অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চ্চা ও অবকাঠামো সুবিধা সংক্রান্ত গবেষণা ফলাফল প্রকাশ জেলা শহরগুলোতে শরীরচর্চা ও বিনোদনের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল
ঢাকা, ১ অক্টোবর ২০১৯: ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চ্চা ও অবকাঠামো সুবিধা’ সংক্রান্ত গবেষণায় ২২ টি জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ৪৫ ভাগ জেলা প্রশাসনের অধিন কোন মাঠ নেই, ২২ টি জেলার মধ্যে ১৫ টি (৬৮ ভাগ) জেলায় কোন পার্ক নেই, যে ৭টি জেলায় পার্ক আছে তার ৩ টিরই ব্যবস্থাপনার জন্য কোন লোকবল নেই, মাত্র ৫টি জেলায় ব্যায়াগার আছে, মাত্র ২টি জেলায় সাঁতার কাটার জন্য পুল ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে এবং ২২টি জেলার মাত্র ৩টিতে হাঁটার সব রকমের সুব্যবস্থা আছে, মাত্র ২টি জেলায় নারী ও শিশুদের জন্য হাঁটা ও কায়িক পরিশ্রমের ব্যবস্থা আছে।। আজ (১ অক্টোবর ২০১৯) কলাবাগানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সম্মেলন কক্ষে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আর্ক ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স সম্মিলিতভাবে এই গবেষণা সম্পন্ন করে।
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে পরিচালিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পবার সহ-সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান প্রমূখ। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, নীতি বিশেষজ্ঞ এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। বিদ্যমান তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং তথ্য অধিকার আইনের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে ৪টি সিটি কর্পোরেশন, ২২ টি জেলা, ১০টি জেলার সরকারি এবং বেসরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং ২৫ টি পৌরসভা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাশাপাশি এতৎসংশ্লিষ্ট বাৎসরিক প্রতিবেদন, আইন, নীতি, কার্যক্রম ও বাজেট বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষণায় আরো উঠে এসেছে, ২৫টি পৌরসভার মধ্যে ২১টির আওতায় কোন খেলার মাঠ নেই, ১৫টিতে পার্ক আছে, মাত্র ২টিতে ব্যায়ামাগার আছে এবং ৪টি পৌরসভায় সাঁতার কাটার জন্য পুল ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। চারটি সিটি কর্পোরেশনের ৩টি মাঠের ২টিই ইজারা দেওয়া হয়, ৩টি পার্ক রয়েছে, ১টিতে ব্যায়ামাগার আছে, ২টিতে সাঁতার কাটার জন্য পুল ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা আছে। ১০ টি জেলার ৫০১টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সরকারী স্কুলে মাঠ নেই এবং ১৪টি বেসরকারী স্কুলে মাঠ নেই, কোন স্কুলেই ব্যায়ামাগার নেই, সাঁতার কাটার জন্য কোন সুইমিং পুল নেই এবং সরকারী ও বেসরকারী মিলিয়ে মাত্র ৪টি জেলার স্কুলে খেলাধূলার জন্য বাজেট বরাদ্ধ আছে
গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, জাতি গঠনের জন্য শিশুর শারিরিক ও মানসিকভাবে বেড়ে ওঠা আবস্যক। শিশুর খেলাধূলা ও বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে আমরা ব্যর্থ হলে পূর্ণাঙ্গ জাতি পাবো না। এখন রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কেমন জানি চাই। তিনি আরো বলেন, নগর জীবনে মানুষের নৈমিত্তিক পরিশ্রমের সুবিধা কম তাই নগর পরিকল্পণায় নগরের মানুষের জন্য শরীরচর্চার পরিকল্পিত সু ব্যবস্থা রাখতে হবে।
অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, এ সংক্রান্ত যে আইনগুলো রয়েছে সেখানে কাউকে তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাই এই আইন প্রতিচালন না হওয়ার জন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান কে জবাবদিহির আওতায় আনার সুযোগ নেই। আইনগুলো আরো পরিণত না হলে তা আমাদের তেমন কোন কাজে আসবে না। তিনি আরো বলেন, মাঠ, পার্ক, ব্যায়ামাগার, সাঁতারের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গুলোর ক্ষেত্রে কতহনের জন্য কী সুবিধা প্রয়োজন তা নির্ণয় করে সে অসুসারে যোগানের ববস্থা করতে হবে।
ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন হতে হবে জীবনের মত করে। জীবনের সাথে সম্পর্কহীন উন্নয়ন আমাদের পেছনের দিকে নিয়ে যায়। এই গবেষণা ‘জীবনের মত করে উন্নন নিয়ে ভাবতে আমাদের পথ দেখাবে।
গনেষণা প্রতিবেদনে প্রতিটি এলাকায় জনসংখ্যা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান/পদ্ধতি নির্ধারনে গবেষণা পরিচালনা করা; জেলা ভিত্তিক অসংক্রমাক রোগের অবস্থা এবং কায়িক পরিশ্রমের সুবিধাসমূহ নির্ধারণে গবেষণা পরিচালনা করা; আগামী ২ বছরের মধ্যে প্রতি জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন এলাকায় জনসংখ্যার অনুপাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে এবং স্বল্প খরচে কায়িক পরিশ্রমের সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশনা প্রদান; অসংক্রমাক রোগ নিয়ন্ত্রণে কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতে নির্দেশিকা প্রণয়ন ইত্যাদি সুপারিশ করা হয়।