বিষমুক্ত নিরাপদ মৌসুমী ফল চাই
এসেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে মধুমাসের আম, লিচু, জাম, আনারস, কাঁঠাল ইত্যাদি সুস্বাদু ও তৃপ্তিদায়ক সব ফল। মৌসুমী ফল মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু মধুমাসের নিরাপদ মৌসুমী ফলের প্রাপ্তি নিয়ে জনমনে শংকা কাটছে না। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি মৌসুমী ফলের উৎপাদন, বিপনন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ করা হয়। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অত্যধিক ও নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক ও জনগণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বিষ ও ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যপ্রদ মৌসুমী ফল নিশ্চিত করতে সকল কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আজ ২০ মে ২০১৭, শনিবার, সকাল ১০.৩০ টায় শাহবাগস্থ চারুকলা অনুষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ স্কাউট ও গাইড ফেলোশীপ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, নাসফ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, পল্লীমা গ্রীণ, ইয়ুথ সান এবং মডার্ণ ক্লাব আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়। 
 
পবা’র সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান-এর সভাপতিত্বে ও পবার যুগ্ম সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ-এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজীজ, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ-এর সভাপতি আমির হাসান, বাংলাদেশ স্কাউট ও গাইড ফেলোশীপ-এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আকবর রেজা, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণের সভাপতি হাবিবুর রহমান, পবা’র সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, পবা’র সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
 
পবা’র সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান তার বক্তব্যে বলেন, প্রথমত ভোক্তা আইন ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৫ জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় সঠিক প্রয়োগ নেই। এই আইন গুলোর আওতায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন হয়। সার্বিকভাবে এই সংগঠনগুলোর কার্যক্রম হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বি এস টি আই, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের উপরোক্ত বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যান্য বছর এই সংস্থা গুলোর এই সময় উপরোক্ত কার্যক্রম গুলো পরিলক্ষিত হলেও দুঃখজনক ভাবে এবছর এখন পর্যন্ত কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষ বিষ ও ভেজালমুক্ত নিরাপদ ফল প্রাপ্তির বিষয়ে শঙ্কিত। বিভিন্ন এলাকাভেদে বিভিন্ন জাতের আম তথা গোপালভোগ , হিমসাগর, লেংড়া, হাড়িভাঙ্গা, ফজলী, আ¤্রপলি ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময় পরিপক্ক হয়। পরিপক্ক হওয়ার পর সেই আমগুলো সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হলে কোন রাসায়নিক প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। গত বছর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে এ বিষয়টির তদারকি করে। মানববন্ধনে এবছরও একই উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে উদাত্ত আহবান জানানো হয়।
তিনি আরও বলেন, শিশুসহ গর্ভবতী মা ও সর্বস্তরের জনগণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থাগুলোর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহবান জানানো হয়।
 
অন্যান্য বক্তারা বলেন-ফলমূল, খাদ্যে বিষ ও ভেজালের মিশ্রণ চরম আকার ধারণ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে জনস্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী নানা রকম রোগে বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়া, ক্যান্সারসহ নানা রকম ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর চাপ পড়ছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নিরাপদ খাবার উৎপাদন, বিপনন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর সমন্বিত ও কার্যকরী প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
 
এছাড়াও বক্তাদের বক্তব্যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬, পেষ্টিসাইড অর্ডিনেন্স ১৯৭১, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫, বিএসটিআই (সংশোধিত) আইন, ২০০৩, বিশুদ্ধ খাদ্য (সংশোধিত) আইন, ২০০৫, মোবাইল কোর্ট অডিনেন্স ২০০৯, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ ইত্যাদি আইনগুলোর কথা উঠে আসে যেগুলোর যথাযথ ও সমন্বিত প্রয়োগ নেই।
 
 
সুপারিশসমূহ-
 
১. খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি উৎপাদন থেকে যোগানের প্রতিটি ধাপে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
২. খাদ্যে ক্ষতিকর সকল ধরণের রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৩. নিরাপদ খাবার তৈরী, বিপনন ও বিক্রি এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর যথাযথ ও সমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। 
৪. প্রতি জেলায় খাদ্য আদালত স্থাপন এবং জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা।
৫. প্রতিটি জেলায় কৃষি আদালত গঠন করা।
৬. সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৭. সময়োপযোগী কীটনাশক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা ।
৮. দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করা।
৯. খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা।
১০. দেশে জৈব কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন ও একে জনপ্রিয় করে তোলা।