আদায়কৃত অতিরিক্ত ভাড়াই চাঁদার টাকার উৎস বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ কর

পর্যাপ্ত মানসম্মত বাস না থাকায় মোটর সাইকেল, পাঠাও, উবারসহ বাড়ছে অন্যান্য পরিবহন। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও পরিবহন ব্যয় বাড়ছে, বাড়ছে যানজট ও নৈরাজ্য। বিভিন্ন রুটে যে পরিমান বাস চালানোর কথা তা চালানো হচ্ছেনা। একটি সিন্ডিকেট পুরো পরিবহন সেক্টরকে দখল করে নিয়েছে। এই পরিবহন সিন্ডিকেট হাইকোর্টের রুলকেও পরোয়া করেনা। তাদের জিম্মায় চলে যাচ্ছে কোম্পানীগুলোর বাস। যে কারণে যাত্রীদের সঠিক সেবা তারা প্রদান করতে পারছে না। বিভিন্ন কোম্পানি যে পরিমাণ ও যে মানের বাস চালানোর শর্তে রুট পারমিট পায় তারা তার চেয়ে অনেক কম পরিমাণ এবং নিম্ন মানের বাস চালায়। কোম্পানীর যেখানে ৫০ টি বাস চালানোর কথা সেখানে তারা চালাচ্ছে ১০ টি বাস। যাত্রীদের গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে এবং অতিরিক্ত বাস ভাড়া বাধ্য করার জন্য কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে কম বাস চালায়। যাত্রীরা যথেষ্ঠ যানবাহন না পেয়ে চলন্ত বাসে ঝুঁকি নিয়ে উঠানামা করে এতে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে চাহিদা থাকায় গেট লক না দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে বাস কোম্পানিগুলো। এভাবে যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করে বাস মালিকরা বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদা দিচ্ছে। আজ ০২ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে “আদায়কৃত অতিরিক্ত ভাড়াই চাঁদার টাকার উৎস; বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ কর” দাবীতে আয়োজিত মানববন্ধনের বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবাসহ সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, গ্রীণ ফোর্স, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, বিসিএইচআরডি উক্ত মানববন্ধনের আয়োজন করে।

পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে এবং নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলীর সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌ. মো. আবদুস সোবহান, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান, সদস্য জি এম রুস্তম খান, সুবন্ধন সামাজিক সংগঠনের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. ফারুক হুসাইন, খেলা ঘরের সাধারণ সম্পাদক রুনু আলী, নাসফের সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সমাজ সেবক মো. সেলিম, বিসিএইচআরডি’র সভাপতি মাহাবুব হক, গ্রীণ ফোর্সের সদস্য দ্যুলোক নাঈম, নাহিদ রায়হান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইন বাস্তবায়ন করার জন্য পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা)’র পক্ষ থেকে অভিনন্দন। এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কিছু কিছু প্রস্তুতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। যেমন সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের লক্ষ্যে জনগনের জন্য ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিধান করা হয়েছে। সেইক্ষেত্রে আইন অমান্য করা হলে জরিমানা করা হবে। কিন্তু ঢাকা শহরে কোথাও সয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগনাল নাই। যদিও প্রায় একশো কোটি টাকা ব্যয়ে CASE প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু এর বাস্তব প্রতিফলন নাই। অবৈধ পাকিংয়ের জন্য ৫০০০ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে নগরীর বাণিজ্যিক ভবনের পার্কিংয়ের জায়গাগুলো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে জেব্রা ক্রসিং, পদচারী-সেতু, পাতালপথসহ অন্যান্য নির্ধারিত স্থান ব্যাতিত যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের জন্য পথচারীকে ১০,০০০ টাকা জরিমানা ব্যবস্থা ধরা হয়েছে কিন্তু পারাপারের জন্য যথেষ্ট জেব্রা ক্রসিং-এর সুবিধা নাই। এছাড়া অবকাঠামো বাস্তবায়নের জন্য আইনের অন্যান্য বিষয়গুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এলক্ষ্যে বিআরটিএ, ডিএমপি, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল ডিপার্টমেন্টের সমন্বয়ে আইনগুলো সম্পর্কে জনগণ, চালক, মালিকসহ সবাইকে সচেতন করার লক্ষ্যে মিডিয়াসহ বিভিন্নভাবে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
নির্বিঘ্নে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বক্তারা বলেন, প্রতিটি রুটে পিক ও অফ-পিক সময়ে শর্ত অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বড় বড় বাস চলাচল নিশ্চিত করা। রাস্তায় যাত্রী উঠানো নামানো ও বেপরোয়াভাবে বাস চালানো কমাতে বাসচালকদের বেতন ট্রিপ ভিত্তিক না করে মাসিক বেতনের ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। বাস চালক ও নির্দিষ্ট কোম্পানীর হাতে বাসের দায়িত্ব দিলে যাত্রীসেবার মান কমবে কিন্তু ভাড়া বাড়বে, সড়কে নৈরাজ্য আরো বাড়বে। ঢাকা মহানগরীতে যানজট হ্রাসে গণপরিবহণের দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে অপেক্ষার সময়, বাসে ওঠানামা ও বাস পরিবর্তনের সুবিধা সৃষ্টি পাশাপাশি বাসের জন্য পৃথক লেন করা গেলে বাসে যাতায়াতের সময় অনেক কমে আসবে। যা মানুষকে বাস ব্যবহারে উৎসাহিত করার মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে।

পাবলিক বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নে দক্ষভাবে পাবলিক বাস পরিচালনার জন্য অভিভাবক সংস্থা রাখা ও কর্মরত সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। বাসযাত্রীদের সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কি-না সে বিষয়ে তদারকি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া বাস স্টপেজের ডিজাইন করতে হবে এমনভাবে, যাতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীসহ সবাই ওঠানামা করতে পারে। গবেষণার ভিত্তিতে সঠিকভাবে বাস রুট ডিজাইন ও বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বাস স্টপেজের সঙ্গে বাসা ও অফিসের মধ্যবর্তী যাতায়াতের জন্য হেঁটে, সিগন্যালে বাসকে প্রাইভেটকারের আগে ছেড়ে দেওয়া; সরকারি উদ্যোগে বাস ডিপো নির্মাণ ও সেখানে বাস মেরামতের যাবতীয় সুবিধা রাখা; চাহিদা অনুযায়ী টেকসই বড় বড় বাস নামানোর ব্যবস্থা করা; রেলওয়ে স্টেশন, নৌ টার্মিনাল ও দূরপাল¬ার বাস টার্মিনালের সঙ্গে সিটি বাসের সমন্বয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে সড়কে প্রতিদিনই বাড়ছে দূর্ঘটনা বা হত্যাকান্ড। শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণির মানুষ এই দূর্ঘটনার স্বীকার। প্রতিদিন দূর্ঘটনা ঘটছে দেশব্যাপী কিন্তু তা প্রতিরোধ করতে তেমন কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। সড়কে নৈরাজ্য, মৃত্যুমিছিল ও জনদূর্ভোগ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কোনটিরই সুফল স্থায়ী হচ্ছে না। উপরন্তু জনদূর্ভোগ ও যাতায়াত খরচ বেড়েই চলছে।

সুপারিশসমূহ ঃ

১. নব্য সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিআরটিএ, ডিএমপি, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল ডিপার্টমেন্টের সমন্বয়ে সড়ক পরিবহন আইনগুলো সম্পর্কে প্রথমেই জনগণ, চালক, মালিকসহ সবাইকে সচেতন করতে মিডিয়াসহ অন্যান্য মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো।
২. রুট পারমিটের শর্ত মোতাবেক সকল রুটে পর্যাপ্ত বাস চলাচল নিশ্চিত করা।
৩. সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে নিয়মিত তদারকি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৪. পর্যাপ্ত বিআরটিসি বাস চালু করা।
৫. বাসকে প্রাধান্য দিয়ে গণপরিবহনে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে স্টপেজসহ আসা-যাওয়ার সুবিধাসহ একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৬. বাসে যেন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীসহ সবাই যাতে নির্বিঘেœ যাতায়াত করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।