সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে “রেলের বর্ধিত ভাড়া কমানোর দাবী”

রেলের মূল উদ্দেশ্য সেবা প্রদান, বাণিজ্য নয়। রেলের মাধ্যমে জনকল্যাণের দিকটিই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বর্তমানে রেলের ভাড়া পঞ্চাশ শতাংশ বাড়ানোর নামে বাস্তবে একশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা রেলের মূল উদ্দেশ্যকেই ব্যহত করছে। সাশ্রয়ী ও নিরাপদ নিশ্চিত করতে রেলের বর্ধিত ভাড়া পুনর্বিবেচনা সাপেক্ষে কমানো জরুরী। দীর্ঘ সময়ের উপেক্ষা ও অবহেলার পর রেল পুনরায় জনপ্রিয় হওয়ার প্রাক্কালে এই ভাড়া বৃদ্ধি রেল ব্যবস্থার উন্নয়নের পথে অন্তরায়। রেল সড়ক পরিবহন ব্যবসার প্রসারে রেলওয়েকে বিভিন্ন সময়ে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছে। যে কারণে স্বাধীনতার ৪০ বছরে রেল লাইন না বাড়লেও সড়ক পথ বেড়েছে কয়েকহাজার গুণ। রেলের ভাড়া বৃদ্ধি যাত্রীদের রেলের প্রতি বিমূখতা তৈরি করবে যা পক্ষান্তরে সড়ক পরিবহন ব্যবসায়ীদের লাভবান করবে। আজ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে রেলের বর্ধিত ভাড়া পুনর্বিবেচনা করা হোক” শীর্ষক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা একথা বলেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন পবা’র কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ। বক্তব্য রাখেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না এবং পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন প্রমূখ। 

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, রেল কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। জনগণ থেকে লাভ রেলের মূল উদ্দেশ্য হতে পারে না বরং যোগাযোগ নিরাপত্তা ও জনগণের সেবা প্রদানই হলো রেলের মূল দায়িত্ব। যানজট সমৃদ্ধ ভাঙ্গাচোরা রাস্তা এবং নিরাপত্তার কারণে মানুষ যখন রেল-মুখি তখন দিশাহীন সড়ক পরিবহন মালিকরা রেলের জনপ্রিয়তা হ্রাস করার জন্য অযৌক্তিক ভাবে ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় পর যখন রেলের প্রতি মানুষের পূণরায় আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। সুতরাং সেবা বৃদ্ধি করে একবারে অধিক ভাড়া চাপিয়ে না দিয়ে ধাপে ধাপে ভাড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বর্তমান বর্ধিত ভাড়া পুনর্বিবেচনা করে তা কমানো জরুরী। শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে রেলের হিসাব না করে অন্যান্য সুবিধাগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন। রেলে একজন যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কের চেয়ে ছয় ভাগের এক ভাগ জ্বালানী লাগে। রেলে তুলনামূলক দূষণও কম। রেলের মাধ্যমে অনেকেই সস্তায় যাতায়াত করতে পারে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অল্প আয়ের চাকরিজীবীদের যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ৫০ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানোর কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ভাড়া বেড়েছে সর্বোচ্চ ১১৫ শতাংশ। রেলের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে দরিদ্র মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে, রেলওয়ের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে এবং এই সেবাখাতের মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। তিনি রেলের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি না করে মালামাল পরিবহনের যথাযথ পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।

নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ) এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, জীবিকার তাগিদে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মজীবী ও শ্রমজীবী যাত্রী স্বল্প ভাড়ায় রেলে যাতায়াত করে। এটি জনগণের দায়বদ্ধতার অংশ। তিনি রেলওয়েকে লাভজনক করার জন্য রেলের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পীস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন বলেন, নিরাপত্তা, যাত্রী ভাড়া কম থাকা, আরামদায়ক পরিবেশ বান্ধব পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। রেলের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর ভাড়া কম। এছাড়া নিরাপদ ও আরাদায়ক।  লোকসানের অজুহাতে  রেলকে জনবিমুখ করতে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে।