সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রত্না হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন চাই।

সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রত্নাকে গত ৭ আগস্ট সকাল বেলায় চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেকরোডে সাইক্লিং করার সময় একটি প্রাইভেট কার চাপা দিয়ে হত্যা করে। রেশমা নাহার রত্নার মতো হাজারো সাইক্লিস্ট ও পথচারী এমনিভাবে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। সাইক্লিস্ট ও সাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সাইকেলের জন্য পৃথক লেনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চলতে বাধ্য হচ্ছে সাইকেল ব্যবহারকারীরা। পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) ও সমমনা সংগঠনগুলো জনগণকে সাইকেল চালাতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি সাইকেলের জন্য পৃথক লেনের দাবী জানিয়ে আন্দোলন করে আসছে। এতে সরকার বাই সাইকেল লেনের জন্য কিছু উদ্যোগ নিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই যৎসামান্য। অবিলম্বে “সাইক্লিস্ট রেশমা নাহার রত্না হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সাইকেলের জন্য পৃথক লেন চাই“ দাবীতে আজ ১১ আগস্ট ২০২০, মঙ্গলবার, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সাইকেল র‌্যালীতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), গ্রীনফোর্স, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, ঢাকা সাইক্লিং ও স্পোর্টস ক্লাব, বাংলাদেশ মাউন্টেনিং ফেডারেশন, অভিযাত্রী, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাইকেল ক্লাব, সাউথ ঢাকা সাইক্লিস্টস, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট অংশগ্রহণ করে।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ এর সঞ্চালনায় সাইকেল র‌্যালীতে প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন গ্রীনফোর্সের প্রধান সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন। সাইকেল র‌্যালীর শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন নিহত রেশমা নাহার রত্নার মেঝো ভাই মো: শাহ্ আলম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শারমিন নাহার লাকি, পর্বতারোহী ও অভিযাত্রী সংগঠক নিশাত মজুমদার, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুববুস, ঢাকা সাইক্লিং ও স্পোর্টস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান মনা, বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশন‘র সাধারণ সম্পাদক অপার আহমেদ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাইক্লিং ক্লাব‘র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট‘র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান, সাইক্লিস্ট নওরিন ওশিন, ট্রাইএথলেট মো: সামসুজ্জামান আরাফাত, জাতীয় ক্রিড়াবিদ সুলতানা মৌসুমী প্রমুখ।

র‌্যালীর শুরুতে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, সাইকেল একটি পরিবেশবান্ধব বাহন। পৃথিবীর বহু দেশেই নতুন করে সাইকেলের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ইউরোপ এবং আমেরিকার কোনো কোনো শহরের নির্দিষ্ট কিছু সড়কে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সাইকেল ছাড়া অন্য সমস্ত বাহন চলাচল বন্ধ থাকে। অর্থাৎ সাইকেলের গুরুত্ব ক্রমেই অনুধাবন করছে বিশ^বাসী। বাংলাদেশে আজকাল কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় এমনকি অফিসে যাতায়াতের জন্য সাইকেলের ব্যবহার অনেকাংশে বাড়ছে। বর্তমানে অনলাইন সার্ভিস এর কার্যক্রম বৃদ্ধির কারনে সাইকেলের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু আন্দোলন নয় এটাকে রীতিমত বিপ্লব করে ফেলা সম্ভব যদি শুধু বড় বড় রাস্তার পাশে ছোট সীমিত জায়গায় সাইকেলের লেন করে দেয়া যায়। ঢাকার যে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম সেটা দুর করে সময় বাচাঁনোর এর থেকে সহজ কোনো পরীক্ষিত অন্য কোন বাহন নাই।

প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে যান্ত্রিক বাহনে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। নীতিমালায় ও আইনে পথচারীদের অগ্রাধিকারের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও তার যথাযথ বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমনকি পথচারি পারাপারে সুব্যবস্থা অধিকাংশ রাস্তায় নেই। সাইকেলের ব্যবহার ইদানিং বৃদ্ধি পেলেও সাইকেলের জন্য আলাদা লেন বা প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা এখনো নাই। কার্যত প্রাইভেট কার কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। এর ফলে রাস্তার তুলনায় প্রাইভেট কার ও অন্যান্য গাড়িও অনেক বেশি। কিন্তু প্রয়োজন ভালো গণপরিবহন ব্যবস্থা, বিশেষ করে ভালো সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন পরিকল্পনা মাফিক যাত্রীবান্ধব বড় বড় বাস। পর্যাপ্ত বাসের অভাবে এবং সড়ক পরিবহনে মাফিয়া চক্রের কারনে দুর্বৃত্ত্বদের দৌরাত্ন কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না। ফলে বিশেষ করে ”সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” বাস্তবায়নে শিথিলতার কারনে বেপরোয়া গাড়ি চালানো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এবং দুর্ঘটনার নামে হত্যাকান্ড বেড়েই চলছে। এরই মাঝে গভীর রাতে এবং ভোরে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনি এক বেপরোয়া গাড়ি চালানোর শিকার হলো রেশমা নাহার রত্না।

সাইকেলের জন্য পৃথক লেনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হলে মানুষের নিরাপদ যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি দূর্ঘটনা ও যানজট হ্রাস পাবে। এতে বায়ুদূষণ হ্রাসসহ জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পরিবেশ বান্ধব নগরী গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সুপারিশ
---------------------------------
# রেশমা নাহার রত্না হত্যার আসামীর অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
# কোন শিথিলতা নয়, চাই ”সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮” এর পূর্নাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়ন।
# রাজধানী এবং বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোতে সাইক্লিস্টদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য পৃথক লেনের দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।
# আইন ও নীতিমালার উল্লেখ অনুযায়ী পথচারীদের অগ্রাধিকার বিষয়টি ব্যাপক ভিত্তিতে বাস্তবায়ন চাই। পথচারি বান্ধব ফুটপাত চলাচল নিশ্চিত করতে হবে ।
# বাই সাইকেলের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে।
# প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ন স্থানে সাইকেলের নিরাপদ পার্কিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
# গভীর রাতে এবং ভোরে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে।