নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করনে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান
 
প্রতিনিয়ত নগর জীবনে মানষকে  কোন না কোন কাজে রাস্তায় বের হতে হয়। ঘর থেকে বের হলেই প্রত্যেক মানুষকে এখন সড়ক দুর্ঘটনা নামক আতংক নিয়েই চলাচল করতে হয়। ইদানীং এ ঝুঁকি আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান, অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৬৪ জন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হচ্ছেন পরিবার। কেউবা ফুটফুটে শিশুসন্তান হারিয়ে হন নির্বাক। আর দেশ হারায় তার মেধাবী নাগরিককে। সড়ক দুর্ঘটনায় শুধু পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, রাষ্ট্রও আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 
এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ, চালক ও যাত্রী সচেতনতা বৃদ্ধি, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ, মহানগরী ও সিটি বাস সার্ভিসের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন, পথচারী ও অযান্ত্রিক যানে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি,  প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো বন্ধ, নতুন সড়ক নির্মাণে নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া, সার্ভিস লেন নির্মাণ, গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিড লার্নার সরবরাহ, রেল ও নৌপথকে কেন্দ্র করে সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সকল বিভাগের সাথে সমন্বয় করে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আজ ২২ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২০ উপলক্ষে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত নিরপদ সড়ক আর কত দূর শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। 
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তর এর সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান এবং আইনজীবী ও নীতিবিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। সভা সঞ্চালনা করেন গ্রিন ফোর্স এর সমন্বয়ক ও পবা’র সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। 
সূচনা বক্তব্যে প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের পর ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। জেব্রা ক্রসিং নিশ্চিত করা, বাস স্টপেজ নির্ধারন করা এবং  বাসের ভেতরে দৃশ্যমান জায়গায় বাসের চালক ও হেলপারের তথ্য প্রদর্শন করা, ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। যার অধিকাংশরই বাস্থবায়ন নেই। 
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা। আমরা যেভাবে নিরাপদ সড়কের কথা বলছি, একই ভাবে যদি নিরাপদ যাতায়াতের কথা বলি তাহলে সুফল বেশি আসবে। নিরাপদ সড়কের সাথে যাতায়াত কথাটি যুক্ত করা প্রয়োজন। তাহলে অন্যান্য বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি ঢাক মহানগর ও মহানগরের বাইরের জন্য পৃথক নীতিমালা প্রয়োজন। যার ফলে বাস মালিক ও শ্রমিকরা নিরপদ যাতয়াত নিশ্চিতের প্রতি উৎসাহিত হবে। পাশপাশি গাড়ি চালকদের ট্রিপ এর পরিবর্তে মাসিক বেতনে নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।রেল ও নৌপথকে প্রাধান্য দিলে যাতায়াতের উপর থেকে চাপ কমিয়ে এনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করনে আমাদের দ্রুত সমাধান খোঁজা আমাদের বড় ভুল। এজন্য গবেষণা, তথ্য বিশ্লেষণ এর প্রয়োজন রয়েছে। বিআরটিএ যারা এই নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করনে কাজ করছেন তাদের সংখ্যা হচ্ছে মাত্র ৩ জন। এই ৩ জন লোক দিয়ে সারা দেশে নিরাপদ সড়ক তৈরি করা সম্ভব নয়। বরং অন্যান্য যে সকল বিভাগ আছে তাদেরকে একত্রিত করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরিবহন শ্রমিকদের যোগ্যতা নির্ধারনে প্রচলিত কারিকুলাম দিয়ে বিচেনা না করে ভিন্ন কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। চালকেরদের ট্রেনিং এর জন্য পুলিশ, বিডিয়ার এবং সেনাবাহিনীর ট্রেনিং সেন্টারগুলোকে কাজে লাগানো। 
 
আবু নাসের খান বলেন, স্বাধীনতা পর আমাদের যোগযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু দেশে যে হারে যানবাহনের সংখ্যা এবং নাগরিকদের চলাচল বেড়েছে সে অনুপাতে সড়ক পথের নিরাপত্তার বিষয়টি বরাবর উপেক্ষিত রয়ে গেছে। ২০৪১ সালে আমরা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে যাবো, জনসংখ্যা এবং যাতয়াত আমাদের বেড়ে যাবে। এজন্যই এখনই সময় আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে নিরাপদ করা। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রভাব আমরা সড়কে দেখছি না। চালকদের মাঝে নিজের ও অন্যের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। আগামীতে আমাদের যে ১০০টি ইকোনোমি জোন হবে সে জায়গাগুলোতে কোন পথে কি পরিমাণ যাত্রী ও পন্য পরিবহন করবো তার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের রেল কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।