‘যাতায়াতে সঙ্কট নিরসনে ৮০ শতাংশ মানুষ উপেক্ষিত’

ঢাকা শহরের যাতায়াত সঙ্কট নিরসনে মেট্রোরেল ও উড়াল সড়কের মতো বড় প্রকল্পগুলি প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য লক্ষ টাকার উপরে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। এগুলি বাস্তবায়ন হলে এই শহরে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাবে। বাকী ৮০ শতাংশ অর্থাৎ পথচারী, বাস, রিকশা ও অন্যান্য মাধ্যমে চলাচলকারীগণ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে পরিবহন ব্যবস্থায় সঙ্কট সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা বহুগুনে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ যাতায়াত ৫ কিমি এর মধ্যে, যার অর্ধেক যাতায়াত আবার ২ কিমি এর মধ্যে হয়ে থাকে। এই স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য সাইকেলে ও হেঁটে নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা এবং অধিক দূরত্বের জন্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বিশেষ করে ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত গাড়ি বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। তবে গণপরিবহন ব্যবস্থা যেমন মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট এবং সাধারণ বাস সার্ভিস এর উন্নয়নে স্টপেজে আসা-যাওয়ার পথ অবশ্যই সুগম করতে হবে। এজন্য ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ করা এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আজ পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত “যানজট নিরসনে চলমান পদক্ষেপ সমূহের কার্যকারিতা” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাবিøউবিবি-ট্রাস্ট এর কর্মসূচী ব্যবস্থাপক মারুফ হোসেন। বক্তব্য রাখেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, যুব ফাউন্ডেশনের সদস্য শাকিল ওসমান, ইয়ুথ সান এর সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, সমন্বয়ক আরিয়ান তানভীর, সদস্য ফারহানা ইয়াসমিন বাবলী, সানজিদা ফাহ্রিন মুক্তা, পবা’র সদস্য রাসেল রহমান, তানভীর মাসুম, রাশেদ্জ্জুামান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি করে ১০ শতাংশের নীচে ট্রিপ সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে যানজট আরো বাড়বে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানীর অপচয় হচ্ছে, বাড়ছে দূষণ। এজন্য বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়ে থাকে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। এছাড়া মোটরসাইকেল এখন প্রায় ৭ লক্ষ, এটিও দূর্ঘটনা ও দূষণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। তাই উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থার বিকল্প নাই।

গোলটেবিল বৈঠক থেকে বক্তারা যে সকল সুপারিশ তুলে ধরেন-
* শহরজুড়ে পথচারী ও বাইসাইকেলের জন্য নিরাপদ ও প্রবেশগম্য এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
* বাসকে প্রাধান্য দিয়ে গণপরিবহন ব্যবহারের জন্য স্টপেজে আসা-যাওয়ার সুবিধাসহ একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
* প্রাইভেট কারকেন্দ্রিক অবকাঠামো যেমন উড়াল সড়ক, পার্কিং অবকাঠামো তৈরিতে নিরুৎসাহিত করা। এই অদক্ষ মাধ্যমটি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ যেমন পার্কিং ফি বৃদ্ধি, কনজেশন চার্জ আরোপ, গাড়িমুক্ত সড়ক বাস্তবায়ন, রেজিস্ট্রেশন সীমিতকরণ করা।
* অধিকাংশ মানুষ উপকৃত হয় এমন খাতে অধিক বাজেট বরাদ্দ দেওয়া।
* পরিকল্পিকভাবে মিশ্র এলাকা গড়ে তোলা। যেন এলাকার মধ্যে কম দূরত্বে মানুষ তার অধিকাংশ প্রয়োজন মেটাতে পারে।
* বিকেন্দ্রীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। দেশের প্রায় ৫০০ মাঝারী ও ছোট আকারের শহরগুলিতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। যাতে করে ঢাকামূখী জন¯্রােত ঠেকানো যায়।
* শহরগুলোতে অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস যেমন পাঠাও, উবারের ইত্যাদির সংখ্যা দ্রত বৃদ্ধির কারনে যানজট বৃদ্ধি, শব্দ দূষণ এবং দূর্ঘটনার ঝুকি বৃদ্ধি বিবেচনায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ করা।