পানি সংকট মোকাবেলায় প্রকৃতিকে গুরম্নত্ব দেয়ার আহ্বান
পানি সংকট মোকাবেলায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানে সর্বাধিক গুরম্নত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। বুধবার পবা কার্যালয়ে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে 'পানি সংকট মোকাবেলায় প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের গুরম্নত্ব' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়।
 
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, বর্তমান বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ, যা ২০৫০ সালে ১ দশমিক ৬ বিলিয়নে দাঁড়াবে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষ ভূমিক্ষয় ও মরম্নকরণ প্রক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত এবং কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ বনভূমি ক্ষয়িষ্ণু পর্যায়ে রয়েছে।
 
 
মানুষের কর্মকা-ের ফলে ১৯০০ সাল থেকে ৬৪-৭১ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। কৃষিভূমির মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতি বছর ২৫-৪০ বিলিয়ন টন টপসয়েল হারিয়ে যাচ্ছে, যাতে ফলন কমে যাচ্ছে এবং টপসয়েলে প্রচুর পরিমাণে নাট্রোজেন ও ফসফরাস থাকায় তা পানি দূষণে ভূমিকা রাখছে। অবিলম্বে এ দূষণের বিরম্নদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২০৩০ সাল নাগাদ পানি ও স্যানিটেশনের প্রাপ্যতা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব। টেকসই উন্নয়নের অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রেও প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
জাতিসংঘের দেয়া তথ্যানুযায়ী তিনি বলেন, বিশ্বে বর্তমানে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানি সেবা থেকে বঞ্চিত। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্ব জনসংখ্যা ২ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্বব্যাপী পানির চাহিদা ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে কৃষি খাতে ৭০ শতাংশ, যার বেশির ভাগই সেচ কাজে, শিল্প খাতে ২০ শতাংশ বিশেষ করে জ্বালানি ও উৎপাদনে, গৃহস্থালি কাজে ১০ শতাংশ, যার এক শতাংশেরও কম সুপেয় পানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
 
 
অন্য বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, ইত্যাদির বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। এ কারণে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। গড় তাপমাত্রা পরিবর্তন হয়েছে যেকোনো মৌসুমের ক্ষেত্রে, বৃষ্টিপাতের ধরন ও সময় বদলে গেছে।
 
 
এ সময় আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাপকহারে বনায়ন করে বনাঞ্চল সৃজন করা। বনভূমি ও প্রাকৃতিক জলাভূমি পুনরম্নদ্ধার করা। বনভূমি দখল এবং বৃক্ষ নিধনকারীদের বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ নদনদী, বনভূমি, জলাভূমি, পাহাড় প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতিনির্ভর ধান চাষ করা এবং ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরম্নজ্জামান মজুমদার, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।