ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করা নয় পথচারীর নিরাপত্তায় জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করুন

সাম্প্রতিক সময়ে পথচারীদের নিরাপত্তার অজুহাতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক শারীরিক শাস্তি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা শহরে গড়ে প্রতিদিন গাড়ীর বেপরোয়া চালনায় ১জন পথচারী নিহত বা আহত হয়। গাড়ীর গতি নিয়ন্ত্রণ না করে পথচারীদের প্রতি এ ধরনের নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক কার্যক্রমের আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পরিশ্রান্ত পথচারী, বৃদ্ধ, শিশু, মহিলা, প্রতিবন্ধী, হৃদরোগী, মালামাল বহনকারীসহ অধিকাংশ মানুষের পক্ষে ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করা সম্ভব নয়। মানুষের স্বচ্ছন্দে পারাপারে প্রয়োজন রেইজ ওয়াকওয়ে (উচু হাঁটাপথ) সহ জ্রেবা ক্রসিং প্রয়োজন। আমরা পথচারীদের অগ্রাধিকার নীতি অনুসারে জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।


ঢাকা সিটি কর্পোরেশন আইনের ১৯.৩ তফসিলে পথচারীদের নিরাপদ যাতায়াতে গাড়ী নিয়ন্ত্রণের প্রবিধান করার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন আইনের ধারা ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৭২, ৭৭, ৮০ এবং বিআরটিএ ১৪৩, ১৫৭, ১৬৪ (খ) ধারায় যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছন্দে চলাচল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিধান রয়েছে। এছাড়া যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান (এসটিপি) তে পথচারীদের অগ্রাধিকার নীতির কথা বলা হয়েছে। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ সকল বিদ্যমান আইন ও বিধান পালন না করে ব্যক্তিগত গাড়ীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পথচারী, রিকশা ও পাবলিক পরিবহনসহ বিভিন্ন গণ-পরিবহনের প্রতি বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। আর কত পথচারীর মৃত্যু হলে পথচারী নির্যাতন বন্ধ হবে এবং অগ্রাধিকার পাবে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়।

ব্যক্তিগত গাড়ীর সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করার পদক্ষেপ বাংলাদেশ সংবিধানের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অনুচ্ছেদ-১১, কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি অনুচ্ছেদ-১৪, সুযোগের সমতা অনুচ্ছেদ-১৯ (১) (২), আইনের দৃষ্টিতে সমতা অনুচ্ছেদ-২৭, জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ অনুচ্ছেদ ৩৪ (১), চলাফেরার স্বাধীনতা অনুচ্ছেদ-৩৬ এর পরিপন্থী।

বুয়েটের এক্‌সিডেন্ট রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের তথ্য অনুসারে ঢাকা শহরের যে পরিমাণ দূর্ঘটনা সংগ� িত হয় তার ৮৬% শিকার হচ্ছেন পথচারী। অথচ পথচারীদের নিরাপত্তায় জেব্রা ক্রসিং, স্বচ্ছন্দ্যময় ফুটপাতের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হয় না। বিআরটিএ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, রাজউক, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, স´ানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও বাজেটে বরাবরই পথচারী উপেক্ষিত হয়ে আসছে। বরাবরই পথচারীদের নিরাপত্তার নামে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস নামক নির্যাতন করে আসছে, যা কোনভাবেই পথচারীবান্ধব নয়। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের বাধ্য করতে শারিরীক শাস্তি প্রদান অসাংবিধানিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

প্রায়শই পথচারী নিরাপত্তার নামে ফুটওভার ব্রিজের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়ে থাকে। এ প্রেক্ষিতে আমরা কিছুদিন পূর্বে সড়ক দূঘর্টনায় আহত গণমাধ্যমকর্মী নিখিল ভদ্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ফুটওভার ব্রিজ নিখিলের মতো শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পক্ষে অতিক্রম সম্ভব নয়। তবে কি এ শ্রেনীর লোকদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। একজন ব্যাক্তি আরাম, স্বচ্ছন্দ ও শারীরিক কষ্ট কমাতে গাড়ী ব্যবহার করে, লিফট ব্যবহার করে। পথচারী হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কষ্ট হয়, হাতে বোঝা থাকে তাই কষ্ট এড়াতে পর্বত সমান ফুটওভার ব্রিজ না ডিঙ্গিয়ে সমতলে রাস্তা পার হয়। আমরা আশা করি পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্টরা এই মানবিক বিষয়টি  উপলব্ধি করবে।


 
মানুষের আহত ও মৃত্যু মিছিল হ্রাসের লক্ষ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে অনতিবিলম্বে যানজট বানিজ্যকারীদের বেড়াজাল ছিন্ন করতে অবকা� ামো তৈরি কার্যক্রম হতে বিরতি নিয়ে সহজে সমাধানযোগ্য যাতায়াত সুবিধাগুলোতে মনোযোগী হতে আহবান জানাই। জনগনের যাতায়াত সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য হাঁটার সুবিধার্থে রেইজ ওয়াকওয়ে (উচু হাঁটাপথ)সহ জেব্রা ক্রসিং, স্বচ্ছন্দ্যময় ফুটপাত, বেপরোয়া গাড়ীর চলাচল নিয়ন্ত্রণ, বাস, সিএনজি, রিকশা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, সাইকেল রিকশার জন্য পৃথক লেন, প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ এবং সারা শহরে পাবলিক বাসের পৃথক লেন প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে নগরে এই আহত ও মৃত্যু মিছিল রোধে দ্রুত সমাধানযোগ্য এই বিষয়গুলোতে মনোযোগী হওয়ার আহবান জানাই।