মাঠ-পার্ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকলের ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করার আহ্বাণ
পার্ক, খেলার মাঠ এবং উন্মুক্ত গণপরিসর নগরজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্ক ও খেলার মাঠ নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। পাশপাশি উন্মুক্ত এ পরিসরগুলো নগরবাসীকে পরিবেশগত সুবিধা, সামাজিক ও ব্যক্তিগত কল্যাণ এবং সক্রিয় বিনোদনের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু ঢাকা শহরে পর্যান্ত খেলার মাঠ ও পার্ক নেই। দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৫৭টি পার্ক ও খেলার মাঠ আধুনিকায়নের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ সকল উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপে অন্তর্ভুক্তিতা নিশ্চিত করা, মাঠ ও পার্কের আসবাব বা সুবিধাদি স্থাপন করার ক্ষেত্রে সার্বজনীন নকশা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে মাঠ ও পার্কের উপযোগীতা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মাঠ ও পার্কগুলো সার্বজনীন রূপ পাবে।
আজ ১০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, ২০২০ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ঢাকা মহানগরীর খেলার মাঠ-পার্ক উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য ঢাকা’র উভয় সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৪টি পার্ক যথা: বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক, উত্তরা ৭নং সেক্টর পার্ক, গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আলাউদ্দিন পার্কের উন্নয়ন পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তুলে ধরেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান। আলোচক হিসেবে ছিলেন পবা’র সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী মো আব্দুস সোবহান, স্থপতি শাহীন আজিজ, এবং আইডাব্লিউবি এর পলিসি অফিসার মাসুম বিল্লাহ ভূইয়া প্রমুখ।
আবু নাসের খান বলেন, দিনে দিনে শহরের পার্ক বা উদ্যানে বিনোদন বা সামাজিক কার্যক্রমগুলোর পরিধি ক্রমশই সংকুচিত হচ্ছে। অথচ এই পার্ক বা উদ্যান নগর জীবনে কিছুটা হলেও প্রাণের সঞ্চার করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একটি শহরে প্রতি একজন নাগরিকের জন্য ৯ বর্গমিটার সবুজ পরিসর প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা শহরে প্রতি একজন নাগরিকের জন্য মাত্র ০.০৫২ বর্গমিটার সবুজ পরিসর রয়েছে। গণপরিসর বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমাদের জোড় দিতে হবে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন যে সকল মাঠ ও পার্কে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত করছে তার উপযোগীা নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পর যদি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব না হয়, সাধারন মানুষ যদি টয়লেট ব্যবহার না করতে পারে কিংবা উন্নয়ন উপকরন যদি ব্যবহার না করা যায় তাহলে এই উন্নয়ন ফলপ্রসূ উন্নয়ন নয়।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, জনসংখ্যার হিসাবে ঢাকা শহরে ১ হাজার ৩০০ খেলার মাঠ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২৩৫টি। যে সকল খেলার মাঠ ও পার্ক আছে সেগুলো প্রত্যেক বয়সী নাগরিকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রত্যেকটা বয়সের চাহিদাগুলোকে আমলে রেখে নকশা প্রণয়ন করা, মাঠ ও পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাঁধা নিষেধ প্রয়োগ না করা এবং সামাজিক বিভক্তি সৃষ্টি না করা। পাশাপাশি পাড়া বা মহল্লায় প্লেয়িং লট, মিনি পার্ক, নেইবারহুড পার্ক ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের গণপরিসর গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ঢাকা শহরে মাঠ ও পার্ক দেখাশুনা করার জন্য প্রায় ১১টি সংস্থা রয়েছে এদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা। উন্নয়ন কার্যক্রমের পরে মাঠের সার্বজনীনতা যদি কমেই যায়, তাহেল সে ধরনের উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। নদী দখলকারীদের যেভাবে সরকার উচ্ছেদ করছে ঠিক তেমনি মাঠ ও পার্কগুলোকে দখলমুক্ত করতে হবে। মাঠ ও পার্কের সকল উপকরণ সার্বক্ষণিক ব্যবহার উপযোগী রাখা প্রয়োজন। পুরাতন জেলখানাকে পরিকল্পিতভাবে গণপরিসরে রূপ দেয়া প্রয়োজন।
স্থপতি শাহীন আজিজ বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশনের খেলার মাঠ ও পার্ক উন্নয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই মাঠ ও পার্ক উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকল শ্রেণী ও বয়সের মানুষকে গুরুত্ব প্রদান করে হলে গণপরিসরগুলো সার্বজনীন রূপ নেবে।
মাসুম বিল্লাহ ভূইয়া বলেন, মাঠ ও পার্ক উন্নয়নে ভিন্ন ভিন্ন আয়ের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে, ব্যবহারের উপযোগী করা গেলে, খেলার মাঠ ও পার্কগুলো কার্যকর হবে। উন্নয়ন কর্মকান্ডে কেউ যেন বাদ না পড়ে, তা খেয়াল রাখতে হবে। যা আর্দশ নগরের জন্য অপরিহার্য্য। যেহেতু উন্নয়ন পরিকল্পনায় পার্কে বা মাঠে আলো ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে কাজেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এগুলো বন্ধ রাখা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।