সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর শাস্তি সম্বলিত আইন প্রণয়ন জরুরী
প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষ্যে যাতায়াত ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কপথে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিসহ ঘরমুখো মানুষকে রাস্তায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এবছরও অন্যান্য বছরের মতো ঈদের আগে ও পরে  কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্যাপক প্রাণহানী ঘটেছে। বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। যাদের অনেকই পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবারের বোঝা হয়ে জীবনযাপন করতে হবে। মহাসড়ক যেন একটি মৃত্যুফাঁদ। দুর্ঘটনা হ্রাসে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারপরও সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। এতে জনসাধারণ খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু নিরাপদ সড়ক সকলেরই কাম্য। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা)-এর উদ্দ্যোগে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, সকাল ১১.০০টায় পবা পরিবেশ মিলনায়তনে মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল ঃ প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান এবং অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পবার  যুগ্ম সাধারন সাধারন সম্পাদক ড.লেলিন চৌধুরী, সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, মো. সেলিম, মর্ডান ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত প্রমুখ।
 
বক্তারা বলেন নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রেল ও নৌপথের গুরুত্ব অপরিহার্য। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নৌ পথ ও রেল পথের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা সড়ককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। অতিরিক্তি সড়ক নির্ভরতা দূর্ঘটনা, বায়ু দূষণ, শব্দদূষণসহ নানারকম পরিবেশ দূষণ, জ্বালানি ব্যয়, যাতায়াত খরচ, যানজট ও যানজটজনিত সময়ের অপচয়সহ নানারকম সমস্যা বেড়ে চলেছে। দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, স্ট্রোক, বধিরতাসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়ছে। জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে।
 
 
অতিরিক্ত সড়ক নির্ভরতা, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক অবকাঠামো ও যানবাহন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালকের অভাব, অদক্ষ, লাইসেন্সবিহীন ও মাদকাশক্ত চালক, বেপরোয়া ও অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালনা, ওভারটেকিং, অতিরিক্ত লোড বহন, গতিসীমা না মানা, মহাসড়কে লোকাল গাড়ি চলা, ধীর গতির যানবাহন চলাচল, ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার, সড়কে প্রদত্ত সংকেত অনুসরণ না করা, যানবাহন যথাযথভাবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় না আনা, আইন যুগোপযোগী না করা, আইন প্রয়োগে শিথীলতা, ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে ব্যর্থতা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ( মালিক, চালক, বিআরটিএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর), সর্বস্তরে সচেতনতার অভাব, ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন, সর্বোপরি সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে যাতায়াতে যানজট ও দূর্ঘটনা প্রতিনিয়তঃ বেড়ে চলেছে। সুতরাং যাতায়াত ব্যবস্থার এই সংঙ্কট উত্তরণে পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।
 
ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নের ফলে সারাদেশ থেকে মানুষ প্রতিদিন ঢাকার দিকে ছুটছে। কেউবা ঢাকায় অবস্থান করার জন্য কেউবা সংক্ষিপ্ত সময়ের কাজে আসছেন। উৎসবের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসা-যাওয়া করেন। এই চাপ সামলানো অসম্ভব এবং অযৌক্তিকও বটে। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে যাতায়াতের এই চাহিদা অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব। এজন্য বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা শহর, পৌর এলাকায় মানুষের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এমনকি গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে নিকটবর্তী স্থানে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং তাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ পায়। 
 
যেসকল মহাসড়কে ডিভাইডার নেই সেখানেই মুখোমুখি সংঘর্ষসহ দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ছে। ঈদের সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইল, সিলেট রুটে। ১০ দিনে (১০-১৯/৯/২০১৬) ১০৬টি দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়। এতে ১৬৯ জনের প্রাণহানী ঘটেছে এবং ৫৬০ জন আহত হয়েছেন। ৫৪% দুর্ঘটনা বাসসৃষ্ট। এর পর মোটরসাইকেল, আটোরিক্সা, ট্রাক, মাইক্রোবাস। ঈদের আগে-পরের ৮ দিনে ৪৯টি দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়। এতে ৬৮জনের প্রাণহানী ঘটেছে এবং ২১৬ জন আহত হয়েছেন। ৫৪% দুর্ঘটনা বাসসৃষ্ট।
 
 
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়ঃ
* যানবাহনের গতিসীমা, ওভারটেকিং, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ করা। 
* ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করা এবং প্রতিকারমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করা।
* চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এলক্ষ্যে আধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা।
* ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে সততার সাথে আইনানুগ বিধি বিধান অনুসরণ করা।
* মালিক, চালক, বিআরটিএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর-এর জবাবদিহিতা ও দায়িত্বশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।
* সড়ক নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
* দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন বরা।
* পরিবার প্রতি গাড়ি সীমিত করা। গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে টিন বাধ্যতামূলক করা। একই পরিবারে দ্বিতীয় গাড়ি ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি দ্বিগুন করা। তৃতীয় গাড়ি ক্ষেত্রে নিবন্ধন ফি দ্বিতীয়টির দ্বিগুন করা।
* ঢাকার উপর চাপ কমাতে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ।