বছরব্যাপি ডেঙ্গু নির্মূলে সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছাদ বাগান ধ্বংস নয়, প্রয়োজন সম্প্রসারণ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা

ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগের কারনে মানুষের যে প্রাণহানি ঘটছে বা অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেজন্য কোন অবস্থাতেই ছাদ বাগান দায়ী নয়। এর কারণ প্রথমত এডিস মশা পানিতে ডিম পাড়ে না তা গবেষণায় প্রমাণিত। দ্বিতীয়ত ছাদ বাগানের কোন গাছের পাত্রে একাধারে ৩-৫ দিন পানি জমে থাকেনা, থাকলে গাছই মারা যাবে। তাই নগরীর জীববৈচিত্র্য ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখা ছাদ বাগান এডিস মশার জন্য দায়ী নয়। এজন্য ছাদ বাগান ধ্বংস নয় বরং প্রয়োজন এর সম্প্রসারণ এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা। যেসকল (বাড়ীওয়ালা, ফ্ল্যাট মালিক সমিতি) এই ডেঙ্গুকে কেন্দ্র করে সবুজায়নে বাধা সৃষ্টি করছে, ছরিয়ে দিচ্ছে মিথ্যা আতংক, তাদের বিরদ্ধে সরকারীভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং সামাজিক ভাবে তাদেরকে বয়কট করার ব্যবস্থা করা হোক। আজ ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, সকাল ১১.০০ টায় পবা’র সেমিনার কক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বাংলাদেশ গ্রিন রুফ মুভমেন্ট-এর যৌথ উদ্যোগে “ডেঙ্গু প্রতিরোধ : ছাদবাগান ও পরিবেশ সুরক্ষা”-শীর্ষক অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা উল্লেখিত অভিমত ব্যক্ত করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ গ্রিণ রুফ মুভমেন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো: গোলাম হায়দার। বক্তব্য রাখেন, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আব্দুস সোবহান, সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বাংলাদেশ গ্রীণ রুফ মুভমেন্ট-এর সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ, সদস্য মুশহেদা খানম, নুসরাত পলি, মাসুম রেজা, জামিল সিদ্দিক, বাংলাদেশ প্ল্যাট নার্সারিমেন সোসাইটি’র সভাপতি মো. মেসবাহ উদ্দিন, এসো বাগান করি-এর সদস্য জাহিদ হাসান, পবা’র সদস্য রাজিয়া সামাদ, দিনা খাদিজা, মো. ইলিয়াস হায়দার, কবি কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, হিলের সভাপতি জেবুন নেসা, বিসিএইচআরডি চেয়ারম্যান মাহাবুব হক।

বক্তারা বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে সবুজায়ন আর অক্সিজেনের জোগান দিতে বারান্দা বা ছাদবাগান করার জন্য উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া হয়েছিল সিটি কর্পোরেশন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু এখন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছাদ বাগান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যা কোনো ভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা আমরা সকলে জানি পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের ভূমিকা অপরিসীম। ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে সবুজ শূন্য হয়ে পড়েছে নগর, ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরের উষ্ণতা, অতিপ্রয়োজনীয় নানা ধরনের কীট-পতঙ্গ, প্রজাপতি, পশু-পাখি শূন্য হয়ে পড়ছে নগর। প্রাণ বৈচিত্র আজ মারাত্মক হুমকির মুখে। মানুষ নানাবিধ রোগ বালাইয়ে জড়াজীর্ন অর্থাৎ পরিবেশ বিপর্যস্ত। শুধু তাই নয়, যে হারে নগরায়ন হচ্ছে এই হারে বৃদ্ধি পেলে তথ্য মতে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সকল মানুষই কোন না কোন নগরে বসবাস করবে অর্থাৎ ভবিষ্যৎ নগরের তথা সারা দেশের পরিবেশে প্রাণীকুলের সুস্থতার সহিত জীবন-যাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এমতাবস্থায় ছাদ বাগান আমাদের জন্য আশীর্বাদ, আলোকবর্তীকা। সারা দেশের সমগ্র নগরগুলোর ছাদ বাগান হবে বিশাল সবুজের কৃষি ক্ষেত্র, অক্সিজেনের ফ্যাক্টরী, তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে অন্যতম হাতিয়ার, নিরাপদ ফল-মূল, শাক-সবজির যোগান দাতা। কৃষি মাত্রিক বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক কৃষিতে পরিণত করে টিকিয়ে রাখার প্রধান ক্ষেত্র। বিশাল এক কর্মসংস্থানের কারখানা, প্রাণবৈচিত্র রক্ষার অন্যতম নিয়ামক। অবক্ষয়গামী সমাজকে সুস্থ, নিরোগ, জীবনমুখী, পরিশ্রমী মানবিক সমাজ গড়ার প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষিত কৃষি ও কৃষক গড়ার ইনিষ্টিটিউট, গবেষণা কেন্দ্র।

বক্তারা আরো বলেন, ভারী বর্ষণে ছাদের কিছু গাছের টবে স্বল্প সময়ের জন্য পানি জমে থাকতে পারে। এছাড়া কিছু পরিত্যক্ত টবে পানি জমে থাকতে পারে। তথাপি আমরা বলবো যারাই ছাদ বাগান করুন আপনার গাছের টব এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস যা অব্যবহৃত তা ছাদ থেকে সরিয়ে রাখুন অথবা উল্টো করে রাখুন। সর্বদা বাগান ও ছাদ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ছাদ বাগান আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। একজন ছাদ বাগানী সর্বদা একজন সচেতন, সুশীল নাগরিক। আমরা সচেতন হলে আমাদের প্রাণের বাগান, কষ্টের বাগান, ভালবাসার বাগান ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র হবে না।

সুপারিশ সমূহ ঃ
ক্স ডেঙ্গুমুক্ত ছাদ বাগান গড়ে তোলার জন্য বাগানীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা এজন্য সরকারীভাবে কারিগরী সহায়তা ও প্রয়োজনীয় (সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে) পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক্স বর্ষার শুরুতেই ডেঙ্গু নিধনে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ক্স কমপক্ষে ভবনের ৫০% ছাদে বাগান করার সরকারীভাবে আইন করা।
ক্স ছাদ বাগান প্রসারে সরকারের পদক্ষেপ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া।
ক্স ছাদ বাগান প্রসারে সরকারী/বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আরও জনবান্ধব কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়াসহ গবেষণার ব্যবস্থা করা।
ক্স সিটি কর্পোরেশনের ছাদ বাগানের জন্য নেওয়া হোল্ডিং ট্যাক্স রিবেট ১০% থেকে ২০% উন্নীত করা। যাদের ছাদ বাগান নাই তাদের উপর অতিরিক্ত ১০% কর বৃদ্ধি করা।
ক্স সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে নিয়মিত ছাদ বাগান পরিদর্শন করার জন্য সরকারীভাবে কমিটি করা।
ক্স কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে “নগরীয় কৃষি উইং” প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবী।
ক্স ছাদ বাগানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা।
ক্স ছাদ বাগানের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে এর যথাযথ সম্প্রসারণ ও প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।