কমিউনিটি সেন্টারের নামে নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক ধ্বংস নয়
কমিউনিটি সেন্টারের নামে নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক ধ্বংস নয়
 
নবাব ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর ২৩ নং ওয়ার্ডস্থ পাঁচ লক্ষাধিক নাগরিকের বসবাস। এই ওয়ার্ডের স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন অবকাঠামো থাকলেও একটি মাত্র পার্ক ছাড়া নেই বিনোদনের জন্য খোলা মাঠ ও পার্ক। নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক নামের এই পার্কটিও আজ হুমকির মুখোমুখি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এরই মধ্যে পার্ক এর জায়গায় কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শিশুদের জন্য থাকবে না কোন মাঠ, মানসিক বিকাশ হবে বাঁধাগ্রস্থ সর্বপরি সর্বসাধারণের স্বাসপ্রশ্বাসের জন্য থাকবে না কোন উন্মুক্ত প্রান্তর। কমিউনিটি সেন্টার যদি করতেই হয় তবে পার্ক, মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান  ও ইমারাত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে করতে হবে। প্রকল্পটি জনসম্মুখে প্রকাশ ও যথাযথভাবে গণশুনানির এছাড়াও পার্কটিকে সংরক্ষণ করে পরিবেশ অধিদপ্তরর ও রাজউকের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ দাবী পূরণ না হলে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ইং শনিবার, সকাল ১১ টায়, নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক (নবাবগঞ্জ পার্ক) সংলগ্ন বেড়িবাঁধে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-সহ মোট ১৪টি সংগঠনের উদ্যোগে “নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক সংরক্ষণ করার” দাবীতে মানববন্ধনে বক্তারা উল্লেখিত অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং পবা’র প্রোগ্রাম অফিসার তানভীর মাসুম এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ-এর সভাপতি আমিরুল হাসান, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন-এর সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, পবা’র সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী, বিসিএইচআরডি-এর সভাপতি মাহবুবুল হক, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানত, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, বাংলাদেশ স্কাউট ও গাইড ফেলোশিপ-এর দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ, কৃষ্টি পরিষদের সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন, ঢাকা রাইটার্স ফোরামের সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ মন্টু, সচেতন নগরবাসীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি  হাজী শেখ আনসার আলী প্রমুখ।
 
পবা’র সাধারণ চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বক্তব্যে বলেন, শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাসে, সুস্থ্য সবল জাতি গঠনে এবং যবক সমাজকে নানা সামাজিক অপরাধ থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে পার্ক ও উদ্যান গুলোর ভূমিকা অতুলনীয়। নারী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধিসহ সকল শ্রেণী পেশা মানুষের ব্যায়াম ও বিনোদনের অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে নগরের উন্মুক্ত স্থান গুলি। সামজিকীকরণের ক্ষেত্রে যার গুরুত্ব অপরিসীম। যখন নগরীতে উন্মুক্ত স্থান, পার্ক, খেলার মাঠ সংকুচিত হচ্ছে সেই মুহুর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডস্থ একমাত্র এই পার্কটি আজ ধ্বংসের সম্মুখিন। এই জায়গায় কখনই কমিউনিটি সেন্টার এর মতো স্থাপনা হতে দেয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুুসরন করে বহুতল বিশিষ্ট কমিউনিটি সেন্টার করলেও অন্যান্য কমিউনিটি সেন্টারের মতো বিবাহ সেন্টারে পরিনত হলে পার্কের পরিবেশ বিনিষ্ট হবে এবং এলাকার সাধারণ মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হবে। এছাড়াও অন্যান্য কমিউনিটি সেন্টারের মতো নানান অসামাজিক কার্যকলাপ সংগঠিত হবে যা এলাকার মানুষের কমিউনিটি সেন্টারের চাহিদা পূরণ করবে না বরং পার্কটিও ধ্বংস হবে এবং পরিবেশ বিপর্যস্থ হবে। 
 
অন্যান্য বক্তারা বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় খেলার মাঠ, পার্ক থাকা অত্যাবশ্যক। এলক্ষ্যে যেসব সংস্থার নতুন নতুন খেলার মাঠ, পার্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব তারাই বিদ্যমান খেলার মাঠ, পার্কগুলো দখল করে চলেছে এবং অন্য সংস্থার স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর খেলার মাঠ, পার্ক , লেক নগরবাসীর সম্পদ। তাই ইচ্ছা করলেই যেকোন সংস্থা তা দখল বা অন্য সংস্থাকে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে না। সিটি করপোরেশনসহ যেকোন সেবা প্রদানকারী সংস্থার কোন স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজন হলে তারা জমি ক্রয় বা বাজার মূল্য প্রদান করে তা হুকুম দখল করতে পারে।  এটা খুবই দুঃখজনক যে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিজেই ঢাকার মূল্যবান পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বিষয়ে সচেতন নয়। সিটি করপোরেশনের পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানে আরো কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবেই ছোট ও মাঝারি আকারের পার্ক , খেলার মাঠ ও উম্মুক্ত স্থান বলপূর্বক দখলের ঝুকিতে রয়েছে। দ্রুত নগরায়নের সাথে সাথে খোলা জায়গার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে একটি আদর্শ নগরীর জন্য ২৫% খোলা এলাকা রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পুরানো ঢাকায় ৫% এবং নতুন ঢাকায় ১২% এলাকা সবুজ ও খোলা (ঢাকা শহর কাঠামো পরিকল্পনা ১৯৯৫)। ঢাকা স্ট্রাকচার প্লানে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ২০% খোলা এলাকা রাখা হয়েছে (ডিএমডিপি ১৯৯৫)। কিন্তু বাস্তবে এলক্ষ্যে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। বরং এসব এলাকা সরকারি ও বেসরকারিভাবে দখলের ফলে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। 
 
সর্বক্ষণ কর্মব্যস্ত ঢাকাবাসীর একমাত্র বিনোদন স্থান ঢাকার পার্কগুলো। ঢাকা মহানগরীতে বেশ কয়েকটি পার্ক রয়েছে, যেমন রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিশু পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা  গার্ডেন, চন্দ্রিমা উদ্যান, গুলশান পার্ক, রোজ গার্ডেন, ওসমানী উদ্যান, ওয়ান্ডারল্যান্ড, জাতীয় চিড়িয়াখানা, বাহাদুর শাহ পার্ক, জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ প্লাজা, জাতীয় প্যারেড স্কয়ার, যাত্রাবাড়ি পার্ক (অংশ বিশেষে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে), টিকাটুলি পার্ক (সিটি করপোরেশন কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করেছে), হাজারিবাগ পার্ক, গুলিস্থান পার্ক, পান্থকুঞ্জ পার্ক, মুক্তাঙ্গন পার্ক, আনোয়ারা উদ্যান, লালবাগ কেল্লা, নবাবগঞ্জ পার্ক, ইত্যাদি। ধানমন্ডি লেক, ক্রিসেন্ট লেক, গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক, উত্তরা লেক, হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি লেক। ধুপখোলা মাঠ, বাংলাদেশ মাঠ, বাসাবো খেলার মাঠ, মাদারটেক খেলার মাঠ, আরমানিটোলা মাঠ, ধানমন্ডি মাঠ, কলাবাগান মাঠ, শ্যামলী মাঠ। পার্ক ও বিনোদন স্থানগুলো প্রায় সব সময়ই জনাকীর্ণ  থাকে।
 
নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে  ঈদের জামাত, সামাজিক ও ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্কটি ২৩ নং ওয়ার্ড-এ সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত কোরবানীর জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ২৩ নং ওয়ার্ড ও এর আশেপাশে নবাবগঞ্জ সাত শহীদ কমিউনিটি সেন্টার, আজিমপুর মিনি কমিউনিটি সেন্টার, হাজারীবাগ কমিউনিটি সেন্টার, ঢাকা কনভেনশন সেন্টার, ম্যাটাডোর কনভেনশন সেন্টার, রহমত উল্যাহ্ স্কুল কমিউনিটি সেন্টার, আমলিগোলা কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের আশেপাশের ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডে কোন পার্ক নেই। ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের এক মাত্র পার্ক “নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক”-এ কোন অবস্থায় কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এছাড়া পার্কটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা আবশ্যক।
 
করণীয়
 
১. শিশু-কিশোরদের  শারিরীক ও মানসিক বিকাশ, সর্বস্তরের জনগণের স্বাস্থ্য, কল্যাণ ও মঙ্গল এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক সংরক্ষণ করা। 
২. সিটি করপোরেশনসহ যেকোন সেবা প্রদানকারী সংস্থা কর্তৃক নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকা।
৩. পার্কটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা
৪. শিশু পার্কের দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার করা।
৫. জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ঢাকা মহানগরীতে আরো পার্ক, খেলার মাঠ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। 
৬. পার্ক, খেলার মাঠ ও লেক সংরক্ষণ এবং পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগ করা।
৭. পার্ক, খেলার মাঠ ও লেক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।