীন বিষয়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নামে হস্তক্ষেপ চালাচ্ছে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়ার অব্যাহত প্রচেষ্টা করছে।
এডিবি-র সহযোগিতায় ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে রেলে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিশেষ্ণগরা এডিবি-র এই ঋণ বিনিয়োগ অপ্রয়োজনীয় খাতে বিধায় বিরোধীতা করে আসছিল। এডিবি-র বিনিয়োগ রেল উন্নয়নের কথা বলা হলেও, বিভিন্ন তথ্য চিত্র রেলে অবনতির প্রমান মেলে। বর্তমানে এই বিরাট ঋণ বিনিয়োগের পরও রেল পথের উন্নয়ন না হওয়ার জন্য দূঘর্টনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কতিপয় স্বার্থনেষী সরকারী কর্মকর্তা, চাটুকারী অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পবিদদের কারণে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের সার্বভৌমত্বকে সংকুচিত করা হচ্ছে। রেলে যে কোন উন্নয়ন কর্মকান্ডের পূর্বে বিগত দিনের ঋণ গ্রহণের সুপারিশকারী কমকর্তাদের খুজে বের করে দেশীয় সম্পদ বিদেশীদের পরামর্শে ধ্বংশ করার অভিযোগে বিচার করা প্রয়োজন।
দূনীতির দোহাই দিয়ে ঋণ বিনিয়োগ গোষ্টীগুলো দেশের সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করতে চাচ্ছে। অথচ দূনীতির অন্যতম হোতা মোবাইল কোম্পানি, ঔষধ কোম্পানি, হাসপাতাল, তেল কোম্পানিসহ বিভিন্ন বেসরকারী বিদেশী ও দেশীয় কোম্পানিগুলোর কর্মকান্ডে তারা নীরবে সমর্থন যোগাচ্ছে। দেশীয় দূনীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিদেশী কোম্পানিগুলোর এ কর্মকান্ডের প্রতি নীরব থেকে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দোষারূপ করেছে। এ সকল কর্মকান্ড রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারীকরণ এবং দেশী শিল্পগুলোকে ধ্বংশ করছে। এ সকল কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ড লাগামীহীন দ্রব্যমূল বৃদ্ধি, পরিবেশ ধ্বংশ এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারণ। দেশে রাজনৈতিক অবস্থা সংকুচিত থাকায় বিদেশী গোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নের নামে বেসরকারী করার কর্মকান্ড গতিশীলতা পেয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রেল জনগনের অর্থে পরিচালিত হয়। সেই জনগনের কল্যাণে মাত্র ১৫০-২০০ কোটি টাকা ভতুর্কী তথা বিনিয়োগর ফলে এটিকে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করছে, ঋণ বিনিয়োগ গোষ্ঠী, তাদের পোষ্য অর্থনীতিবিদ এবং স্বার্থনেষী কর্মকর্তা ও প্রকল্পবিদরা। অপর দিকে হাজার কোটি টাকা ভিওআইপির নামে পাচারের জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এ সকল কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ এবং ঋণ বিনিগোষ্টী কোন প্রশ্ন তুলছে না। এই বিষয়গুলো স্পষ্টই প্রমান করে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি দুনীতি এবং সংস্কারের নামে কার্যক্রম দেশের সম্পদকে ধ্বংশ করার প্রচেষ্টা। একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন এ দেশে জনগনের। এদেশের মানুষের আয়ের অর্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। ঋণ বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর অহেতুক বিনিয়োগ গ্রহণ করে ঋণ প্রতিশোধের জন্য অর্থ জনগন প্রদান করবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি প্রাচীনতম সেবামূলক গণপরিবহন। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য, সাংবিধানিক অধিকার, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি, দারিদ্র বিমোচন, জনগণের অধিকার। আমাদের ঐতিহ্যগত এই প্রতিষ্ঠানটিকে উন্নয়নের লক্ষ্যে সবাইকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। স্বল্প ভাড়ায় ভ্রমনের ক্ষেত্রে দেশের আপামর জনগণের কাছে বাংলাদেশ রেলওয়ের অপরিহার্যতা ও গুরুত্ব আজও সর্বাধিক। যানযটমুক্ত, পরিবেশ দূষণমুক্ত ও আরামদায়ক পরিবহন মাধ্যম হিসাবে রেলওয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই রেলের উন্নয়নে ঋণ বিনিয়োগ গোষ্ঠীর অপ্রয়োজনীয় ঋণ বর্জন, বিগত দিনের অপ্রয়োজনীয় ঋণগ্রহনে সুপারিশকারীদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রেল উন্নয়নের লক্ষ্যে রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের আহবান জানাচ্ছি।
ঘটনাবলী
খবর