৩০ মার্চের মধ্যে স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক

৩০ মার্চের মধ্যে স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারীর বিরুদ্ধে
আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক

ট্যানারী শিল্প সাভারস্থ চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শিল্প মালিক ও সরকারের মধ্যে প্রথম থেকেই বিভিন্ন সময়ে নানা টানাপোড়েন চলছে এবং দফায় সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। পবা ট্যানারী স্থানান্তরের শুরু থেকেই প্রকল্প এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন, জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখের পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ৫১% প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন সম্পন্ন করেছে, ৪৪.৫% ট্যানারী ফাউন্ডেশনের কাজ করছে এবং ৪.৫% ট্যানারী এখনও কিছুই করেনি। ২৩টি প্রতিষ্ঠান ড্রাম স্থাপন করেছে বা স্থাপনের জন্য ফাউন্ডেশনের কাজ করছে। এদের মধ্যে মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন নির্মাণ করেছে। এমতাবস্থায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের অপরিমেয় ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের সর্বশেষ বেঁধে দেয়া সময়সীমা ৩০ মার্চ ২০১৬ এর মধ্যে সাভারে স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১টায় পবা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত দাবী জানানো হয়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, সহ-সম্পাদক মো: সেলিম প্রমুখ।

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখের পবার সরেজমিন পরিদর্শন, জরিপ, পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ১৫৫টি ট্যানারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১টি প্রতিষ্ঠানে ৫ম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে, ৩টি প্রতিষ্ঠানে ৪র্থ তলার কাজ চলছে; ১১টি প্রতিষ্ঠানে ৩য় তলার কাজ চলছে; ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ২য় তলার কাজ চলছে; ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ১ম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে; ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ১ম তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে; ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের পাইলিং সম্পন্ন বা চলছে, বেইজ ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে, গ্রেটভীম ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে, কলামের ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে; ৭টি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। ৫১% প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন সম্পন্ন করেছে, ৪৪.৫% ফাউন্ডেশনের কাজ করছে এবং ৪.৫% শিল্প ভবন নির্মাণে কিছুই করছে না। ২৩টি প্রতিষ্ঠান ড্রাম স্থাপন করেছে বা স্থাপনের জন্য ফাউন্ডেশনের কাজ করছে। ২টি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন নির্মাণ করেছে। ১টিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।

শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ¯া’ানান্তর কার্যক্রম যে গতিতে চলছে তাতে ৩০ মার্চ এর মধ্যে ২০% ট্যানারীতে ড্রাম স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এগুলোর বেশীর ভাগই বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন নির্মাণ শুরু না করায় বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে চালু করা সম্ভব হবে না। যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান ড্রাম স্থাপন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের এখনই বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন নির্মাণ শুরু করা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তির আবেদন করা প্রয়োজন। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা প্রয়োজন। সিইটিপির বাকী দুটি মডিউলের নির্মাণ কাজ ৩০ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া। এছাড়াও প্রকল্প মেয়াদ (জুন ২০১৬) এর মধ্যে ডাম্পিং ইয়ার্ড, এসটিপি, এসপিজিএস নির্মাণ সম্পন্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

এছাড়া পাইপ লাইন স্থাপন কার্যক্রম পরিচালনায় ধূলা নিয়ন্ত্রণে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় শিল্প এলাকায় ব্যাপকভাবে ধূলা দূষণ হচ্ছে। যা কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারিদের স্বাস্থ্যের এবং এলাকার পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ট্যানারীতে প্রচুর লবন ব্যবহার করা হয়। লবন পরিশোধনের কোন ব্যবস্থা সিইটিপিতে নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক, খেলার মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া, ডে কেয়ার সেন্টার, চিকিৎসা সুবিধা, ফায়ার ব্রিগেড ইত্যাদির ব্যবস্থা শিল্প এলাকায় গড়ে তোলার বিষয়ে প্রকল্পে কিছুই উল্লেখ নেই। চামড়া নগরীর রাস্তায় আলোর কোন ব্যবস্থা নেই। হেমায়েতপুর থেকে চামড়া শিল্প নগরী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করা প্রয়োজন।

করণীয়-
ক্স    সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিশেষ করে শিল্প, পরিবেশ ও বন, অর্থ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনপূর্বক হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো সাভারে স্থানান্তরে মালিকদের বাধ্য করার লক্ষ্যে কঠোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ক্স    ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ এর মধ্যে হাজারীবাগের যেসব ট্যানারী সাভারে স্থানান্তর করে উৎপাদন শুরু করবে না তাদের প্লট বাতিল করা, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর আওতায় হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো বন্ধ করে দেয়া ও পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ আদায় করা, চলতি মূলধন না দেয়া।
ক্স    ২০১৬ সালের পহেলা মার্চ থেকে সিইটিপির দুটি মডিউল চালু করা। এক্ষেত্রে যে ২/৩ টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব সেগুলোতে উৎপাদনে যাওয়া। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য এবং হাজারীবাগ থেকে বর্জ্য এনে সিইটিপির দুটি মডিউল চালু করতে হবে। এটি একটি বায়োলোজিক্যাল ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বিধায় তা কার্যক্ষম হতে অন্তত ২ মাস সময় লাগবে।
ক্স    পাইপ লাইন স্থাপন কার্যক্রম পরিচালনায় ধূলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ক্স    ট্যানারীতে প্রচুর লবন ব্যবহার করা হয়। লবন পরিশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ক্স    শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক, খেলার মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া, ডে কেয়ার সেন্টার, চিকিৎসা সুবিধা, ফায়ার ব্রিগেড ইত্যাদি শিল্প এলাকায় গড়ে তোলা।
ক্স    ইটিপি নির্মাণ মালিকদের দায়িত্ব। সিইটিপি নির্মাণ ব্যয় ট্যানারী মালিকগণ অবশ্যই পরিশোধ করবেন। কেননা এটা জনগণের টাকা।
ক্স    হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ সাভারে স্থানান্তরের পর হাজারীবাগকে নাগরিক সুবিধা সম্বলিত আধুনিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা, বিশেষ করে খেলার মাঠ, পার্ক, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইত্যাদি স্থাপন করা।