নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের অবৈজ্ঞানিক ও আইনবিরোধী বক্তব্য খাদ্যে ভেজালকারীদের উৎসাহিত করছে
জনগনকে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে সরকারের ক্রমবর্ধমান কার্যক্রম ও গণজাগরনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও কর্মকান্ড। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র উদ্যোগে আজ ২৯ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, সকাল ১১.০০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ঃ খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্নতা”-শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে দুটি  লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন,  ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান, ফার্মেসি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম ফারুক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন, বিসিএসইআর এর খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের  সাবেক পরিচালক ড.এ কে এম ফরমুজুল হক, পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী। 
 
এ বি এম ফারুক বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথোফেনে রঙিন করা আম জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাকার আগেই বাজারে নিয়ে আসে বেশি লাভ পাওয়ার আশায়। এগুলো পরিপক্ক হয় না। শুধুমাত্র পাকার মতো রঙিন হয়। এগুলোতে কোন পুষ্টিমান, স্বাদ ও গন্ধ থাকেনা। ভোক্তারা মানসিক, আর্থিক ও পুষ্টিগতভাবে প্রতারিত হন। 
 
পুষ্টি-স্বাদ-গন্ধ পেতে হলে ফলকে স্বাভাবিক নিয়মে পরিপক্ক হতে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে পাকার সময় ফলের ভেতরে নানা ধরনের অসংখ্য প্রাণরাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। স্তরে স্তরে এই যে পরিবর্তন এর প্রথম পর্যায় হলো কোষ বিভাজনের মধ্য দিয়ে ফলটি আকারে ও ওজনে বড় হতে থাকে। ফল পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত এই কোষ বিভাজন চলতে থাকে। এক দুদিনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এর জন্য কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ইথিফোনে ‘পাকানো’ আম-কলা ও অন্যান্য ফল যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক রকমের ক্ষতিকর তা দেশে-বিদেশের অনেক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। 
 
গত ২৩ মে ২০১৮ বুধবার বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃক্ষের আয়োজিত এক কর্মশালায় বিএসএফএ-র চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক "দায়িত্ব নিয়ে নিশ্চিত করেন যে কার্বাইড বা ইথোফেন দিয়ে ফল পাকানো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। আর ফরমালিন নিয়ে অতীতে যেসব কর্মকান্ড হয়েছে, তার পুরোটাই ভুল"(এই বক্তব্য বিজ্ঞানসম্মত নয়, বিএসএফএ এর সাংগাঠনিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক এবং তা অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে তাদের জনস্বাস্থ্যবিরোধী হীন কাজে উৎসাহ প্রদানের সামিল। সরকারি যে প্রতিষ্ঠানটির জনস্বাস্থ্যের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কথা, তা না করে তারা যখন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে বক্তব্য প্রদান করে তখন তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি যে দেশের ভোক্তা অধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলো নিশ্চয়ই এর জোরালো প্রতিবাদ করবে। এমতাবস্থায় কোন কোন সরকারি কর্মকর্তা যদি এমন বক্তব্য রাখেন যা অসাধু ব্যবসায়ীদের পক্ষে যায় তখন তা দেশের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক । 
 
ডা. লেলিন চৌধুরী তার প্রবন্ধে বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের ভূমিকা বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এক মহাবিপর্যয়ের অশনিসংকেত। ইথোফেন-কার্বাইড দ্বারা অপরিপক্ক আম পাকানোর দ্বারা ভোক্তার সাথে প্রতারণা করা হয়। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভোক্তার সাথে প্রতারণার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ফল পাকানোয় কার্বাইডের ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নিজেই নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ নম্বর ধারাসহ অন্যান্য ধারা ভঙ্গ করছেন। কার্বাইড,ইথোফেন ও ফরমালিন বিষয়ে  জনসাধারণকে অবৈজ্ঞানিক ও ভুল তথ্য দিয়েছেন। নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লংঘন করেছেন। ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। 
 
চেয়ারম্যানের প্রদত্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি মো. মাহফুজুল হক বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যন থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। অবিলম্বে তাকে অপসারণ করা হোক। আইনভঙ্গের জন্য তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। কি কারণে তিনি নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন সেটা খূঁজে বের করার জন্য একটি ব্যাপক তদন্ত করা হোক।