পরিবেশসম্মত উন্নয়ন ভাবনা আসন্ন বাজেট ও বাজেট ব্যবস্থাপনা
পরিবেশ দূষণ এবং তার প্রেক্ষিতে সমস্যা বর্তমানে সময়ে সকলেরই একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে শুধুমাত্র আইন বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। উন্নয়ন কাজের সাথে দূষণে একটি নিবিঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তাই  দূষণ রোধের কাজটি বাজেট ব্যবস্থাপনায় অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। আজ ২৯ মে ২০১৭, সোমবার, সকাল ১১.০০টায়  পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিমত জানানো হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান-এর সভাপতিত্বে বৈঠকের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পবা’র সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব আলম তাহিন, সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, এম এ ওয়াহেদ, ব্যারিস্টার নিশাত, সদস্য রাজিয়া সামাদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসাইন, মডার্ণ ক্লাব-এর সভাপতি আবুল হাসানাত, , আমিনুল ইসলাম সুজন, আলহাজ্ব সৈয়দ সাগিরুজ্জামান শাকীক, মো. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
 
গোলটেবিল বৈঠকের সভাপতি পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, প্রতি বছর বাজেটের আকার বাড়লেও জনগণ বাজেটের কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- বাজেট জনবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব নয়, যথাযথ পরিকল্পনার অভাব এবং যারা বাজেট প্রণয়ন করেন তাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের অভাব। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো মৃতপ্রায়। এগুলো দখল-দূষণে জর্জরিত। এক সময় ঢাকা ওয়াসা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি নগরবাসীকে সরবরাহ করতো। বুড়িগঙ্গা দূষিত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় শীতলক্ষ্যার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যা নগরবাসীর চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। ৭০০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর প্রতি বছর প্রায় দশ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। ঢাকা নগরীর পানির চাহিদার ৭৮ শতাংশ ভূগর্ভস্থ এবং ২২ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা থেকে ৪৫০ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। একইভাবে মেঘনা থেকে ৫০০ মিলিয়ন লিটার সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প দুটির প্রক্কলিত ব্যয় দিয়ে সিইটিপি’র মাধ্যমে ঢাকার চারপাশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য এবং পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব। এর ফলে, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো দূষণমুক্ত থাকবে এবং এ নদীগুলোর পানি ঢাকাবাসীর জন্য সরবরাহ করা সম্ভব। যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার-লেনের সুফল থেকে আমরা জনগণ বঞ্চিত। চার-লেন পরিকল্পনাকালে তিনটি সেতু (কাঁচপুর, মেঘনা ও দাউদকান্দি) চার-লেন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে গৃহীত উদ্যোগের ফলে সেতু তিনটি ২০২১ সাল নাগাদ চার-লেনে উপনিত হবে। ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত জনগণকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
 
সরকার জলবায়ূ তহবিলে ২০০৯-২০১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ অর্থ বছরে প্রতি বছর ৭০০ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থ বছর ৪০০ কোটি, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ অর্থ বছওে প্রতি বছর ২০০ কোটি, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ অর্থ বছওে প্রতি বছর ১০০ কোটি করে জলবায়ূ তহবিল গঠন করে। এ তহবিলের অর্থ প্রতি অর্থ বছরে বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে নি¤œগামী। বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ব্যবহারের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি থাকায় বরাদ্দ কমতে থাকে।
 
দক্ষ জনবল তৈরীতে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত বিদেশীদের জন্য বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। বিভিন্নখাতে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের প্রায় ৬০ হাজার দক্ষ জনবল বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে। এতে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্্রা ব্যয় হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ সকল জনবল তৈরী করতে আসন্ন বাজেটসহ আগামী বাজেটে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান মূল প্রবন্ধে নি¤েœাক্ত বিষয় নিয়ে স্ব-বিস্তারে আলোচনা করেন-
মন্ত্রণালয় বা খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা (প্রকল্প নয়)
বিভিন্ন সেক্টরের উচিত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টর, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক উন্নয়নের সাথে সিনক্রোনাইজ করে বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর ভিত্তিতে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। প্রতিটি সেক্টরাল পরিকল্পনা সকল সেক্টর, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং সর্বসাধরণের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত হবে। সর্বোপরি পার্লামেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করবে। এই সেক্টরাল পরিকল্পনা হবে অধিনস্ত বিভিন্ন বিভাগ এবং সংস্থার পরিকল্পনার ভিত্তিতে। এই পরিকল্পনা কোন পরামর্শক ফার্ম বা পরামর্শক তৈরি করবে না। তৈরি করবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা সংস্থার স্থায়ী কাঠামো। যারা পরিকল্পনা প্রণয়নে কেবল নয় বাস্তবায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পরামর্শক প্রয়োজনে সহায়তা করবে।  
 
কর্মপরিকল্পনার সময়ভিত্তিক রোড়ম্যাপ থাকতে হবে
প্রকল্প ব্যবস্থাপকগণের প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন না করে কিভাবে সুযোগ-সুবিধা, খরচ ও সময় বাড়ানো যায় তার দিকে বেশি নজর থাকে। প্রকল্প প্রথা বর্জন করে বা সর্বনিন্ম  পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক উন্নয়ন সংস্থা একটি মহাপরিকল্পনা করবে। এখানে শুধু প্রকল্পের তালিকা নয়। এখানে নির্ধারিত সময়ে কি অর্জন করবে, কিভাবে অর্জন করবে, এটা অর্জনে বর্তমান সক্ষমতা এবং কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে কি ধরণের সক্ষমতা প্রয়োজন, সেই সক্ষমতা অর্জনে করণীয় ইত্যাদি সহ একটি বিস্তারিত রোড়ম্যাপ জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। এই রোড়ম্যাপেই বাজেট বরাদ্দ এবং প্রকল্প প্রস্তাবনা থাকবে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ থাকতে হবে। মহাপরিকল্পনায় কোন কাজে কিভাবে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করবে। 
 
ইপিএমডি (এনভায়রনমেন্ট, প্ল্যানিং এন্ড মনিটরিং ডিপার্টমেন্ট) 
বর্তমান বাস্তবতার ভিত্তিতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিভিন্ন উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয়ের/অধিদপ্তরের ‘পরিকল্পনা সেলটি’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এর জন্য পরিকল্পনা সেলটিকে আপগ্রেড করে পরিবেশ, পরিকল্পনা ও মনিটরিং বিভাগ করা যায়। 
 
পরিবেশ মহাকর্মপরিকল্পনা
পরিবেশ সংরক্ষণ ও ইকোসিস্টেম ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে যুক্ত করে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন রোড়ম্যাপ তৈরি করতে হবে। এই মাষ্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ হবে। সেজন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সার্বক্ষণিক সমন্বয় সাধন করতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এ কাজটি করার জন্য সক্ষম করে তুলতে হবে। বিদেশে ট্রেনিং, কনসালটিং ফার্ম দিয়ে এ কাজটি করলে মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে না। শুধুমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই সমন্বয় করা সম্ভব নয়। এর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নয় রেভিনিউ বাজেটে এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।  
 
পরিবেশ মহাপরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন দূষণ যেমন শব্দ, বাতাস, মাটি, পানি শিল্প দূষণরোধে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার রোড়ম্যাপ তৈরি ও বাস্তবায়ন করবে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। 
 
স্থানীয় পরিকল্পনা
১. জেলাভিত্তিক ও পৌরসভা ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কাঠামোর শক্তিশালী করা
২. উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কাঠামো তৈরি করা
 
ইকোসিস্টেমভিত্তিক ও এলাকাভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা
ইকোসিস্টেম ভিত্তিক পরিকল্পনাকারী ও ব্যবস্থাপক তৈরীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারী ডিপার্টমেন্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। 
 
ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
সারাদেশের ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে “ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়” করা।
 
সামাজিক ও পরিবেশগত অডিট
কস্ট বেনিফিট মূল্যায়ন অডিটে শুধু আর্থিক দিকটি নয় এর সাথে সামাজিক ও পরিবেশগত দিকটি বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা। 
 
দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান সম্পদের সঠিক ব্যবহার
আমাদের দুষ্প্রাপ্য মূল্যবান সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সম্পদভিত্তিক ব্যবহার পরিকল্পনা থাকতে হবে। 
 
নদী জলাধান রক্ষা
দেশের নদী-জলাধারের দূষণ বন্ধে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 
 
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
প্রতিটি নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গৃহস্থালি বর্জ্যকে সম্পদে রুপান্তর এবং অন্যান্য  বর্জ্য বিশেষ করে হাসপাতাল বর্জ্যের যথাযথা ব্যবস্থাপনা করতে হবে। 
 
মহানগরীসহ সকল পৌরসভার ত্রিমাত্রিক জরিপ ও মহাপরিকল্পনা ঃ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমাদের সেবা সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়। যেমন পানি বিদ্যুৎ গ্যাসের সংযোগ মেরামতে একেক সংস্থা একেক সময় রাস্তা খুড়াখুড়ি করছে। এই বিড়ম্বনা লাঘবে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহানগরীদ্বয়সহ সারাদেশের পৌরসভার ভূ-গর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ সকল অবকাঠামো ও সম্পদের জন্য ত্রিমাত্রিক জরিপ করা এবং এর ভিত্তিতেই সকল ভৌত অবকাঠামোর মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। অন্য সকল অবকাঠামো ও উন্নয়ন পরিকল্পনা এই মহাপরিকল্পনার ভিত্তিতেই করা।
 
সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা
বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি, তলদেশ ও উপকূলের সব প্রাণিজ ও খনিজসম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণের জন্য সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং সমুদ্র সম্পদের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
 
করারোপ করা
১. গ্রীন ট্যাক্স আরোপ: ঢ়ড়ষষঁঃবৎং ঢ়ধু ঢ়ৎরহপরঢ়ষব প্রবর্তন।
২. এসি ব্যবহারকারী, বিলবোর্ড-এর  ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহারপূর্বক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের সমপরিমাণ হারে বিদ্যূৎ বিল নির্ধারণ করা।
৩. সিএনজি চালিত প্রাইভেট কারের  ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা।
 
প্রণোদনা প্রদান 
১. শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে পুনঃ ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রণোদনা প্রদান করা।
২. সিএসআর-এর আওতায় পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে এবং অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনাকারীদের প্রণোদনা প্রদান করা।
 
পরিবেশ সংরক্ষণ: 
১. পরিবেশ অধিদপ্তর: পরিবেশ আইন অনুসারে বায়ু দুষণ, পানি দূষণ, ই-বর্জ্য, শব্দদূষণ, জীববৈচিত্র রক্ষাসহ পরিবেশের নানা সমস্যা সমাধানে  সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে সমন্বয় করে পরিবেশ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ তৈরি করা। এ সকল রোডম্যাপ বাস্তবায়নে রাজস্ব বাজেট হতে বরাদ্ধ প্রদান। পরিবেশ আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে ভিন্ন অন্যান্য প্রকল্পের কার্যক্রমের বরাদ্ধ ও বাজেট সীমিত করা। 
২. পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মূল কার্যক্রম নীতি নির্ধারণ, পরিবেশ দুষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সম্মত উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়, পরিবেশ আইন বাস্তবায়নসহ পরিবেশ সম্মত কার্যক্রমের বিষয়গুলো মনিটরিং ও  প্রয়োজনীয় নীতিগত সহযোগিতা প্রদান। এ লক্ষ্যে বাস্তবায়নে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিদ্যমান আইন ও এসডিজি অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের আইন,নীতি, প্রকল্প ও কার্যক্রম পরিবেশ সম্মত হিসেবে গড়ে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা।এ রোডম্যাপ বাস্তবায়নেই পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মূল বরাদ্ধ থাকা করা উচিত। 
৩. পরিবেশ আইন ও পরিবেশ আদালত আইনের মাঝে অপষ্টতা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগের অভাবে পরিবেশ আদালতে কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারছে না। পরিবেশ আদালতের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আদালতের মাঝে সমন্বয় জোরদার করার লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ ও বরাদ্ধ বৃদ্ধি। 
৪. শিল্পবর্জ্য, ই-বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ, বাস্তবায়নে বরাদ্ধ প্রদান। 
 
 
নগরায়ান
অপরিকল্পিত নগরায়ন ও নাগরিক সুবিধাদি না থাকার কারণে অধিকাংশ নগরগুলোআজ ইটপাথরের বস্তিতে পরিণত হচ্ছে। যা সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সার্বিক পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে। 
 
১. সম্প্রতি মন্ত্রী সভায় অনুমোদিত নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইনটি বাস্তবায়নেস্থানীয় সরকারসমুহে স্থানীয়ভাবেপরিকল্পনা প্রণয়ন ও মনিটরিং দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রতিটি স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ গঠন বা সক্ষমতা বৃদ্ধিতেপর্যাপ্ত বরাদ্ধ প্রদান। 
২. অধিগ্রহনের মাধ্যমে বিশেষ শ্রেণীর জন্য উপশহর, আবাসন প্রকল্প গ্রহণে প্রেক্ষিতে কিছু লোক লাভবান হয় যা অসংবিধানিক ও অনৈতিক। রাজউক, চাউকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের এ ধরনের প্রকল্পে কোন ধরনের বরাদ্ধ না দেয়া। 
৩. রাজউক, চাউকসহ অন্যান্য এ সকল কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনা, মনিটরিং ব্যতীত অন্য যে কোন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্ধ প্রদান না করা। 
৪. অপরিকল্পিত ও অসমন্বিত প্রকল্পের কারণে জনদূর্ভোগ, পরিবেশ দুষণ, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এ সকল প্রকল্পগুলোর সমন্বয়ের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে ব্যবস্থাকে দ্রুত ডিজিটালাইজ করা। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে ত্রিমাত্রিক ডিজিটাল জরিপ ও মহাপরিকল্পনা তৈরি করা। এ পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্ধ।
 
কৃষি ব্যবস্থা:   
কৃষি জমি রক্ষায় উদ্যোগ ও খাদ্যে স্বয়ং সর্ম্পূণতা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তবে এ পর্যায়ে পরিবেশ সম্মত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত ক্রমান্বয়ে কৃষি রপ্তানী বৃদ্ধি পাচ্ছে এ অবস্থায় অর্গানিক কৃষি ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার না দিলে আন্তর্জাতিক বাজার হুমকির সম্মুখীন হবে।
১. কৃষি বিভাগের জৈব্য সার ব্যবহার, সমন্বিত বালাই নাশক (আইপিএম)কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরাদ্ধ বৃদ্ধি;  
২. আরবান কৃষি বৃদ্ধিতে প্রকল্প গ্রহণ করা; 
৩. কৃষকের উৎপাদিত ফসল স্থানীয়ভাবে সংরক্ষনের লক্ষ্যে কোল্ডস্টোরেজের সংখ্যা বৃদ্ধি করা; 
৪. খাদ্য জমি রক্ষায় তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; 
৫. শহরের জৈব বর্জ্যকে কৃষিতে সার হিসেবে ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্ধ প্রদান;
৬. অর্থনৈতিক অঞ্চল যেন পরিবেশ ও কৃষি জমির ক্ষতি না করতে পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; 
 
যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা
২০৪০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি হবে। উন্নত দেশ হিসাবে প্রায় ১২ কোটি মানুষ নিত্যদিনের কাজে নিয়মিত কর্মস্থলে যাতায়াত করবে। তাছাড়া অর্থনীতির আকার ও জাতীয় আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের সম্পসারনের ফলে মালামাল পরিবহনের ক্ষমতা প্রায় ২০-৪০ গুন বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে। দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এই বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের যাতায়াত চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে সারাদেশের “রেলকেন্দ্রিক সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথের একটি স্বমন্বিত মানুষ ও পণ্য পরিবহন মহাপরিকল্পনা” প্রণয়ন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য রোড় ম্যাপ তৈরী করতে হবে। যা নগর, অঞ্চল ও সারাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিবেচিত হবে। 
 
রেল মহাপরিকল্পনা
রেলের মাষ্টারপ্ল্যান অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্নভাবে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রেল উন্নয়নে মাষ্টারপ্ল্যান আপগ্রেড করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা। রেলকেন্দ্রিক সমন্বিত যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা কোন কনসাল্টিং ফার্ম দিয়ে তৈরী নয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে দিয়েই তৈরী করতে হবে। একই সাথে মন্ত্রণালয়ের/দপ্তর সমূহের আলাদা আলাদা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও চলতে থাকবে। এজন্য মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহের “পরিবেশ, পরিকল্পনা ও মনিটরিং বিভাগের” সক্ষমতা (প্রকৃত) বৃদ্ধি করতে হবে। এবারের বাজেটই এই যোগাযোগ  মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যোগাযোগ মহাপরিকল্পনার আওতায় রোডম্যাপ অনুসারে বাৎসরিক উন্নয়ন বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হয়। 
 
রেল সংক্রান্ত সুপারিশ
১. রেল কেন্দ্রিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে; 
২. ডেমু ট্রেন ক্রয়ের মতো অহেতুক অপ্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্ধ বন্ধ করা;  
৩. রেলে অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো সংস্কার ও উন্নয়নে কার্যক্রম কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে ইঞ্জিন,বগি, ওয়াগনের মতো  প্রয়োজনীয় খাতে অর্থ ব্যয় করা যায়; 
৪. জেলা, বিভাগীয় শহরগুলোর সাথে প্রয়োজন অনুসারে চার/আট লেন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহন ও বাজেট বরাদ্ধ;
৫. সাধারণ যাত্রীদের ট্রেনের মান উন্নয়ন করা, লোকাল ট্রেন বৃদ্ধি করা, যা সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবেশ দুষণ হ্রাস করবে;
৬. মালামাল পরিবহনে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বরাদ্ধ প্রদান; 
৭. স্থানীয় কৃষিপন্য রেলে যাতে পরিবহন করতে পারে যে জন্য বরাদ্ধ প্রদান করা;