“পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায়ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠ আইনি কাঠামো চাই”
আজ ৬ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, সকাল ১০.০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর যৌথ উদ্যোগে “ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা”-শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক জনাব এ কে এম মাকসুদ। তিনি তার মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনায় বাংলাদেশের পৌরবর্জ্য ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক; বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত মানুষ ও তাদের অমানবিক জীবন; জাতীয় অর্থনীতিতে বর্জ্যজীবী, ময়লার ভ্যানকর্মী, সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মী ও রিসাইক্লিং কর্মীদের অবদান; পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান আইনি কাঠামো এবং পৌর ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য আইনি কাঠামোতে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী থাকা প্রয়োজন সে বিষয়সমূহ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন। সাথে সাথে “ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকপণ্য হইতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৭” বিষয়ে বর্তমান সরকারের খসড়া আইন প্রণয়ন এবং সে বিষয়ে জনগণের সরাসরি মতামত প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি বিষয়ে বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 
 
সভার বক্তারা বলেন যে, প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের দ্রুত বিকাশ, অতি সস্তায় আকর্ষণীয় ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যালপণ্য ও ইন্টারনেট প্রাপ্তির সুযোগ, নতুন ধরনের পণ্য ব্যবহারের আকর্ষণে দ্রুত পুরোনো ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্যটি ফেলে দেবার প্রবণতা এসব কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ই-বর্জ্য সৃষ্টি দ্রুতহারে বেড়ে চলেছে। এছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বেড়ে চলার সাথে ই-বর্জ্য সৃষ্টির হারও বেড়ে চলে। বাতিল হওয়া কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ফটোকপি মেশিন, মাইক্রোওভেন, ব্যাটারী ইত্যাদি ই-বর্জ্যরে ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এসব বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই, বক্তাগনের মতে অবিলম্বে আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে। 
 
সভায় অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আশিষ কুমার শাহা,পরিচালক (এমআইএস), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ড: আহমেদ কামরুজ্জামান,অধ্যাপক পরিবেশ বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়; পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান;  ড. আব্দুসসালাম, অধ্যাপক, রসায়নবিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়; জনাব সাহাব উদ্দিন, ড. মো: আবদুল মোতালিব, সিনিয়র কেমিষ্ট, পরিবেশঅধিদপ্তর, সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিনসিটিকর্পোরেশন, জনাব মো: জাকির হোসেন, এমআইএস ইন চার্জ, এলজিইডি, প্রকৌশল এ এইচ এমখালেকুররহমান, নির্বাহীপ্রকৌশলী, গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকৌশলীমো: শাহিদুর রহমান, ঢাকা ওয়াসা; জনাব খায়রুজ্জামান কামাল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরাম; জনাব ইমতিয়াজ রসুল, ভাইস চেয়ারম্যান, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি; জনাব খন্দকার রিয়াজ হোসেন, কর্মসূচী পরিচালক, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, আইনজীবি ও পলিসি বিশেষজ্ঞ, ব্যারিষ্টার নিশাত আহমেদ, প্রমুখ।
 
বক্তরা বলেন, ক্রমাগতভাবে ই-বর্জ্য সৃষ্টির হার বেড়ে চলার কারণে আমরা সবাই বাড়ির ডাস্টবিনে, রাস্তাঘাটে, নদী-খাল-ড্রেনে বা খোলা জায়গায় ই-বর্জ্য ফেলছি। দেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন আইন না থাকায়, ই-বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার ক্ষতি সম্পর্কে জন সচেনতার অভাবের কারণে ও ই-বর্জ্য সম্পর্কিত দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অতি লোভের কারণে মানুষ ও পরিবেশ আজ মারাতœক ঝুঁিকর মুখে। 
 
আলোচনা সভায় জাননো হয়, ২০১২ সালে পৃথীবিতে ৪৫.৬ মিলিয়নটন ই-বর্জ্য সৃষ্টিহয়েছে।আমেরিকাতারসৃষ্টই-বর্জ্যরে শতকরা ৮০ ভাগই দরিদ্র উন্নয়নশীল দেশে ফেলে আসে বা রপ্তানী করে দেয় যেগুলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকেরা স্বাস্থ্য ও পরিবশেগত ঝুঁকি নিয়ে পুনচক্রায়ন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। প্রতি বছর বিশ্বে এই ই-বর্জ্য শতকরা ৫-১০% হারেবাড়ছেএবং এই বর্জ্যরে শতকরা ৫ ভাগের বেশী পুনরুদ্ধার করা যায় না। মানুষ ও পরিবেশের জন্য বর্জ্যওে ক্ষতিকর প্রভাবের কারণেই এখন আইন কওে নিয়ন্ত্রিতভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে সঠিকভাবে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার একটি খসড়া বিধিমালা তৈরী করেছে।  এই প্রেক্ষাপটেই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিদ্যমান আইনি কাঠামো, সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকপণ্য হইতে সৃষ্টবর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ এবং বাংলাদেশের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নয়নে এবং টেকসই ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভবিষ্যতে কী ধরনের আইনি কাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়ে সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট ও সুুচিন্তিত মতামত প্রয়োজন যা বাংলাদেশেরই-বর্জ্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার আইনি কাঠামো যুগোপযোগীকরণে এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক ভূূূমিকা পালন করবে। সেই প্রেক্ষিতে আজকের আলোচনা সভায় বক্তারা দ্রুত খসড়া ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিকপণ্য হতে সৃষ্টবর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭ এবং পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্ত করার জোর তাগিদ দেন। 
 
 
সুপারিশমালা
 
১. দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্তকরণ প্রয়োজন।
২. দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্তকরণ প্রয়োজন।
৩. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ই-বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার আওতায় এনে তাদের স্বাস্থ্য ও জীবিকা সুরক্ষা করা প্রয়োজন।
৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জন সচেতনতা ও জনদায়িত্ববোধের সৃষ্টি করা 
৫. ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী উৎপাদকদের দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা পালন।
৬. পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ই-বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত আইন ও বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ।