“ইফতারিসহ সকল খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত চাই”
আসছে পবিত্র রমজান মাস। প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই রমজানে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রেল ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, মোটর যান, নৌ-যান ও কলকারখানার বিভিন্ন রকম পোড়া তেল দিয়ে নানা ধরনের ইফতার সামগ্রী ভাজা হয়। বার বার একই তেল ব্যবহার করার ফলে তা বিষাক্ত হয়, ফলে তা খাদ্যকে বিষাক্ত করে। রাসায়নিক রং ও বিভিন্ন উপাদান খাদ্য দ্রব্যে মিশানো হচ্ছে। খেজুরে মিশানো হচ্ছে ফরমালিন। এছাড়াও পঁচা-বাসীসহ বিভিন্নভাবে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। এসব খাবার ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারের রোগসহ শিশুদের নানা ধরনের মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি গণমাধ্যমসহ সকল স্তরের জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-সহ অন্যান্য সমমনা ১২টি সংগঠনের উদ্যোগে আজ ১২ মে ২০১৮, শনিবার, সকাল ১১.০০টায়, শাহবাগস্থ ঢাবি’র চারুকলা অনুষদের সামনে, “খাদ্য ভেজালকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান কর-ইফতারিসহ সকল খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত নিশ্চিত কর”-দাবীতে মানববন্ধনে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সভাপতি মু. হাফিজুর রহমান ময়না-এর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাসফ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, স্টামফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কামরুজ্জামান মজুমদার, পবা’র সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ-এর সভাপতি নাজিম উদ্দিন, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি-এর সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, সুবন্ধন সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান, নগরবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী শেখ আনসার আলী, নাসফ-এর সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, তথ্য গবেষণা সম্পাদক মোস্তাফা ইকবাল চৌধুরী, যুবকন্ঠ-এর সম্পাদক মো. আখতার হোসেন, নারীমৈত্রী’র শিরিন আক্তার, পবা’র সদস্য কানিজ ফাতেমা প্রমুখ। 
 
বক্তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। রমজান মাসকে সামনে রেখে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিশেষ করে ইফতারিতে যেসমস্ত খাদ্যপণ্য বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলোর উৎপাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলছে। অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুতদার, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে এসব খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজালের মিশ্রণ করে থাকে। যা আমাদেরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখনই বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারি সামগ্রী নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।
 
দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষ ও ভেজালমুক্ত এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রকে আমরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে দেখছি না। আর আমরা বঞ্চিত হচ্ছি বিষ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য পাওয়ার অধিকার থেকে। এখন এমন কোন খাদ্যদ্রব্য নেই যাতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল নামের নীরব ঘাতক বিষ মিশানো হয় না। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি রয়েছে। সহজপ্রাপ্যতা, আইন প্রয়োগ ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটেই চলেছে।
 
 
রমজান মাসে ইফতারিতে যেসব খাদ্যপণ্যের সবচেয়ে বেশী চাহিদা সেগুলো হলো- শরবত, খেজুর, ছোলা, মুড়ি, বেসন, ডাল, তেল, চিনি, দুধ, সেমাই, মুরগী, মাছ, দেশী-বিদেশী ফল, শসা, টমেটো, বেগুন, কাঁচা মরিচ, লেবু, আটা, ময়দা ইত্যাদি। রমজানের বাজার ধরার লক্ষ্যে এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও মজুত করতে বিষাক্ত কেমিক্যাল, অৎঃরভরপধষ ঐড়ৎসড়হব এৎড়ঃিয, ফরমালিন ও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হচ্ছে। 
 
 
বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহতা বিবেচনায় বর্তমান সরকার ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫, নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ প্রণয়ন করেছে। এছাড়াও রয়েছে স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট, ১৯৭৪। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় সংসদ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার যথাযথ উদ্যোগ ও অঙ্গীকারের অভাব, বিষাক্ত খাদ্যের ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনুধাবনে ব্যর্থতার ফলে আমরা জনগণ এর কোন সুফল পাচ্ছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধীরে ধীরে আমরা পঙ্গু জাতিতে পরিণত হব। 
 
 
করণীয়
ক্স খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি মিশানোর সাথে জড়িত ও রাসায়নিক দ্রব্যাদিযুক্ত খাদ্য বিক্রয়কারীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দন্ড প্রদানই যথেষ্ট নয়।  এদের বিরুদ্ধে স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্ট, ১৯৭৪ এর ২৫-গ ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই আইনের ২৫-গ ধারায় খাদ্যে ভেজাল দেয়ার জন্য কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভেজাল খাবার বিক্রয়ের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
ক্স নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ক্স যথাযথ প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রসারে সামাজিক উদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব অবসানের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি সহজতর করতে হবে।
ক্স নিরাপদ খাদ্যে অর্থায়নের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনপূর্বক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। 
ক্স দেশের চাহিদা অনুযায়ী টিসিবির মাধ্যমে ফরমালিন আমাদানি করতে হবে।
ক্স ভেজাল বিরোধী টিম কর্তৃক নিয়মিতভাবে খেজুরসহ অন্যান্য ফল, মুড়ি, সেমাই, রং মিশ্রিত সকল খাবার, ইত্যাদি পরীক্ষা করতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। 
ক্স সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থের আমদানিকারক ও ব্যবহারকারী এবং লেবেল ছাড়া বা মিথ্যা লেবেলের অধীন কীটনাশক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।