ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ পার্কিং বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান
রাজধানী ঢাকায় যানজটে বছরে প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা অপচয় হয়। ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়িতে মাত্র পাঁচ শতাংশ ট্রিপ সংঘটিত হয়ে থাকে। যাদেরকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে যে সকল মাধ্যমে পঁচানব্বই শতাংশ সংঘটিত হয় সেগুলি উপেক্ষিত থেকে যাচেছ। অর্থাৎ বাস, রিকশা, হাঁটা ইত্যাদি মাধ্যমে যারা চলাচল করে থাকেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ শহরে হেঁটে সাইত্রিশ শতাংশ যাতায়াত হয়। কাগজে কলমে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারীরা সবচেয়ে অবহেলিত। ঢাকার অনেক রাস্তায় ফুটপাত নেই। যেখানে আছে তার অধিকাংশই ভাঙ্গাচোরা। যে সকল রাস্তায় প্রশস্ত ফুটপাত দেখা যায়, তাও চলে গেছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের পাশের ফুটপাতে ভবনে গাড়ি ঢোকার স্থানে হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য সুন্দর র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই র্যাম্প ব্যবহার করে ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং করে রাখে। এখানে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিপণীবিতানসহ বিভিন্ন ভবনের সামনে অবাধে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। এর ফলে হাঁটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫, সকাল ১১ টায় রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডস্থ আবাহনী মাঠের সম্মুখে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), অরুণোদয়ের তরুণ দল, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, সহায় উন্নয়ন সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘হাঁটার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও যানজট হ্রাসে ফুটপাত ও সড়কের অবৈধ পার্কিং বন্ধে উদ্যোগ নিন’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা একথা বলেন।
নাজনীন কবীর, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, তাঁর বক্তব্যে বলেন, পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে ফি দিতে হলে মানুষ প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে এবং রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কমায় যানজট কমে আসবে। পার্কিং ফি বৃদ্ধি পেলে অনেকেই নতুন গাড়ি কেনা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে নতুন করে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদা হ্রাস পাবে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে আসলে সময়ের অপচয়, জ্বালানীর ব্যবহার, দূর্ঘটনা, শব্দ ও বায়ূদূষণ হ্রাস পাবে। শহর আরো সুন্দর ও মানুষের বসবাস উপযোগী হবে।
আতিক মোর্শেদ, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বলেন, জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যম ভিত্তিক পরিবহণ নীতিমালা, ২০১৩ তে পথচারীর অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় না। প্রতিটি প্রকল্পে যান্ত্রিক যানের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। প্রাইভেট গাড়ি যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হওয়া স্বত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না।
শহীদুল ইসলাম বাবু, সভাপতি, অরুণোদয়ের তরুণ দল, বলেন, প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পার্কিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬৭ টি গাড়ি নিবন্ধিত হয়। এভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকলে পার্কিং সৃষ্ট সমস্যাগুলো আরো বাড়বে এবং যানজট হ্রাসও অসম্ভব হয়ে পড়বে। কাজেই প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, সহায় উন্নয়ন সংস্থা, বলেন, প্রাইভেট গাড়ি বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তার থেকে অনেক কম ব্যয় করে হাঁটা এবং সাইকেল বান্ধব অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। দূষন কম হবে এ যুক্তিতে গাড়িগুলো সিএনজি’তে রূপান্তর করা হলেও এ থেকে বেনজিন নির্গত হয়, যা ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্স এর ছাত্র ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোঃ শামীমজাহান রকি, বলেন, ফুটপাতে র্যাম্প প্রদান করা হয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে। কিন্তু সেখানে গাড়ি পার্কিং করার ফলে সকল পথচারীর সুষ্ঠু চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান নীতিমালায় পথচারীদের হেঁটে চলাচলের পরিবেশের মানোন্নয়নের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। মনির হোসেন নিশাত, পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বলেন, রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোতে প্রচুর পরিমাণ গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। ফলশ্রুতিতে যানজট বাড়ে এবং পথচারী ও যানবাহনের সুষ্ঠু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। কাজেই ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং বন্ধে ভবনের সামনে র্যাম্পে খুঁটি (ইড়ষষধৎফ) স্থাপন করা ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
জিয়াউর রহমান লিটু, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা,ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট সমাপনি বক্তব্যে বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে চাহিদা কমানোর জন্য প্রতিটি এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, আবাসন, কর্মস্থল ও বিনোদনের সুযোগ রাখতে হবে। তবে বর্তমানে ঢাকা শহরে বেশিরভাগ যাতায়াত দুই থেকে পাঁচ কি.মি. এর মধ্যে হয়ে থাকে। এ জন্য হাঁটা, সাইকেল ও রিকশা সুবিধাজনক মাধ্যম। এর অধিক দূরত্ব অতিক্রমের জন্য উন্নত পাবলিক পরিবহণ (বাস, রেল) ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। এর জন্য নগর ও পরিবহণ পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় জরুরী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান, সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা তানজিলা হক সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা আয়েশা আরাফাত ইকরা, , মাস্তুল ফাউন্ডেশন এর নাসির মাহবুবুল ইসলাম, কাজী আবু সাঈদসহ আরো অনেকে। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন নাঈমা আকতার, সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।
ঘটনাবলী
খবর