পরিবেশ ও প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য “পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়” এর পরিবর্তে “পরিবেশ

পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অন্তত: ১৫টি মন্ত্রনালয় জড়িত থাকলেও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এসমস্ত মন্ত্রনালয় কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। এমন কি তাদের যে পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা থাকতে পারে সেটিও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যবন্টন বা ‘‘অষষড়পধঃরড়হ ড়ভ ইঁংরহবংং” এবং ‘‘জঁষবং ড়ভ ইঁংরহবংং”-এ পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়ে উল্লেখই নেই। বিদ্যমান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কার্যবন্টনেও পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়টি গুরুত্ব পায় নি। এই মন্ত্রণালয় কর্তৃক আন্ত:মন্ত্রণালয়/বিভাগের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যবস্থাপনার বিষয়টির উল্লেখই নেই। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কার্যত “প্রকল্পায়ন”, “বিদেশযাত্রা” ও “বন সম্পদ আহরণ” নিয়ে ব্যস্ত। এমতাবস্থায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য “পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়” এর পরিবর্তে “পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়” গঠন করা জরুরী। ২৬ জুলাই ২০১১, মঙ্গলবার, সকাল ১০:৩০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। 
সেমিনারে “পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা ঃ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা” শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর “পরিবেশ ব্যবস্থাপনা ঃ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা এবং স্যোসাল অডিট” শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সোহেল আহমেদ চৌধুরী। আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরজাহান সরকার, কবি লিলি হক, পবা এর সম্পাদক হাফিজুর রহমান ময়না প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পরিবেশ অবক্ষয়ের জন্য মূলত দায়ী বিভিন্ন ব্যক্তি, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এবং কিছু কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব সরকারের। এখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিল্পবর্জ্যরে কারণে বাংলাদেশের নদী, জলাশয় এমনকি ফসলের জমি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে যাচ্ছে। এখানে শিল্প মন্ত্রনালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, নদীকে সংকুচিত করে ব্রীজ তৈরির ফলে নদী প্রবাহ বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি নদী জলাশয় খেকোদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাময়িক ধান উৎপাদন বৃদ্ধির  জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রনের নিমিত্ত অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মান এবং বিল শুকিয়ে ধান চাষ করা হচ্ছে। এখানে পানি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভুমিকা রয়েছ্।ে তাছাড়া সরকারী বিভিন্ন সংস্থা বা মন্ত্রণালয় কর্তৃক “উন্নয়ন প্রকল্প” প্রণয়নের সময় প্রকল্প প্রস্তাবনাতে পরিবেশ বিপর্যয় হয় কিনা এবং হয়ে থাকলে তা প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটি উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো দু-চারটি বড় প্রকল্প ব্যতীত অন্য সকল প্রকল্পে খুবই দায়সারা ভাবে এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। 
পরিবেশ অবক্ষয়ের কারণে প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য তথা দেশের সমগ্র প্রকৃতি আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। ১৯৭৭ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং ১৯৯৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন প্রণীত হলেও এই দীর্ঘ সময়ে পরিবেশের উন্নয়নে তা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে অন্য মন্ত্রণালয় সমূহ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। তাদের সামর্থ্য খূবই সীমিত। যেখানে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মর্যাদা ২য় বা ৩য় শ্রেনীর সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবত কি মন্ত্রণালয়, কি পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্পের ভারে জর্জরিত। তারপরও ভাল সংবাদ এই যে চিরচেনা ভূমিকা থেকে বেরিয়ে এসে বর্তমানে শিল্পদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর প্রশংসনীয় সক্রিয় ভূমিকা পালন করবার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। তারপরও “প্রকল্পায়ন” ও “বিদেশ যাত্রা”, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ না হলেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
পরবর্তী পৃষ্ঠা দেখুন

প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ:-
১.    পরিবেশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যেমন,  শিল্প মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বিদ্যূৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইত্যাদি এর কার্যব›ন্টনে ‘‘অষষড়পধঃরড়হ ড়ভ ইঁংরহবংং” এর মধ্যে অবশ্যই পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
২.    মন্ত্রনালয়ের নাম পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে “পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়” করার প্রস্তাব করছি।
৩.    পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বের ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। এজন্যে প্রথমে একজন পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগ করা প্রয়োজন। এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব হবে-
(ক) জীববৈচিত্র সংরক্ষণ সহ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা
(খ) পরিবেশ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয় সাধন/যোগাযোগ
(গ) পরিবেশ উন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাজের সমন্বয় সাধন 
(ঘ) মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকল্প ব্যবস্থাপনা/“প্রকল্পায়ন” বাতিল করতে হবে কিন্তু “পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়কে” শক্তিশালী করতে হবে।
৪.    জাতীয় অর্থনীতি পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে জাতীয় পরিবেশ  অগ্রাধিকার কর্মসূচী পরিকল্পনা (ঘধঃরড়হধষ চৎরড়ৎরঃরুবফ  অপঃরড়হ চষধহ (ঘচঅঘ)) করে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। 
৫.    “পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়কে” আদর্শ হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এর জন্য বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য সম্পদ ও সামগ্রী ব্যবহারে সাশ্রয়ী  হতে হবে। যেমন এসি ও ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার পরিহার করা। 
৬.    সকল প্রকল্প বা কর্মসূচীতে সোসাল অডিট অর্থ্যাৎ বৃহত্তর পরিসরে সামগ্রিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে।
৭.    বিদেশে সেমিনার/ট্রেনিং/ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তা নয়, সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ জড়িতদেরকে পাঠানো উচিত। নেগোসিয়েশন বা কনফারেন্সেও মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি পাঠানোর পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ প্যানেল তৈরী করে সেখান থেকে প্রতিনিধি পাঠানো প্রয়োজন। নেগোসিয়েশন বা কনফারেন্সে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি, অংশগ্রহনের পর প্রতিবেদন ও ফলাফল ভালোভাবে পর্যালোচনাসহ কার্যকরী করবে মন্ত্রনালয়।
৮.    সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে টিম গঠন করে সমাজে লুক্কায়িত সম্ভাবনা গুলিকে পরিবেশ সংরক্ষনের কাজে লাগানো। ভালো উদ্যোগ গুলিকে উৎসাহিত করা বা প্রণোদনা দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
৯.    সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের পরিবেশ ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করার জন্য আলোচনাকে উৎসাহিত করবার দায়িত্ব পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়কে গ্রহন করতে হবে।
১০.    প্রস্তাবিত বিষয়গুলিকে বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অষষড়পধঃরড়হ ড়ভ ইঁংরহবংং ও জঁষবং ড়ভ ইঁংরহবংং এর পরিবর্তন সাধন করা।
১১.    বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত“রুল্স অব বিজনেস” এর মধ্যে অবশ্যই পরিবেশ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের সাথে পরামর্শে ব্যাপারেও সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।