অবিলম্বে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে ডুমনি-বোয়ালিয়া খাল দখল ও ভরাট মুক্ত কর

মহানগরী ঢাকার খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনি ইউনিয়নের ডুমনি-বোয়ালিয়া খালটির ডুমনি ও বরুয়া মৌজার সংযোগস্থলে ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে ভরাট করতে শুরু করেছে ভূমিদস্যুরা। এ ভরাট চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই ডুমনি-বোয়ালিয়া খালের  অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। দেখা দিবে পরিবেশ সহ নানা সংকটের। এরই মধ্যে ডুমনিতে পানি না থাকায় আশে পাশের আবাদী জমিতে সেচের পানি দিতে পারছে না কৃষক। খালের উপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছে। জেলে, মাঝি, কৃষক সম্প্রদায়ের অনেক লোকই বাধ্য হয়ে রাজধানীর বুকে কাজের খুঁজে চলে এসেছে। ভূমিদস্যুদের আগ্রাসী ছোবল এই সাধারণ মানুষগুলোকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অবিলম্বে ডুমনি-বোয়ালিয়া খালটি ভূমি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করে তার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ জরুরি।  ০১ জানুয়ারি ২০১১, শনিবার সকাল ১১:০০ টায় ঢাবির চারুকলার সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও গ্রীণবেল্ট ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবী জানান।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, সহ-সম্পাদক সাবিনা নাঈম, গ্রীণবেল্ট ট্রাস্ট এর মহাপরিচালক জসিম কাতাবী, নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ বাবু, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ইঞ্জিনিয়ার তোফায়েল আহমেদ, এনডিএফের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, নেচার লাভিং পিপল এর পরিচালক আলমগীর, ডিপার্টমেন্ট ফর ক্যাম্পেইন ফাউন্ডেশন এর প্রধান উৎপল দাস, কক্সবাজার পরিবেশ রক্ষা আন্দোরনের সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন, ডুমনি খাল রক্ষা কমিটির আহবায়ক বাহার উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পবার সমন্বয়কারী গাজী লুৎফুল কবীর সুমন।
 
আবু নাসের খান বলেন, দেশে খাদ্য সংকট আরও প্রকট হবে যদি ইমারত নির্মাণের নামে আবাদী জমিসহ খাল-বিল গুলো দখল হতে থাকে। বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা যেমন ব্যাহত হবে তেমনি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মাধ্যমে দেখা দেবে পরিবেশ বিপর্যয়। তাই যারা অবৈধ দখলের মাধ্যমে জীবন ও পরিবেশের ধ্বংস ডেকে আনছে তাদের এখনি রুখতে হবে। তাদেরকে শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে আর কেউ এমন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের সাহস না করে।

বক্তারা বলেন, ঢাকার খিলক্ষেত থানাধীন ডুমনি ইউনিয়নের ডুমনি-বোয়ালিয়া খালটি এলাকাটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ খালটিকে ঘিরেই জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করতে হয় ঐ এলাকার কয়েক হাজার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের। এছাড়া খালটি অত্যন্ত স্রোতস্বিনী যা ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, পানি প্রবাহ ও ঢাকাকে বন্যা মুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখছে।
শুধু ডুমনি-বোয়ালিয়া নয় অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ভূমিদস্যুদের বেপোরোয়া কার্যক্রমে বিলীন হতে চলেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৪৩ টি খাল সহ ঢাকা মহানগরীর অসংখ্য খাল। যার খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা, যানজটসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকার মধ্য দিয়ে। ঢাকা এখন অল্প বৃষ্টিতেই প্রকট জলাবদ্ধতার শিকার হয়। নৌ- যোগাযোগ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়ক পথে অস্বাভাবিক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রতিনিয়তই তা বাড়ছে। তাছাড়া খাল, নদী, জলাধারগুলো ধিরে ধিরে দখল হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শহরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। পানির চাহিদা মিটাতে শহরের ভূগর্ভস্থ পানি তোলতে হচ্ছে এতে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এভাবে খাল জরাধারগুলো দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ায় নানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে মহানগরী ঢাকা।

দখলকৃত খাল উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে তা খাল উদ্ধারের জন্য যথেষ্ট নয়। ঢাকার এই জলাশয়গুলোকে বাঁচাতে না পারলে আগমী দিনে ঢাকা সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। খাল ও জলাশয় উদ্ধার বা সংস্কার কেবল মহানগরীর পানি ও বর্জ্য চলাচলের জন্যই প্রয়োজন এমন নয়; জলাবদ্ধতা সমস্যা ছাড়াও জলাশয়বিহীন রাজধানী এই জনপদ ও জনজীবনের জন্যই হুমকির কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দিবে ভূমিকম্প, ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য। এই খালগুলো উদ্ধার না হলে সংকট আরো গভীরতর হবে। যা শুধু পরিবেশ নয় আমাদের অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে ডুমনি-বোয়ালিয়া সহ সকল খাল ভূমিদস্যুদের কবল থেকে দখল মুক্ত করা হোক।