শেভরনের পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যক্রম ক্ষতিপুরণ দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়
শেভরনের পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যক্রম ক্ষতিপুরণ দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়
 
আজ ১৪ মে বেলা ১১.০০মিনিটে রিপোর্টাস ইউনিট মিলায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির যৌথ উদ্যোগে অনিন্দ্য সুন্দর সংরক্ষিত লাউয়াছড়া বনে দূলর্ভ জীববৈচিত্র ও আমাদের করনীয় শীষর্ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাখিবিশারদ ও প্রকৃতি প্রেমিক রোনাল্ড হালদার তার ডিজিটাল ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে পশুপাখিসহ লাউয়াছড়ার বনের  অনিন্দ্য সুন্দর  চিত্র তুলে ধরেন।  দেশের মোট ৬০০ প্রজাতির পাখির ৩০০ প্রজাতির পাখিইর অবস্থান এ চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়া। এত অল্প পরিসরে এত প্রজাতির পাখির সমাহার অন্য কোথাও লক্ষ্য করা যায়নি। এই বন ব্লুপিটা, কাপারস্মিত, হুডেটপিট,ব্লুনেড পিটাসহ অসংখ্য বিলুপ্ত প্রজাতির পাখির অভয়নারণ্য। বছরের এই সময়টি অধিকাংশ পাখিসহ বন্য প্রজাতির প্রজজন মৌসুম জরিপের ফলে তাদের স্বাভাবিক প্রজজন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হল। আগামী মৌসুমেই পাখিসহ অধিকাংশ বন্য প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাবে। যা কখনোই ক্ষতিপূরণ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি বনে সাম্প্রতিক ভ্রমন শেষে বলেন যে বনের অনেক প্রানী এখন আর দেখা যায় না। 
 
নিসর্গ লাউয়াছড়ার স্বব্যবস্থাপনা কমিটি সভাপতি অধ্যাপক রফিকুর রহমান বলেন সারা দেশের পরিবেশকর্মী উন্নয়নকর্মী, গনমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় জনগনসহ দেশসর্বস্তরে জনগন যখন লাউয়াছড়া রক্ষায় আন্দোলনরত ঠিক তখন দেশের কতিপয় পরিবেশ রক্ষায় নামধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লাউয়াছড়ায় জরিপের জন্য শেভরনের মতো পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডকে সমর্থন জানাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় এই নামধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। কারণ এ ধরনের নামধারী ব্যক্তিরা বরাবরই দেশের সম্পদ ধ্বংশ করে বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে সমর্থন করে প্রচারণা চালায়। কিন্তু আমাদের সম্মিল্লিত প্রচেষ্টা এ ধরনের নামধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হাত হতে দেশের সম্পদকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট। তবে এধরনের স্বার্থনেষী ও দেশের সম্পদ লুন্ঠনে সহায়তাকরীদের চিহ্নিত করে রাখা প্রয়োজন।  
 
বেলার ইকবাল কবির বলেন সরকার বন রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একদিকে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছে। অপরদিকে এই ধরনের কোম্পানি কারণে দেশের বন ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের একটি বিষয় উপলব্দি করা প্রয়োজন এই বন ধ্বংস হলে আমারাও ধ্বংস হয়ে যাব। আমরা লক্ষ কোটি টাকা দিয়েও এমন একটি সমৃদ্ধ বন তৈরি করতে পারবো না। নিজেদের স্বার্থে এই বনের প্রতিটি অংশ রক্ষা করা উচিত। বিদেশী কোম্পানীর তেল, গ্যাস ব্যাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার চাইতে বন আমাদের অনেক বড় সম্পদ, যা রক্ষনাবেক্ষনই আমাদের এনে দেবে সমৃদ্ধি ও উন্নতি।
 
বক্তারা বলেন বলেন গত ৬ মে ২০০৮ বিভিন্ন্ দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি পড়ে দেশবাসী বিস্মিত। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জালাল আহম্মেদ বলেছেন লাউয়াছড়ার অগ্নিকান্ড এবং বাড়ি ঘরে ফাটলের সাথে শেভরনের জরিপকার্যের সঙ্গে কোন প্রকার সর্ম্পক নেই। রাষ্ট্রের একটি দায়িত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে শেভরনের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এধরনের তথ্য বা উদ্ধৃতি প্রদান দেশবাসীর কাম্য নয়। শেভরনের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেললনই প্রমান করে সংশি¬স্ট ব্যক্তিবর্গ কি পরিমান কোম্পানি কর্তৃক প্রভাবিত। দেশের পরিবেশবাদী, মিডিয়াকর্মী এবং এলাকাবাসী যখন স্বচক্ষে পরির্দশন শেষে এই বিপর্যয়ের জন্য শেভরনকে দায়ী করেছে, তখন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের এধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক বক্তব্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি হিসেবে কোনভাবেই শোভনীয় নয়। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের হয়তো জানেন না, শুধু বাংলাদেশের নয় নাইজেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোম্পানিগুলো এধরনের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংশ করেছে। দেশের মানুষ ভুলে যাননি মাগুরছড়া, টেংরাটিলা এবং লাউয়াছড়া অক্সিডেন্টালের ক্ষতির  কথা। তখনও কিছু অসাধু ব্যক্তিরা সমর্থন দিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যক্তি ও বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহার করার নজির অনেক রয়েছে। 
 
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন আমরা তেল বা গ্যাস উত্তোলন করতে চাই মানুষের জন্য। কিন্তু যদি এ সম্পদ তুলতে গিয়ে আমাদের তার চেয়ে বড় সম্পদ ধ্বংশ হয়, তাদের আমাদের তা হতে বিরত থাকা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন শুধুমাত্র সুন্দরবনের জন্যই সিডোরের আরো মারাত্মক ক্ষতি হতে রক্ষা পেয়েছি। সিডোর হতে রক্ষায় সুন্দরবনের ভূমিকার পর যারা বনকে তেল গ্যাস সম্পদের সাথে তুলনা করে তাদের অর্থনৈতিক জ্ঞান যে কাগুঁজে নোটের উপর তা বলা অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের ব্যক্তিবর্গের অর্থনৈতিক জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রয়োগের প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থার এই ধরনের অবনতি। ঋণ প্রদান গোষ্ঠীর অর্থ পাচারের পরবর্তী উন্নত সংস্করণ বিদেশী বিনিয়োগ নামক কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখতে দেশের সম্পদ রক্ষা করা কোনভাবেই উচিত হবে না। আলোচকগণ লাউয়ছড়া উদ্যানে শেভরন পরিবেশ বিধ্বংশী কার্যকলাপ বন্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি দেশের বন রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রষ্টোর জন্য দেশের সর্বস্তরের মানুষকে আহবান জানান।