স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারী মালিকদের প্লট বাতিল ও জরিমানা আদায় করা হোক

স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারী মালিকদের প্লট বাতিল ও
জরিমানা আদায় করা হোক

হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ দীর্ঘ ৬৫ বছর বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ করে যাচ্ছে।  মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিলুপ্তিসহ বুড়িগঙ্গার পানি শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালী কাজে এবং পরিশোধন করেও খাবার পানি হিসেবে ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রের আইন ও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে পরিচালিত হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ বন্ধ করা এবং সাভারে স্থানান্তরে ব্যর্থ কারখানাসমূহের প্লট বাতিল করে পরিবেশ দূষণের দায়ে ট্যানারী মালিকদের থেকে জরিমানা আদায় করতে হবে। পাশাপাশি সাভারের ট্যানারী শিল্প এলাকায় স্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। ২৮ মে ২০১৬, শনিবার পবা কার্যালয়ে ট্যানারী স্থানান্তরের বর্তমান অবস্থা ও করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। উপস্থিত ছিলেন পবার সম্পাদক তারিক হাসান মিঠুল, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, প্রকৌশলী মো: আবদুস সাত্তার, পবার সহ-সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো সাভারস্থ চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের জন্য একাধিকবার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০১৬ সালের ০৩ জানুয়ারি তারিখে মাননীয় শিল্প মন্ত্রী হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো ৭২ ঘন্টার মধ্যে সাভারে স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যথায় প্লট বাতিল এবং গ্যাস, পানি, বিদ্যুত বিছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। এর ধারাবাহিকতায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী সাভারে স্থানান্তরের জন্য ১৪২টি ট্যানারীকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী সাভারে স্থানান্তরের সময়সীমা ৩১ মার্চ ২০১৬ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। ০১ এপ্রিল ২০১৬ হতে হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সর্বশেষ এই সময়সীমা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শিল্প মালিকরা কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সময় চান।

ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় অন্যতম দুটি বিষয় হচ্ছে ঃ সাভারে শিল্প ভবন নির্মাণ, হাজারীবাগ থেকে যন্ত্রপাতি স্থানান্তর ও কারখানা চালু করা এবং সিসিআরইউসহ (ঈড়সসড়হ ঈযৎড়সব জবপড়াবৎু টহরঃ) সিইটিপি নির্মাণ ও চালু করা। সিইটিপির ডিজাইন অনুযায়ী প্রতিদিন ২৫,০০০ ঘনমিটার বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হবে এবং এটি একটি বায়োলোজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ক্রোমিয়াম আলাদাভাবে পরিশোধন করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পুনরায় ব্যবহার করা হবে। সাভারে শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের শিল্প ভবন নির্মাণ, যন্ত্রপাতি স্থাপন, ইউলিটি সংযোগ স্থাপন কার্যক্রম অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। যে ৩১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ট্যানিং ড্রাম স্থাপন করা বা স্থাপনের কাজ চলছে তার ৭০% বিদ্যুৎ সাবষ্টেশন নির্মাণ করা হয়নি বা নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়নি। ফলে সব কিছু প্রস্তুত হলেও বিদ্যুতের অভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু করা সম্ভব হবে না। ট্যানারি স্থানান্তরের দীর্ঘসূত্রিতার প্রধান অন্তরায় একদিকে ট্যানারি মালিকদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যেকে গুরুত্ব না দেয়া, অন্য দিকে নিজেদের ব্যক্তিগত মুনাফাকে প্রাধান্য দেয়া এবং সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রাহ্য না করা। এছাড়া সিইটিপির দুটি মডিউলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও, সিসিআরইউ (ঈড়সসড়হ ঈযৎড়সব জবপড়াবৎু টহরঃ) সম্পন্ন না হওয়ায় ১০টি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মতৎপরতা এবং সিইটিপির নির্মাণের র্ধীরগতিতে আমরা শুধু হতাশই নই, ক্ষুব্ধও বটে। ট্যানারি স্থানান্তরের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোন একটি অদৃশ্য শক্তি এখানে তৎপর।

করণীয়
১.    হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ সাভারস্থ চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের জন্য একাধিকবার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরও শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যন্ত্রপাতি স্থানাস্তর ও উৎপাদন শুরু করতে ব্যর্থ হওয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে সাভারের প্লট বাতিল করা এবং গ্যাস, পানি, বিদ্যুত সংযোগ বিছিন্নসহ হাজারিবাগের ট্যানারীগুলো বন্ধ করা।
২.    সিইপিটি ও সিসিআরইউসহ প্রকল্পের বিভিন্ন কম্পোনেন্টন যথাসময়ে শুরু বা সমাপ্ত না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকারি বিধি-বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩.    হাজারীবাগের ট্যানারীগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪.    পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর আওতায় হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো থেকে পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫০০ কোটি টাকা আদায় করা।
৫.    ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী বিএফএলএলএফইএ ও বিটিএ থেকে সিইটিপি নির্মাণে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায় করা।