“ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ”
ঢাকার বিশাল জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপন বহুলাংশে নির্ভর করে সিটি করপোরেশনদ্বয়ের কার্যক্রমের উপর। বসবাসের অনুপোযোগী শহরগুলোর মধ্যে রাজধানী ঢাকা অন্যতম। এ শহরকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ঢাকার দুই মেয়র বিভিন্ন ঘোষণা দিয়েছেন। দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের তাদেও তৃতীয় বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করলেন। এর মধ্যে সময় অনেক গড়িয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে তারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র যানজট মুক্ত সবুজ পরিচ্ছন্ন তিলোত্তমা ঢাকা উপহার দেয়ার অঙ্গিকার করেছিলেন। এখন বাস্তবের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে সেই অঙ্গিকার কতটা  বাস্তবায়ন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা নেই কিংবা সমন্বয়হীনতার কথা বলে একের দায় অন্যের উপর চাপিয়ে পার পাওয়া যাবে না। মানুষজন আসলে ফল দেখতে চায়। একটি বাসযোগ্য ঢাকা নির্মাণে দুই মেয়র কাজ করে যাবেন- এমনই প্রত্যাশা নগরবাসীর। কিন্তু বাস্তবে সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা, যানজট এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবই তাদের কাজের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ-প্রেক্ষিতে “ঢাকা সিটি করপোরেশন-এর বাজেট ও কার্যক্রম পর্যালোচনা”-শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র উদ্যোগে আজ ০৫ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, সকাল ১১টায় পবার নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসানাত, পবা’র সম্পাদক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম তাহিন, ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, পবা’র সহ-সম্পাদক স্থপতি শাহীন আজিজ, এম এ ওয়াহেদ, নিশাত মাহমুদ, সদস্য প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, সাগিরুজ্জামান শাকীক, বানিপা’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র তার সিটি কর্পোরেশন এর বাজেটকে কেন্দ্র করে যে সকল মন্তব্য প্রদান করেন তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় যে, এই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যে সকল উন্নয়ন সাধন করেছেন তা আরো অধিক হারে করা সম্ভব যদি তার সিটি কর্পোরেশন এর জন্য বাজেট-এ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। উপর্যুপরি, বর্তমানে প্রত্যেকটি সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম মেয়র কেন্দ্রিক। শুধুমাত্র একজন মেয়র এর পক্ষে সকল প্রকার পরিকল্পনা, কার্যক্রম ও তদারকি করা সম্ভবপর নয়। অতএব, একটি সিটি কর্পোরেশনের শুধুমাত্র মেয়রের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করে, সমগ্র সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরী বিবেচনায় অবহেলিত এলাকায় আগে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গুলশানের রাস্তা ও ড্রেন তুলনামূলকভাবে ভালো হওয়া সত্ত্বেও সেখানেই আগে কাজ করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের সারফেজ ড্রেনেজ অকার্যকর থাকা জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদী (সারফেজ ড্রেনেজ, ংঃৎড়স ধিঃবৎ ফৎধরহধমব সচল ও ওয়াসার পাম্পগুলো পরিচালনা করা), মধ্য মেয়াদী (বিদ্যমান খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা) এবং দীর্ঘ মেয়াদী বিলুপ্ত খাল সমূহ পূনঃরুদ্ধার করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা। সর্বোপরি, নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো। যাতায়াত সংকট চরম আকার ধারন করেছে। এই সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশনের ভূমিকায় আমরা হতাশ। উত্তরের সিটি করপোরেশন মেয়রের ৪ হাজার নতুন বাস চালু করার উদ্যোগ ছাড়া সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে মেয়রদ্বয়ের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যদিও অনেক প্রকল্প গ্রহণ করার কথা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা সমন্বয়হীনভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারনের ব্যবহৃত মাঠ এবং পার্ক সমূহ ময়লা ট্রান্সফার স্টেশন বা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দরূন জনসাধারনের ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এ সকল মাঠ বা পার্ক সমূহের উপর বিলাশবহুল মার্কেট বা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হচ্ছে। অতএব জনসাধারনের ব্যাবহারের জন্য এ সকল মাঠ বা পার্ক দখল না করে বরং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষনে সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে।
 
প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ভিশন হচ্ছে ঢাকাকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আধুনিক ও যুগোপযোগী নগরী হিসাবে গড়ে তোলা। এ ভিশন বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন দুটির মিশন হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ; নগরীর সৌন্দর্য্য বর্ধন, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ। লেক, খেলার মাঠ, পার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা; জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সমন্বিত ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা; সমন্বনিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে শহরের যানজট নিরসন। সিটি করপোরেশন দুটির নগরবাসীকে সেসব সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেগুলো হচ্ছে রাস্তা, ফুটপাত ও সারফেস ড্রেন মেরামত/ উন্নয়ন ও রাস্তার বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা; রিক্সা/ভ্যানগাড়ি ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন; ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন; মশক নিয়ন্ত্রণ; স্বাস্থ্যসম্মত ফুড ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; সমাজকল্যাণ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা। বাস্তবে সিটি করপোরেশনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেবা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত। 
 
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস: কর  (হোল্ডিং, পরিচ্ছন্ন, লাইটিং), বাজার সালামি, বাজার ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স, রাস্তা খনন ফি, সম্পত্তি হস্তান্তর কর এবং রাজস্ব ব্যয়ের মূল খাত বেতন, পারিশ্রমিক, ভাতা; বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পানি ও গ্যাস; মশক নিয়ন্ত্রণ; কল্যাণমূলক ব্যয়; বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দক্ষিণের বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বাজার সালামিতে ৩১৩.০০ কোটি টাকা যা সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাজার নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়; মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের আওতায় কচুরিপানা/আগাছা পরিস্কার ব্যয় মাত্র ০.৩০ কোটি টাকা, রোড মার্কিংয়ে ১.০০ কোটি, রোড সাইনে ০.৫০ কোটি যা অত্যন্ত কম; ফি খাতে কারিগরি উপদেষ্টা বাবদ ব্যয় ৫৪.২০ কোটি টাকা যা অত্যন্ত বেশি; কল্যাণমূলক ব্যয় খাতে পথবাসী/বস্তিবাসীর জন্য ১৭.০০, হকার প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩.০০, পরিচ্ছন্ন কর্মীর কল্যাণ তহবিলের জন্য ২.০০ কোটি টাকা, সুইপার কলোনীর জন্য ৫৫.০০ কোটি টাকা যা প্রশংসার দাবী রাখে। এছাড়া ফুটওয়ার ব্রীজ ও আন্ডার পাসের জন্য ২৬.০০ কোটি টাকা যা সর্বস্তরের নগরবাসীর জন্য ব্যবহার অনুপযোগী এবং কাজে আসে না।
 
উত্তরের বাজেট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বাজার সালামিতে ১২০.০০ কোটি টাকা যা সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাজার নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়; ফি খাতে কারিগরি উপদেষ্টা বাবদ ব্যয় ২০.০০ কোটি টাকা যা অত্যন্ত বেশি; কল্যাণমূলক ব্যয় খাতে মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিলের জন্য ২২.০০ কোটি টাকা। পরিচ্ছন্নকর্মী, বস্তিবাসীর জন্য সুস্পষ্ট কোন বরাদ্দ নেই। দুই সিটি করপোরেশনই সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকরণ, রাস্তা ও ফুটপাত উন্নয়নের নামে ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন করে যাচ্ছে এবং বিদেশী প্রজাতির গাছ লাগাচ্ছে যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকীস্বরূপ।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের আয় বৃদ্ধিসহ নি¤œবর্ণিত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর (হোল্ডিং, পরিচ্ছন্ন ,লাইটিং)আদায় জোরদার, প্রযোজ্য সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনয়ন, রাস্তায় চলাচলকারী সকল রিক্সার লাইসেন্স প্রদান করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে পরিচালনা করা। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নসহ যানজট হ্রাস পাবে।বাজার নির্মাণের ক্ষেত্রে পুকুর, নি¤œাঞ্চল, ডোবা ভরাট করা যাবে না এবং পর্যাপ্ত পাকিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সর্বস্তরের পথচারীদের চলাচল উপযোগী ফুটপাত নির্মাণ করা।ইন্টারসেকশনসমূহে ফুটওভার ব্রীজ/আন্ডারপাস/ব্রীজের নির্মাণ থেকে বিরত থাকা এবং রোাড মার্কিং ও রোড সাইনসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করা। সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কাজ শেষ হওয়া মাত্রই খননকৃত রাস্তা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সকল ড্রেন ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা।জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ এবং ফুড এন্ড স্যানিটেশন কার্যক্রম জোরদার করা। কমিউনিটি সেন্টার, কাউন্সিলর অফিস ও লাইব্রেরী, সেকেন্ডারী ট্রান্সফার ষ্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোন অবস্থায় পার্ক, খেলার মাঠ, পুকুর, নি¤œাঞ্চল, ডোবা ব্যবহার করা যাবে না। নগরবাসীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা করা এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর আইন প্রয়োগ করা।মিডিয়ান/ ফুটপাত সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ও সবুজায়নের নামে গাছ কাটা যাবে না এবং দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগানো। হাসপাতালের বর্জ্য পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব বর্জ্য সংগ্রহপূর্বক পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবস্থাপনা করা।গণপরিবহনে যাত্রী উঠা-নামার জন্য স্থান নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা এবং এসব স্থানে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা। বিদ্যমান যাত্রী ছাউনিগুলো দখলমুকÍ করে ব্যবহার উপযোগী করা।
 
অন্যান্য বক্তারা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা বলেন, যানজট, জলাবদ্ধতা, ঢাকা ও ঢাকার চারপাশের নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় এবং নি¤œাঞ্চল দখল-ভরাট-দূষণ, পয়ঃ বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য ঢাকা মহানগরীকে মহাবিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে। ধাবিত মহাবিপর্যয় রোধে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ পরিচালনা করা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে দিবে এমনই প্রত্যাশা নাগরিকদের।
 
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কিছুটা উন্নতি হলেও বিদ্যমান বর্জ্য ব্যবস্থানায় মহানগরীর পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকীর মুখে। দৈনিক ৮ হাজার টন বর্জ্যরে মধ্যে মাত্র ৬ হাজার টন বর্জ্য সিটি করপোরেশন ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যায়। তাও পরিবেশসম্মত নয়।  ল্যন্ডফিলের সকল আবর্জনা ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এখানে জনসম্পৃক্ততা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। প্রতিনিয়ত দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং তার সাথে বাড়ছে দৈনন্দিন বর্জ্য। এলাকা ভিত্তিক গার্হস্থ্য বর্জ্যকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা এবং একইসাথে উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসাবে ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন। 
 
বিভিন্ন এলাকায় জনসাধারনের ব্যবহৃত মাঠ এবং পার্ক সমূহ ময়লা ট্রান্সফার স্টেশন বা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দরূন জনসাধারনের ব্যাবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। এ সকল মাঠ বা পার্ক সমূহের উপর বিলাশবহুল মার্কেট বা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হচ্ছে। অতএব জনসাধারনের ব্যাবহারের জন্য এ সকল মাঠ বা পার্ক দখল না করে বরং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষনে সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে।
 
নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে গত বছর ৫ হাজার ৭০০টি মিনি ডাস্টবিন স্থাপন করেছে ডিএসসিসি, কিন্তু তাতেও সফলতা নেই। নির্মাণের কিছুদিন যেতে না যেতেই অধিকাংশ বিন ভেঙে ও চুরি হয়ে যায়। এসব মিনি ডাস্টবিন নষ্ট হওয়ার পর পুনঃস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। যথাযথ পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে আন্তরিকতার অভাবে টাকা খরচ হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলাফল শূণ্য।
 
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, যেমন বন্যা, মহামারী, অতি বৃষ্টি বা ভূমিকম্পের জন্য আগাম প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে যৎসামান্য (০১ কোটি করে) বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ বারানোর পাশাপাশি দক্ষ কর্মী তৈরি করা খুবই জরুরি। অন্যদিকে শব্দদুষণ, ধুলাদুষণ সহ সকল প্রকার দুষণ রোধে সিটি কর্পোরেশনকে বিশেষ উদ্যোগী হতে হবে। লাউড স্পিকারের ব্যবহার, গাড়ীর হর্ণের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন করতে হবে। 
 
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মশক নিয়ন্ত্রন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় এডিসসহ সব ধরনের মশার বংশবিস্তার রোধে সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নেয়া উচিত ছিল। কিন্তু তাদের কার্যক্রম অনেককেই হতাশা করে যার ফলে চিকুনগুনিয়া মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করে মহামারী পর্যায়ে চলে গিয়েছে। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনসাধারনকে সচেতন করা ও এ-লক্ষ্যে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রেও সংস্থাগুলোর অবহেলা দেখা যায়। ব্যয় বাড়লেও যন্ত্রপাতি ও পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যয় পর্যাপ্ত নয়। প্রয়োজনে মশক নিধনের জন্য বিশেষ টীম গঠন করে লোকবল বাড়ানোর মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। 
 
কোন কোন ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সমূহের আয় বাড়তে পারে সেদিকে দৃষ্টিপাত করা এবং উক্ত আয় সর্ব সাধারনের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজে লাগানো আবশ্যক।
 
যে সকল এলাকায় উন্নয়ন কার্যক্রম চলবে, সে সকল এলাকাবাসী এবং দোকানদারদের সহায়তা নেওয়া আবশ্যক। এভাবে, উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে এবং বাধাগ্রস্থ হবে না। 
 
সুপারিশ সমূহ:
 
১) প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ততার পরিবর্তে নাগরিক সেবা প্রদানে পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করা। বিদ্যমান লোকবল, ভৌত অবকাঠামো, সরঞ্জামাদি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের ঊদ্যোগ গ্রহণ করা।
২) কর্পোরেশনের পরিকল্পনা বিভাগ সহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 
৩) জনগনের অংশগ্রহন এবং তাদের নিকট জবাবদিহিতা থাকার নিমিত্তে ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাদের উপর অধিক দায়িত্ব ন্যাস্ত করা এবং তাদের দায়িত্ব পালনের মনিটরিং পদ্ধতি জোরালো করা।
৪) আয়ের উৎস বৃদ্ধি করা। নাগরিক সুবিধা, বিশেষ করে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে জমি বা এলাকার সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই বর্ধিত মূল্যের অংশবিশেষ বিভিন্ন ভাবে ট্যাক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। 
৫) কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে ব্যায় নির্ধারণ করতে হবে, গতানুগতিক ভাবে গত বছরের খরচের ভিত্তিতে নয়।
৬) পার্ক, মাঠ ও উন্নত কোন স্থান ধ্বংস করে অন্য কোনো প্রকল্প বা কাঠামো নয়।
৭) জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থান যেমন- পার্ক, মাঠসহ অন্যান্য জায়গায় মার্কেট বা কার পার্কিং নয়। যেরূপটি দেখা যায় মতিঝিল মাঠ ধ্বংস করে কার পার্কিং সৃষ্টি। তাছাড়া মার্কেট থেকে ঊল্লেখযোগ্য আয় আসে না। জনগনের জায়গা সর্বসাধারনের জন্য ঊন্মূক্ত থাকুক।