স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন

স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদে হাঁটার জন্য জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে আনুন
ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হোক

ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারাপার বৃদ্ধ, মহিলা, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং মালামাল নিয়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য সহায়ক নয়। অথচ অনেকের পক্ষে অসম্ভব এই কাজটি না করলে ১ নভেম্বর থেকে ২৪ ঘন্টার জেল প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল সাপেক্ষে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার জন্য জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পদক্ষেপ নিন। ১৪ অক্টোবর ২০১০ সকাল ১১ টায় ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর উদ্যোগে “ফুটওভারব্রিজ পথচারীবান্ধব নয়, ২৪ ঘন্টার জেল অগণতান্ত্রিক-স্বচ্ছন্দে ও নিরাপদ হাঁটার জন্য জ্রেবা ক্রসিং চাই” এই দাবিতে আয়োজিত প্রতীকী কর্মসূচি থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।

আয়োজকরা বলেন, ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে জনগনকে বাধ্য করতে ২৪ ঘন্টার জেল দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করবে। যে সকল ব্যক্তিরা মন্ত্রীকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরামর্শ দেয় তাদের থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। কোন ব্যক্তিগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ গ্রহণ মন্ত্রীর জন্য বাঞ্চনীয় নয়। বরং জনস্বার্থ রক্ষা ও জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রীর কার্যক্রম সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল করবে। এজন্য অবিলম্বে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রয়োজন। বক্তারা দূর্ঘটনা হ্রাসে শহরে গাড়ি চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেন। পাশাপাশি ঢাকার সর্বত্র জেব্রাক্রসিং ফিরিয়ে এনে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোরারোপ করেন।

আয়োজকরা আরো উল্লেখ করেন, ঢাকার ৬০% চলাচল হয় পায়ে হেঁটে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বললেও পথচারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য কোন পদক্ষেপ নেই। ঢাকা পৃথিবীর একটি শহর যেখানে এত সংখ্যক পথচারী থাকা স্বত্বেও বর্তমানে কোন জ্রেবা ক্রসিং নেই বললেই চলে, অথচ একসময় এই পদ্ধতিতেই রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মূলত গাড়ি চলাচলকে প্রাধান্য দিতেই পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার মত অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হেঁটে চলা মানুষের অধিকার, অথচ এ ধরনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যাদের শারীরিকভাবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের হাঁটার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের সমান অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। 

ঢাকা শহরে বিভিন্নভাবে পথচারীদের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে লোহার গ্রীল, প্রাইভেট গাড়ী পার্কিং করে ফুটপাত দখল, স্থাপনার জিনিসপত্র ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, ফুটপাত সংকুচিত করা, বাড়ী ও দোকানে গাড়ি ঢোকাতে ফুটপাতে কিছুক্ষণ পরপর কেটে নিচু করাসহ বিভিন্নভাবে মানুষ হেঁটে চলাচলে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে। অথচ হাটার জন্য কম জায়গা দরকার, দূষণ হয় না, জ্বালানী ব্যয় নাই। সবচেয়ে বড় কথা হেঁটে চলাচলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এ সকল বিবেচনায় সারা বিশ্বজুড়ে শহরে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরো সুসংহত করছে। অথচ ঢাকা শহরে সকল সিদ্ধান্ত, আইন-নীতিমালা, প্রকল্প সবকিছুতেই পথচারীদের উপেক্ষা করা হচ্ছে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রণ করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান সেন্টু, সহ-সম্পাদক সাবিনা নাইম, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট (এনডিএফ) এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আমিনুল ইসলাম সুজন, শব্দদূষণ প্রতিরোধ আন্দোলন এর আহবায়ক নাজনীন কবির, পরিবেশকর্মী জিয়াউর রহমান লিটু ও কামরুন্নিছা মুন্না ।