বন্যা পরবর্তী ঈদ যাত্রা নিরাপদ করতে দ্রুত রেল লাইন মেরামত কর

সারাদেশে মানসম্পন্ন রেললাইন রয়েছে মাত্র ৭৩৯ কিলোমিটার বা ২৫.২৩ শতাংশ। বছরের পর বছর এ সেতুগুলো সংস্কার না করার কারণে এর মধ্যে ৪০২টি রেলসেতগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ফলে যাত্রী দুর্ভোগের পাশাপাশি রেলওয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঈদে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনগুলোতে ট্রেন চলাচলে রেলওয়ের সাবেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে করণীয় নির্ধারন করা এবং অভিজ্ঞ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দ্বারা দ্রুত মেরামতের কাজ সম্পন্ন্ করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি মেরামতের কাজ তদারকি করা প্রয়োজন। আজ ৩০ জুলাই ২০১৯ সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্দ্যোগে পবা’র সেমিনার কক্ষে “রেললাইনের দূরাবস্থা ও রেল দূর্ঘটনা, বন্যা পরবর্তী নিরাপদ ঈদ যাত্রা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ অতিকুর রহমান। তিনি বলেন, সারাদেশে ট্রেন লাইনচ্যুতি ঘটনার ৭৫ শতাংশই ঘটে রেললাইনের কারণে। ৭৪.৭৭ শতাংশ রেললাইন চলছে নির্ধারিত মান ছাড়াই। রেললাইনের পাথর স্বল্পতা, নড়বড়ে ট্র্যাক, রেললাইনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাব ও আধুনিক মেশিনারিজের অভাবে রেললাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ন হয়ে যা”েছ। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর ৫ লাখ ৫৬ হাজার ঘনফুট ক্রাশড স্টোনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পাওয়া যায মাত্র ১ লাখ ঘনফুট পাথর। বছরে ৫ লাখের বেশি ক্লিপ চুরি বা ভেঙ্গে গেলেও পাওয়া যায় সোয় ২ লাখ। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতিমধ্যে ১১৩৫.২৩ কি.মি. রেলপথ পূনর্বাসন, ২৯৫ টি রেল সেতু পুনর্বসান কাজ সম্পন্ন করলেও তা দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন হয়নি। রেললাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক মেশিন এবং যে অনুযায়ী লোকবল ও ওয়ার্কশপ প্রয়োজন।

পবার সাধারন সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান বলেন, রেলপথ পরিদর্শক বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা এবং নিয়মিত রেললাইন ট্রলি করা ও রিপোর্ট প্রকাশ করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রেললাইনে ব্যবহত পাথরের মান যাচাই করে মানসম্মত পাথর ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে রেলসেতুগুলোতে কি ধরনের ভারি মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে তা নিরূপন করে পর্যায়ক্রমে প্রকল্প গ্রহণ করা। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, রেলের জন্র পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়েছে ঠিকই তবে এখনও রেলে অনেক সংকট ও রেলকে পিছিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দূর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব রেলকে ভয়াবহ সংকটে ফেলে দিবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেলকে কেন্দ্র করে বহুমাধ্যমভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকার তথা জনগণের একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ লোকবলের অধিনে নতুন লোক নিয়োগ করে জনবল সংকট দূর করার উদ্দ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কার্যক্রম তদারকি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে রেলসেতুগুলো অনেক পুরাতন। এগুলোর কি ধরনের ভারি মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে তা নিরূপন করে পর্যায়ক্রমে মেরামতের উদ্দ্যোগ নেয়া।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে আবু নাসের খান বলেন, রেলওয়ের আজকের যে করুন পরিণতি তা একদিনে হয়নি। দাতা সংস্থা এবং স্বার্থন্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার রেল। রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, নিয়মিত তদারকি ও মেরামতের অভাব, মানসম্মত পর্যাপ্ত পাথরের স্বল্পতা ঝুঁকিপূর্ণ সেতু লোকবল ঘাটতি এবং যন্ত্রাংশের সংকটের কারণে ট্রেন দূর্ঘটনা বেড়ে যা”েছ। ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ৬ বছরে রেলওয়ের দুর্ঘটনা ঘটেছে ১,০০৮ টি। সারা বছর রেললাইন সুষ্ঠভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এবং বন্যা পূর্ববর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমানো সম্ভব হত। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনগুলো দ্রুত মেরামতের উদ্দ্যোগ নিতে হবে। ঈদের পরে সার্বিক জরিপের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করে মেরামতের উদ্দ্যোগ নিতে হবে। ঈদে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনগুলোতে ট্রেন চলাচলের পূর্বে বিশেষ ট্রলির ব্যবস্থা করা, নিয়মিত রেললাইন ট্রলি করা ও রিপোর্ট প্রকাশ করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রেললাইন পুনর্বাসন প্রকল্পগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং করা। ইতিপূর্বে রেললাইন পুনর্বাসন প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মোঃ মুসা, অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, হীল এর জেবুন নেসা এবং ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি এর সাধারন সম্পাদক জীবন কুমার সরকার প্রমুখ।