৪র্থ জাতীয় হাওর উৎসব সফলভাবে সমাপ্ত

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা‘র আয়োজনে ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় দুই দিনব্যাপী ৪র্থ হাওর উৎসব গত ০৪ অক্টোবর ১৩ শুরু হয়ে ০৫ অক্টোবর, শনিবার সফলভাবে সমাপ্ত হয়। হাওরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে তুলে ধরা এবং হাওরের সমস্যা ও সম্ভাবনাকে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় নিয়ে আসাই মূলত এ উৎসব আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

জগন্নাথপুর আবদুস সামাদ আজাদ অডিটরিয়ামে ৪র্থ জাতীয় হাওর উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ জনাব এম এ মান্নান। উৎসবে উপস্থিত ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, সম্পাদক ড. হালিম দাদ খান, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন প্রমুখ।

উৎসবের প্রথম দিন সকালে সাঁতার প্রতিযোগিতা, উপস্থিত হাওর উন্নয়ন বিতর্ক শেষে দুপুরে নলজুর নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক নানা পরিবেশনার সাথে কুদ্দুস বয়াতি ও তার দলের মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠান অনেক রাত পর্যন্ত চলতে থাকে। মহিলাদের পিঠা প্রদর্শনী, বালিশ খেলা ও মোমবাতি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের উৎসব শুরু হয়। দুপুরে কাবাড়ি, মহিলা ক্যারম প্রতিযোগিতা শেষে ভবের বাজার মাঠে হাজার হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ফুটবল খেলা শুরু হয়। প্রতিদিনকার উৎসব আয়োজন উপভোগ করতে জেলার পার্শ্ববতী হাওর এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ এতে যোগদান করে।

উৎসবের মধ্য দিয়ে জানানো হয়- বর্তমানে হাওরের প্রকৃতি নানা সমস্যায় জরাজীর্ণ। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা বাঁধ ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ নদী, খাল ও জলাশয়। অনেক বড় বড় বিল বর্তমানে রূপ নিয়েছে ধান ক্ষেতে। জ্বালানি ও বিলে কাঠা দেওয়ার জন্য কেটে উজাড় করে ফেলা হয়েছে হিজল বন। বর্তমানে ক্ষরোতির বন, চিতঙ্গল বা দিল্লীর আখড়া ছাড়া সমগ্র হাওরে হিজল বন চোখেই পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকে জলমহাল লিজ ছাড়াও ব্যাপকভাবে খাস কালেকশনের নামে হাওর ধ্বংস করা হচ্ছে। ডোবা-নালা পাম্প দিয়ে শুকিয়ে অপরিনামদর্শীর মত মাছ আহরণ করার ফলে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ভয়ংকরভাবে কমে যাচ্ছে মাছের যোগান। মহাশোল, নানিদ, শিলোনসহ অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এমনকি বড় রুই, কাতলা-চিতলও এখন দুর্লভ। চলমান নদীগুলোতে কাঠা দিয়ে প্রতিহত করা হচ্ছে স্বাভাবিক স্রোত ফলে পলি জমে ভরে যাচ্ছে নদীগুলো। এর ফলে বর্ষার প্রথম জোয়ারের পানি ধারণ করতে পারছে না নদীগুলো। দেখা দিচ্ছে অকাল প্লাবন ও ফসলহানি। এছাড়াও হাওরের মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি থেকেও অনেক মৌলিক উপাদান হারিয়ে যাচ্ছে। 

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, তথাকথিত উন্নয়ন নয় একটি দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী হাওর এলাকার উন্নয়নে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, মূল জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশের বাস হাওরাঞ্চলে। তাদের উন্নয়ন বঞ্চিত রেখে কোনভাবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। হাওর এলাকার উন্নয়নে এখনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।