যানজট, গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়াসহ নৈরাজ্য-অতিষ্ঠ নগরবাসী অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণসহ পর্যাপ্ত বাস চাই
যানজটে নাকাল সকলেই। তাছাড়া সাধারণ মানুষকে পাবলিক বাসের অভাবে দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে লোকজনে ঠাসা বাসে উঠতে হচ্ছে। সেই সাথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ ধারন ক্ষমতার অনেক বেশি যাত্রী নিয়ে বাসগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। সম্প্রতি কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে যা মতিঝিল থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত মাত্র ২০ কিলোমিটারে ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। সরকার বা বিআরটিএ-র আন্তরিকতার অভাবেই ঢাকা মহানগরীতে গণপরিবহন খাতে এসকল নৈরাজ্য আজ চরম আকার ধারণ করেছে। সুতরাং অবিলম্বে যানজটসহ অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-সহ ১৬টি সংগঠনের উদ্যোগে আজ ৩১ মার্চ ২০১৮, শনিবার, সকাল ১১.০০টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে “যানজট, গণপরিবহনে নৈরাজ্য-অতিষ্ঠ নগরবাসী; চাই পর্যাপ্ত বাস, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা”-দাবীতে মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পবা’র সহ-সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, বিডি-ক্লিক-এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, বানিপা-এর সভাপতি প্রকৌ. মো. আনোয়ার হোসেন, নাসফ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক অহিদুর রহমান, তথ্য সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরী, আইন বিষয়ক সহ-সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, মো. রাশেদুল ইসলাম, ডাব্লিউবিবি-ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান, শুভ কর্মকার, পবা’র সদস্য মো. শরিফুজ্জামান খান সাঈদ প্রমুখ। 
 
বক্তারা বলেন, নব্বই দশকে ঢাকার পাবলিক পরিবহনের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার, ২০০৮ সালে ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার। নানা সমস্যার কারণে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারে (সূত্র: ইত্তেফাক; ০৪/০৮/২০১৫)। ঢাকা শহরের বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন।
 
রাজধানীতে দিনে অন্তত ৬ লাখ মানুষ নানা প্রয়োজনে আসছেন এই শহরে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। তাই দিনে অন্তত ২১ লাখ পরিবহন ট্রিপের প্রয়োজন। কিন্তু যানজটে ২১ লাখের তিনভাগের একভাগও ট্রিপ হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীর প্রতি ৩ হাজার যাত্রীর যাতায়াতের জন্য বাস ও মিনিবাস আছে মাত্র ১টি। তাছাড়া অটোরিক্সাগুলোর এক-তৃতীয়াংশ অচল। গণপরিবহনের সঙ্কটের বিপরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকায় প্রতিদিন নামছে ৩১৭ টি প্রাইভেট কার। 
 
জাইকা’র তিনটি রুটে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়,  ঢাকায় পাবলিক বাসে প্রতিদিন প্রায় ১৯লক্ষ যাত্রী চলাচল করে। এছাড়া গবেষণায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার তিনটি করিডোরে পাবলিক বাসে যাতায়াতের জন্য গড়ে ৭৭ মিনিট করে সময় লাগে। যার ২৪% বাসের জন্য অপেক্ষা, ৪৪% বাসে ওঠা-নামা ও বাস পরিবর্তন এবং ৩২% সময় বাসে চলন্ত অবস্থায় ব্যয় হয়। 
 
ঢাকা মহানগরীতে যানজট হ্রাসে গণপরিবহণের দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে অপেক্ষার সময়, বাসে ওঠানামা ও বাস পরিবর্তনের সুবিধা সৃষ্টি পাশাপাশি বাসের জন্য পৃথক লেন করা গেলে বাসে যাতায়াতের সময় অনেক কমে আসবে। যা মানুষকে বাস ব্যবহারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। 
 
সুপারিশ সমূহ:
১. সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা প্রতিরোধ করতে হবে সেই সাথে বাসযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে তদারকি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. চাহিদা অনুযায়ী টেকসই বড় বড় বাস সরকারী ব্যবস্থাপনায় চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশন, নৌ টার্মিনাল ও দূরপাল¬ার বাস টার্মিনালের সঙ্গে সিটি বাসের সমন্বয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পাবলিক বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নে দক্ষভাবে পাবলিক বাস পরিচালনার জন্য অভিভাবক সংস্থা রাখা ও কর্মরত সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
৫. গবেষণার ভিত্তিতে সঠিকভাবে বাস রুট ডিজাইন ও বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. সরকারি উদ্যোগে বাস ডিপো নির্মাণ ও সেখানে বাস মেরামতের যাবতীয় সুবিধা রাখতে হবে।
৭. বাস স্টপেজের সঙ্গে বাসা ও অফিসের মধ্যবর্তী যাতায়াতের জন্য হেঁটে, সিগন্যালে বাসকে প্রাইভেটকারের আগে ছেড়ে দিতে হবে।
৮. বাস স্টপেজের ডিজাইন করতে হবে এমনভাবে, যাতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীসহ সবাই ওঠানামা করতে পারে।