বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে

বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে সচল করার জন্য সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দাবি জানিয়েছেন মতবিনিময় সভায় বক্তারা। করোনায় নগরের নি¤œ আয়ের শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ও করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভাটি আজ পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভপতিত্বে ও সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জলের সঞ্চালনায় সকাল ১১ টায় পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আব্দুস সোবহান, কাপ এর নির্বাাহী পরিচালনক খন্দকার রেবেকা সান ইয়াত, বারসিকের সমন্বয়ক মো: জাহাঙ্গীর আলম, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা সুদিপ্তা কর্মকার, পবার সম্পাদক আতিক মোর্শেদ, পবার শাকিল রহমান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় পরিবেশ সংসদের সভাপতি আবু সাদাত মো: সায়েম, বস্তিবাসী নেত্রী কুলসুম বেগম, হোসনে আরা বেগম রাফেজা, নুরুজ্জামান, শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন শুভ, কাপের কর্মসূচী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রমূখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, করোনায় সারাবিশ^ মারাত্মাকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আর বাংলাদেশের মতন দেশে এর প্রভাব আরও ব্যাপক। বিশেষ করে এদেশের নি¤œ আয়ের মানুষদের জীবনের সংকট মারাত্মক। আর তাদের শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ সংকট। বক্তারা বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের বিশেষ প্রণদনার দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন,করোনার মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১১ মাস ধরে বন্ধ। এই সময়ে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত দেশের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ও  শিক্ষাপঞ্জি ওলটপালট গয়ে গেছে। সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও, এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে দুরশিক্ষণ ব্যবস্থা করা গেলেও বাস্তবে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই এই ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারেনি। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। বস্তির এলায় যে সব বেসরকারী এবং ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল তার অধিকাংশই করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের মধ্যেও যাদের শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। এর ফলে নগরের বস্তিতে বেড়ে যাচ্ছে স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া, বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম। এমন কি তাদের মধ্যে মানসিক বিকারগ্রস্থতাও বেড়ে যাবে। ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ। ২০২১ সালে এই ঝরে পড়ার হার অনেক বাড়বে বলেই নিশ্চিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, ঝরে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ে। বিশেষ করে শহরের বস্তিবাসী এবং চর ও হাওর অঞ্চলের শিশুরাই বেশি ঝরে পড়ে। করোনার কারণে এসব পরিবারে দারিদ্র্য আগের চেয়ে বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো রকমে তিন বেলা খেতে পারলেও পুষ্টিমান রক্ষা করতে পারছেন না। গত সপ্তাহে প্রকাশিত এডুকেশন ওয়াচের অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন ২০২১-এ ঝরে পড়ার ব্যাপারে উদ্বেগজনক মতামত পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকের ৩৮ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যেতে পারে। ২০ শতাংশ মনে করেন, ঝরে পড়ার হার বাড়বে এবং ৮.৭ শতাংশ মনে করেন, শিক্ষার্থীরা শিশুশ্রমে নিযুক্ত হতে পারে। মাধ্যমিকের ৪১.২ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন, বেশি শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতে পারে। ২৯ শতাংশ মনে করেন, ঝরে পড়ার হার বাড়বে। ৪০ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতির হার বাড়বে এবং ২৫ শতাংশ মনে করেন, ঝরে পড়ার হার বাড়বে। ৪৭ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতের হার বাড়বে, ৩৩.৩ শতাংশ মনে করেন ঝরে পড়া বাড়বে এবং ২০ শতাংশ মনে করেন, অনেকেই শিশুশ্রমে যুক্ত হতে পারে। ৬৪ শতাংশ এনজিও কর্মকর্তা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার ও ঝরে পড়া বাড়বে। (কালের কন্ঠ)
এই সার্বিক চিত্র আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সামনে একটি বড় শংকা তৈরি করেছে।  যদি বস্তিবাসীদের মধ্য থেকে ১০ ভাগ শিক্ষার্থীও এ সময়ে যদি ঝরে পড়ে তবে তার পরিমাণও হবে  প্রায় ৪ লক্ষ। আর এই সার্বিক পরিবর্তনের জন্য বস্তিবাসী শিক্ষা জীবনটাকে রক্ষা করার চেষ্টা করা জরুরি।
আমাদের সুপারিশসমূহ:
১. বস্তিতে করোনায় বন্ধ হয়ে যায় ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলো সরকারী উদ্যোগে খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে সরকারী স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা নেয়া।
২. বস্তির স্কুলগুলোতে সরকারী উদ্যোগে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং সকল বেতন ফি মওকুফ করে দেয়া।
৩. অভিভাবকদের সচেতনাতার জন্য অভিভাবক সমাবেশসহ সচেতনতামূলক কর্মসূচী হাতে নেয়া করার  ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে স্কুলে ফেরত নেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার ও প্রচারণা ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৫. বস্তিবাসী শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলোকে বিশেষ সহযোগিতার আওতায় নিয়ে আসা। করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করা।
৬. বস্তিবাসী মানুষদের কাজে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে তাদের বিশেষ জায়গা দেয়ার ব্যবস্থা করা।