পুরানো ঢাকা কেমিকেল মুক্ত করতে কেমিকেল কারখানা, গুদাম ও দোকান অপসারণ সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন ও দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ চাই
  
পুরানো ঢাকা কেমিকেল মুক্ত করতে
কেমিকেল কারখানা, গুদাম ও দোকান অপসারণ সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন
ও দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ চাই
বিগত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ চকবাজারের চুড়িহাট্রায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সেই দূঘর্টনার আগুন কেড়ে নিয়েছিল ৭১টি তরতাজা প্রাণ। পবার প্রতিনিধিদল ২০১৯ সালের ২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারী সরেজমিনে চুড়িহাট্রার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও ২৪ ফেব্রুয়ারী একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দূর্ঘটনার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরানো ঢাকা থেকে কেমিকেল গোডাউন, কারখানা ও দোকান সরানোর জন্য নির্দেশ দেন। 
 
আবাসিক এলাকা থেকে সর্বপ্রকার কেমিকেল গোডাউন কারখানা কিংবা কোন বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সরানোর সরকারী সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে আজকের এই মানববন্ধন। প্রায়ই পুরানো ঢাকায় কেমিকেল গোডাউন/ ফ্যাক্টরীতে বিভিন্নরকম দূর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকবার ভয়াবহ অগ্নিকান্ড/দূর্ঘটনায় বহু লোক আহত ও নিহত হয়। এতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেইসাথে অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়। তাছাড়া নিমতলীর মর্মান্তিক ঘটনার পর পবার কারিগরী কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) একযুগেরও বেশি সময় ধরে পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিকেল কারখানা, গুদাম ও দোকান সরানোর জন্য আন্দোলন করে আসছে। 
 
আজ ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, রবিবার, সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা), চুড়িহাট্রা অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থা, বানিপা, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সামাজিক সমাজকল্যান সংগঠন, ইসলামবাগ অনির্বাণ যুব ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা, দেবীবাস ঘাট সমাজ কল্যান সংসদসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনগুলোর এর যৌথ উদ্যোগে চুড়িহাট্রা চৌরাস্তায় “পুরানো ঢাকা কেমিকেল মুক্ত করতে কেমিকেল কারখানা, গুদাম ও দোকান অপসারণ সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন ও দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ চাই” দাবীতে মানববন্ধন বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চুড়িহাট্রা অগ্নিকান্ডে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংস্থার সভাপতি মো: নাসিরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মাসুম সৈনিক, পবার সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, বানিপার সভাপতি প্রকৌ: মো: আনোয়ার হোসেন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো: শহিদুল্লাহ, নাসফের সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, দেবীদাসঘাট সমাজ কল্যান সংসদের সভাপতি মো: মুসা, ইসলামবাগ অনির্বাণ যুব সমাজ কল্যান সংস্থা সাধারণ সম্পাদক মো: বাবুল, পুরানো ঢাকা পরিবেশ উন্নয়নের সভাপতি মো: নাজিমউদ্দিন, নগরবাসীর সভাপতি হাজী মো: আনসার আলী, সুবন্ধন সামাজিক কল্যানের সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জিএম রুস্তম খান, নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব শাকিল রেহমান, কবি মো: ইব্রাহিম হোসেন প্রমূখ। 
 
বক্তারা বলেন, পুরানো ঢাকার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহতের স্বজনেরা এখনো স্বাভাবিক হতে না পারলেও পুরানো ঢাকা এখন স্বাভাবিক। আগের মতো রাসায়নিক গোডাউন রয়েছে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে। প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি বোমা ঘর। এর আগে নিমতলীতে ২০১০ সালে অগ্নিকা-ে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। আগুনের পর এলাকা থেকে রাসায়নিকের গোডাউন সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর চুড়িহাট্টায় আগুন লাগলে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানোর তোড়জোড় দেখা যায় আবারো। এবারও ফলাফল আগের মতোই।
 
পুরানো ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন আছে। এর মধ্যে বৈধ মাত্র আড়াই হাজার। এসব দুর্ঘটনা ঘটার পর এসব রাসায়নিক গোডাউন  সরানোর কথা আলোচনা হলেও বাস্তবে এর গ্রতিফলন নেই। বাড়ির মালিকরা শুধু মাত্র বেশি ভাড়ার লোভে এসব গোডাউন ভাড়া দিয়ে থাকেন। ফলে ক’দিন পর পর ঘটে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারায় নিরীহ মানুষগুলো। ভয়াবহ ওই অগ্নিকা-ের পর বুয়েট, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন পৃথকভাবে তদন্ত করে বিভিন্ন সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন দেয়। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই পুরানো ঢাকার আগুনের ঝুঁকি মোকাবিলায় রাসায়নিকের গোডাউন ও কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করে। কিন্তু ঘটনার দুই বছর অতিবাহিত হলেও সুপারিশ বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। 
 
বক্তারা আরও বলেন, এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী অবৈধ কেমিকেল কারখানার মালিকেরা এখনো আইনের আওতায় আসেনি। সরেনি কেমিকেল গোডাউন ও প্লাস্টিকের কারখানাগুলোও। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের আশ^াস দেওয়া সত্ত্বেও তা এখনও পূরণ করা হয়নি। 
 
শহরে যে কোন ব্যবসার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লাইন্সেস নিতে হয়। রাসায়নিক আমদানী ও মজুতের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। আর কারখানা স্থাপনে ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়া কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে জনবল ও বাজেটে কোন ঘাটতি রয়েছে কি না, সংস্থাগুলোর বিগত দিনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অসহযোগিতা করেছে কি না অথবা ব্যবসায়ীরা সরকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করছে কি না, তাও খুঁজে দেখা জরুরি।