পার্ক-মাঠে কমিউনিটি সেন্টার বা কোনো স্থাপনা নয় নবাবগঞ্জ শিশুপার্কে বহুতল ভবনের নামে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বন্ধ কর
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর ২৩ নং ওয়ার্ডস্থ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একমাত্র পার্ক নবাবগঞ্জ পার্ক। পার্কটি দখল করে কমিউনিটি সেন্টারের নামে বহুতল ভবন স্থাপন করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন ও মিডিয়ায় প্রচার অব্যাহত থাকলেও আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-এর মেয়র  বহুতল ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছেন। সেবামূলক স্থাপনা গুলোর মধ্যে ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু ঢাকায় যেখানে খোলা জায়গার সংকট সেখানে কখনোই পার্ক-মাঠের জায়গা দখল করে এধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সেন্টার, পাঠাগার ইত্যাদি সেবামূলক স্থাপন করতে হলে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বাণিজ্যিক বিভিন্ন ভবনে কিংবা অন্যত্র বিকল্প পদ্ধতিতে তৈরি করতে পারে। অতএব, নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পরিবর্তে ডিএসসিসি এলাকার সকল পার্ক, মাঠে কোনো স্থাপনা নয়, বরং সেগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে মর্মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রের ঘোষণা দাবী প্রত্যাশা করছি।
কমিউনিটি সেন্টার যদি করতেই হয় তবে পার্ক, মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ ও রাজউকের মাস্টারপ্ল্যান ও ইমারাত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে করতে হবে। প্রকল্পটি জনসম্মুখে প্রকাশ ও যথাযথভাবে গণশুনানির এছাড়াও পার্কটিকে সংরক্ষণ করে পরিবেশ অধিদপ্তরর ও রাজউকের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এ দাবী পূরণ না হলে আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আজ ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, সকাল ১১ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-সহ মোট ১৯টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে “পার্ক-মাঠে কমিউনিটি সেন্টার বা কোনো স্থাপনা নয়; নবাবগঞ্জ শিশুপার্কে বহুতল ভবনের নামে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বন্ধ কর”-দাবীতে মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, নাসফ-এর সাধারণ সম্পাদক তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, পবা’র সদস্য মো. সেলিম, মো. আকবর, ডাব্লিউবিবি-ট্রাস্ট এর কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, নোঙর-এর সভাপতি সুমন শামস, বানিপা’র সভাপতি ইঞ্জি. আনোয়ার হোসেন, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুমন মাহমুদ, ঐবাঁক-এর আহ্বায়ক নূরিতা নুসরাত খন্দকার প্রমুখ। 
 
বক্তারা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  রার্ষ্টের দায়িত্ব বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা। রাষ্ট্রের একটি সংস্থা ডিএসসিসির নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ আইন অনুযায়ী পার্ক হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জায়গার ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ মোতাবেক কর্পোরেশনের কাজ হচ্ছে নগরীতে সর্বসাধারণের সুবিধা ও চিত্ত-বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যান নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, উদ্যান উন্ন্য়নের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। যেখানে কর্পোরেশনের কাজ হচ্ছে পার্ক নির্মাণ করা, সেখানে তারা বিদ্যমান পার্ক, খেলার মাঠ প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
 
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী  কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল “নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক" সম্পর্কে ইনডিপেডেন্ট পত্রিকাকে বলেন, এটি শিশু পার্ক নয়। এখানে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং কিছু খোলা জায়গাসহ অন্যান্য কাঠামো রয়েছে। স্থানীয়দের সাথে আলোচনার পর ডিএসসিসি একটি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার এবং একটি বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। তবে, ডিএসসিসি কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না যদি নগরবাসী তা না চায় (ইনডিপেডেন্ট, ৪/২/২০১৮)। তিনি কালের কন্ঠকে বলেন, ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্কটি আধুনিক করা হচ্ছে। এখানে আগে থেকেই কিছু স্থাপনা ছিল। কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হলে মানুষের উপকার হবে (কালের কন্ঠ, ৪/২/২০১৮)। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্ববিরোধী বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট যে প্রস্তাবিত আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার এবং বহুতল ভবন নির্মাণের স্থানটি একটি পার্ক। ডিএসসিসির ওয়েব সাইটে ২৭টি পার্কের উল্লেখ রয়েছে। যার একটি হচ্ছে নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক। ডিএসসিসির বক্তব্য অসত্য এবং এধরনের বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে ডিএসসিসি বিরত থাকবে এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা।
“নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক” পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় অত্যনÍ গুরুত্বপূর্ণ। এ পার্কে কোনো অবস্থায় কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এবং পার্কে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পার্কটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। 
 
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ঢাকার অনেক গুলো পার্ক ও উম্মুক্ত স্থান ইতোমধ্যে গ্রাস করেছে, যেমন- টিকাটুলি পার্ক, উত্তরা ১ নং সেক্টর পার্ক, মোহাম্মদপুরস্থ শহীদ পার্ক, আজিমপুর পার্ক ইত্যাদি। এছাড়াও অনেকগুলো পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের অংশবিশেষ ওয়াসার পাম্প স্টেশন, সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টার, কমিশনারের অফিস, ক্লিনিক ইত্যাদির জন্য দখল করা হয়েছে, যেমন-নবাবগঞ্জ পার্ক, যাত্রাবাড়ি ক্রসিং পার্ক, নয়াটোলা শিশু পার্ক, লালমাটিয়া নিউ কলোনী পার্ক, পান্থকুঞ্জ, সলিমুল্লাহ রোড মাঠ ইত্যাদি। এটা খুবই দুঃখজনক যে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ নিজেই ঢাকার মূল্যবান পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানের বিষয়ে সচেতন নয়। সিটি করপোরেশনের পার্ক ও উম্মুক্ত স্থানে আরো কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবেই ছোট ও মাঝারি আকারের পার্ক, খেলার মাঠ ও উম্মুক্ত স্থান বলপূর্বক দখলের ঝুঁকিতে রয়েছে। 
 
নবাবগঞ্জ পার্কে  ঈদের জামাত, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পার্কটি ২৩ নং ওয়ার্ড-এ সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত কোরবানীর জায়গা হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ২৩ নং ওয়ার্ড ও এর আশেপাশে নবাবগঞ্জ সাত শহীদ কমিউনিটি সেন্টার, আজিমপুর মিনি কমিউনিটি সেন্টার, হাজারীবাগ কমিউনিটি সেন্টার, ঢাকা কনভেনশন সেন্টার, ম্যাটাডোর কনভেনশন সেন্টার, রহমত উল্যাহ্ স্কুল কমিউনিটি সেন্টার, আমলিগোলা কমিউনিটি সেন্টার থাকা সত্ত্বেও ডিএনসিসি নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে মূলত কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের নামে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগ এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়সহ এলাকাবাসী  বিশেষ করে  শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হুমকীর মুখে ঠেলে দিবে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ডের আশেপাশের ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডে কোন পার্ক নেই। সুতরাং ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের এক মাত্র পার্ক “নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক”-এ কোন অবস্থায় কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। 
 
দাবীসমূহ:
 
ক্স সিটি করপোরেশনসহ যেকোন সেবা প্রদানকারী সংস্থা কর্তৃক নবাবগঞ্জ শিশু পার্কে বহুতল ভবনের নামে কমিউনিটি সেন্টার বা অন্য কোন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ কর।
ক্স শিশু-কিশোরদের  শারিরীক ও মানসিক বিকাশ, সর্বস্তরের জনগণের স্বাস্থ্য, কল্যাণ ও মঙ্গল এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিবেচনায় নিয়ে নবাবগঞ্জ শিশু পার্ক সংরক্ষণ কর। 
ক্স সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইতোপূর্বে নির্মিত বিভিন্ন ভবনে পর্যাপ্ত পরিমানে লাইব্রেরী, ব্যায়ামাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি কর।
ক্স পার্কটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিশু-কিশোর ও সর্বস্তরের জনগণের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোল।
ক্স নবাবগঞ্জ শিশু পার্কের দখলকৃত অংশ পুনরুদ্ধার কর। জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ঢাকা মহানগরীতে আরো পার্ক, খেলার মাঠ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ কর। 
ক্স পার্ক, খেলার মাঠ ও লেক সংরক্ষণ এবং পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগ কর।
ক্স পার্ক, খেলার মাঠ ও লেক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত কর।