“মক্কা মদীনার আদলে কোরবানি ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক অনলাইন সংবাদ সম্মেলন।
আজ ৪ জুলাই ২০২০, শনিবার, সকাল ১০.০০ টায় সাদাকাহ ফাউন্ডেশন ইউ এস এ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর যৌথ উদ্যোগে “মক্কা মদীনার আদলে কোরবানি ব্যবস্থাপনা”-শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় মূল্যবান বক্তব্য উপস্থাপন করেন পবা’র যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ডাঃ লেলিন চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন- আমাদের সবার মূল লক্ষ্য হলো: ক্রমান্বয়ে পবিত্র মক্কা নগরীর আদলে কুরবানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তিনি পশু নির্বাচন, পরিবহন, কোরবানির আগ পর্যন্ত পশুটিকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা, পশু জবাইয়ের স্থানটির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন- কুরবানির পশু হবে সুস্থ, রোগ ও খূঁত মুক্ত। কৃত্রিমভাবে ঔষধ বা রাসায়নিক প্রয়োগে মোটাতাজা করা পশু অবশ্যই পরিতাজ্য। তাছাড়া পশুপালনের স্থান থেকে বাজার এবং বাজার থেকে কুরবানিদাতার নির্ধারিত জায়গায় আনা পর্যন্ত পশুকে কোনরকম কষ্ট/ক্লেশ দেয়া যাবেনা। তার পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। কোরবানির আগ পর্যন্ত পশুটিকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। পশুর মল-মুত্র নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। কুরবানি ব্যবস্থাপনাকে ক্রমশঃ পবিত্র মক্কানগরীর আদলে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে। তাই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।। 
 
পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান নির্ধারিত স্থানে কোরবানীর সুবিধাসমূহ সবার সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন- আমাদের আগে দেখতে হবে কুরবানির পশুটি সুস্থ আছে কিনা এবং স্বাস্থ্যের জন্য তা ক্ষতিকারক কিনা। নির্ধারিত স্থানে পশু চিকিৎসক থাকেন যিনি এ কাজটি সহজেই করতে পারেন। নির্ধারিত স্থানে না হলে একাজটি করা দুস্কর। এমন হলে জবাইয়ের পূর্বে পশুটিকে ভালোভাবে পরিস্কার করা সহজতর হয়। শহরে বাসা বাড়ি কিংবা রাস্তায় পরিস্কার করা দূস্কর হয়ে যায়। বাসাবাড়িতে অন্যদের অসুবিধা বা রাস্তায় করলে চলাচলের অসুবিধা হয়। তাছাড়া  এক্ষেত্রে জবাইয়ের ঝামেলা বা ঝুঁকি কম থাকে। এদিকে নির্ধারিত স্থানে কোরবানী করলে যিনি কুরবানি করছেন তা তার জন্য ব্যয় সাশ্রয়ী হয়। আবার সরকারের জন্যও কোরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাত্রাতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। তাছাড়া ডাম্পিং এর জন্য স্থান সংকুলান সুবিধা হয়।
 
অনলাইন সাাংবাদিক সম্মেলনে মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শায়েখ ইসমাঈল হোসাইন মাক্কী বলেন- প্রতি বছর দুই মিলিয়নের ও বেশি মুসলমান হজ্ব করেন এবং হজ্ব উপলক্ষে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি গবাদি পশু: যেমন ভেডা, ছাগল এবং উট জবাই করা হয় মক্কায়। ইসলামিক আইন এবং জনস্বাস্থ্যের নির্দেশিকা মেনে গবাদি পশুদের কোরবানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রায় ১৬ হাজারেরও অধিক কর্মচারী চব্বিশ ঘন্টা কাজ কওে থাকে মক্কায় স্থাপিত সরকারী ¯¬টারিং হাউজে। তিনি বলেন- মক্কায় যেভাবে ¯¬টারিং হাউজের মাধ্যমে কম খরচে অল্প সময়ে সুন্দর ও সুষ্ঠু কুরবানী ব্যাবস্থাপনা হয় তা আমাদের দেশেও অনুসরণ করা সম্ভব। যথাসময়ে সবাই ¯¬ীপের মাধ্যমে কুরবানীর পশু ক্রয় নিশ্চিত করে। এরপর সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পশু কেনা, কুরবানি করা পশু জবাই ও বন্টন সুন্দরভাবে পরিচালনা করে। কেউ যদি নিজের কুরবানী নিজে দেখতে চায় ও গোশত নিতে চায় তাহলে সে সুযোগ ও রয়েছে। সর্বোপরি মক্কা মদিনার আদলে আমাদের দেশে যদি কুরবানি করা যায় তাহলে ভোক্তা ও সরকার সবার জন্যই এটি উপকারী ও কল্যাণকর হবে বলে আমরা মনে করি।   
 
উক্ত অনলাইন সাাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা বলেন যে, মক্কা মদিনার আদলে কুরবানি ব্যবস্থাপনা না থাকায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। পশু জবাইয়ের স্থানটির পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। গোশত কাটার চাটাইসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু ময়লামুক্ত থাকছে না। তাছাড়া পশু জবাইয়ের জন্য এলাকাভিত্তিক 'জবাইখানা' নির্ধারণ করা জরুরি। প্রথমদিকে অস্থায়ী জবাইখানা পরে স্থায়ী জবাইখানা নির্মাণ করতে হবে। বর্জ্যকে সম্পদে পরিনত করার জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ অবশ্যই থাকতে হবে। কুরবানি গোশত প্রস্তুতকরণের সাথে সংযুক্ত সবাই যেন সংক্রামক ব্যাধিমুক্ত থাকে, এটি নিশ্চিত করতে হবে। গোশত পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত তৈজসপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবানুমুক্ত হতে হবে। এ ছাড়া ও গোশত বিতরণের সময় স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। বাসাবাড়িতে অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে এটি করালে অনভিপ্রেত ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি থাকে। আবার নির্ধারিত স্থানে কোরবানী করলে বর্জ্য সম্পদে রূপান্তর করা যায় সহজেই। বর্জ্য বলত অবশেষে তেমন কিছু থাকে না। মাংস স্বাস্থ্যকর ভাবে প্রস্তুত করা যায়। এতে বন্টন সুবিধা ও আছে। বর্তমানে আমরা বাসা বাড়িতে পশু জবাই করে যেভাবে বিলি বন্টন করি তা কোনক্রমেই স্বাস্থ্য সম্মত হয় না। গরীব মানুষেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে অল্প অল্প করে বিভিন্ন বাড়ি থেকে যেভাবে নেয় তা স্বাস্থ্যকর হয়না। এখান থেকে বন্টন হলে বন্টনেও সুবিধা হয়। তাই, বক্তাগনের মতে অবিলম্বে সরকারী ব্যবস্থাপনায় মক্কা মদিনার আদলে কুরবানি ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়েছে। 
 
মুহসিন মাশকুরের সঞ্চালনায় অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পরিচালক, সাদাকাহ ফাউন্ডেশন, ইউএসএ, ড. ইকবাল হোসাইন, প্রফেসর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, শহীদুল ইসলাম কবীর, এফ এম ৭৮৬, অরণ্য জাহান, ক্যাপিটাল এফ এম, তানভীর, প্রজন্ম একাত্তর, জাহিদ হাসান মিলু, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রমুখ।
 
সুপারিশমালা
 
১. দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কুরবানি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্তকরণ প্রয়োজন।
২. দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পৌর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা চুড়ান্তকরণ প্রয়োজন।
৩. কুরবানি গোশত প্রস্তুতকরণের সাথে সংযুক্ত সবাই যেন সংক্রামক ব্যাধিমুক্ত থাকে, এটি নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মক্কা মদিনার আদলে কুরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জন সচেতনতা ও জনদায়িত্ববোধের সৃষ্টি করা। 
৫. মক্কা মদিনার আদলে কুরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জন সচেতনতা ও জনদায়িত্ববোধের সৃষ্টি করার জন্য সরকারী উদ্যোগে আলেম-ওলামাদেরকে এই কাজে সংযুক্ত করা।
৬. সমাজের প্রত্যেককে ধর্মীয় মূল্যবোধের রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন হতে হবে।  
৭. পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বর্জ্য ও পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সর্ম্পকিত আইন ও বিধিমালার কার্যকর প্রয়োগ।